ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ইইউ, ইরান ও জাতিসংঘের

পরমাণু চুক্তি মানবে পশ্চিমারা

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১০ মে ২০১৮

পরমাণু চুক্তি মানবে পশ্চিমারা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে তারা এই চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। ২০১৫ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব এ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের ওই চুক্তিটি ইরান ও ছয়টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল। চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ রাশিয়া ও চীন তাদের জোর সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।-এএফপি, বিবিসি ও ইন্ডেপেন্ডেন্ট। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি বলেছে তারা অবশিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ করবে এবং তাদের কর্মকা- বাধাগ্রস্ত না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দেশ তিনটি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের সরকার চুক্তিটি বহাল রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তা নিশ্চিত করার জন্য বাকি সকল পক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাবে। ২০১৫ সালে চুক্তিটি হওয়ার পর ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ক্রমাম্বয়ে শিথিল করা হয়েছিল। ট্রাম্প জানুয়ারি মাসেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন যে, তিনি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরবর্তী আদেশে সই করবেন না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন। তার মতে, এক দশকের জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। তেহরান যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে না পারে তার কোন নিশ্চয়তা এ চুক্তিতে নেই। ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে না আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ছে। ইরান বলেছে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই চুক্তিটি ধরে রাখতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মঙ্গলবার বলেন, ‘আগামী সপ্তাহগুলোতে ইউরোপ, চীন ও রাশিয়া সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। অন্য পক্ষগুলোর সহযোগিতায়ও যদি এর লক্ষ্যগুলো অর্জিত হয় তবে চুক্তিটি টিকে যাবে।’ ইরান বলেছে, এভাবে চুক্তি থেকে সরে আসা আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন এবং তা অগ্রহণযোগ্য। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইসরাইল। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ট্রাম্পের ঘোষণাকে সৌদি আরব স্বাগত জানায় এবং তার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতিও সমর্থন দিচ্ছে।’ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, পরমাণু সমঝোতার পর ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে তেহরান মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার জন্য অর্থ খরচ করছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর ইউরোপের পক্ষ থেকে চুক্তি বহাল রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের পর আমরা ইরানকে সংযম প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করছি। চুক্তির আওতায় ইরানের দিক থেকে যেসব বাধ্যবাধকতা আছে সেগুলো তাদের মেনে চলতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ‘ইরান যতক্ষণ চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে ইইউও ততক্ষণ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সমর্থন দিয়ে যাবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন ‘ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিটি ভালভাবেই কাজ করার পাশাপাশি মার্কিন স্বার্থও রক্ষা করছিল।’ ফেসবুকে তিনি মন্তব্য করেন, ‘জেসিপিওএ থেকে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মতউপেক্ষা করল।’ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউসের এ সিদ্ধান্তে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। চুক্তি মেনে চলার জন্য আমি সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ’। এর আগে মঙ্গলবার ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় করা চুক্তিকে ‘একপেশে হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, একজন মার্কিনী হিসেবে এটি তার জন্য অবমাননাকর। অনেক ইউরোপীয় মিত্র ও সামরিক উপদেষ্টাকে উপেক্ষা করে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেন।
×