ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডির প্রতিবেদন

প্রকৃত আয় কমে গেছে, নারীর কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১০ মে ২০১৮

প্রকৃত আয় কমে গেছে, নারীর কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের কর্মজীবী মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজার ১৫২ টাকা মজুরি পেতেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসে তা কমে ১৩ হাজার ২৫৮ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ আয় কমেছে গড়ে ৯শ’ টাকা বা আড়াই শতাংশের মতো। অন্যদিকে পুরুষদের চেয়ে নারী কর্মজীবীদের প্রকৃত আয় বেশি কমেছে। ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী নারী প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৭১২ টাকা মজুরি পেতেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসে তা কমে ১২ হাজার ২৫৪ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ আয় কমেছে গড়ে ১ হাজার ৪শ’ ৫৮ টাকা বা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে, পুরুষেরা চার বছর আগে পেতেন ১৪ হাজার ৩০৯ টাকা। এখন ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৫৮৩ টাকা মজুরি পান। গত তিন চার বছরে শিল্পখাতে কমেছে সাড়ে ৮ লাখ নারীর কর্মসংস্থান। ভাবা হয় নারীরা পুরুষের সমান শিল্পখাতে অবদান রাখতে পারবে না। এজন্য সঙ্কুচিত হচ্ছে নারীর কর্মসংস্থান। বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে প্রোমোটিং ফিমেল এমপ্লয়মেন্ট ইন বাংলাদেশ ফর রিয়েলাইজিং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্স’ বিষয়ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে ওই গবেষণাপত্রের ওপর সংলাপ অনুষ্ঠান হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকাইল হেমিনিতি উইন্থার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বিবিএস পরিচালক (ইন্ডাস্ট্রি এ্যান্ড লেবার উইং) কবির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, নারীদের ‘আনপেইড’ কাজের সংখ্যা বেশি। এগুলো গণনা করা হলে জিডিপিতে নারীদের অবদান ৭৭ থেকে ৮৭ শতাংশ হতে পারত। মূলত ২০০২ সাল থেকে ধীরে ধীরে দেশে নারীর কর্মসংস্থান কমতে শুরু করে। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ সারাবিশ্বে গড়ে ৫০ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষরা চার বছর আগে মজুরি পেতেন ১৪ হাজার ৩০৯ টাকা। এখন ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৫৮৩ টাকা মজুরি পান। ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী নারী প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৭১২ টাকা মজুরি পেতেন। এখন পান ১২ হাজার ২৫৪ টাকা। মজুরি কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০২ সাল থেকে ধীরে ধীরে দেশে নারীর কর্মসংস্থান কমতে শুরু করে। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ এর বিপরীতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া নারীদের ‘আনপেইড’ কাজের সংখ্যা বেশি। এগুলো গণনা করা হলে জিডিপিতে নারীদের অবদান ৭৭ থেকে ৮৭ শতাংশ হতে পারত। সিপিডির মতে, কর্মক্ষম বয়সের নারীদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ কোন মজুরির বিনিময়ে কাজে সম্পৃক্ত নয়, আবার পড়াশোনা কিংবা প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না তারা। এর ফলে শ্রমবাজারে বিপুলসংখ্যক নারী অংশগ্রহণ নেই। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রয়োজন। সিপিডি আরও বলেছে, গত চার বছরে শিল্প খাতে সাড়ে আট লাখ নারীর কর্মসংস্থান কমেছে। মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সদ্ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই দেশের মহিলা শ্রম শক্তি কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানে মহিলাদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শ্রমবাজারে আছে। দেশের ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী শিক্ষা, চাকরি বা কোন ধরনের প্রশিক্ষণে নেই। এরকম একটা অবস্থান থেকে আমাদের উত্তরণ করতে হলে শিক্ষাই বড় ভূমিকা রাখবে। মুস্তাফিজুর বলেন, এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ মহিলাই অপ্রাতিষ্ঠানিক জায়গাতে কাজ করছেন। সেখানে তাদের কর্মপরিবেশ ও আয় অনেক কম। নারীদের শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টিই নয়, ভাল আয়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন সিপিডির সাবেক নির্বাহী পরিচালক। কর্মক্ষেত্রে নারীরা সন্তান, পরিবহনসহ নানা বিষয় নিয়ে যে সব সমস্যায় পড়েন, তা দূর করার ওপরও তিনি জোর দেন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে নারীদের জন্য বেশি বেশি কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে আমাদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে। খাবার রান্না ও গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি পায় না নারী। এসব কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তি দরকার। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সামাজিক অগ্রায়নের ক্ষেত্রে যে তথ্য এসেছে এখনও শ্রমিকদের গড় বেতন ৭ হাজার ২০০ এর মতো। অর্থাৎ ৮ হাজার টাকার নিচে। তবে নারী শ্রমিক ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে গড় আয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য কমছে। নারীরা এগোচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিক নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এবং নারী শ্রমিকরা পিছিয়ে আছে। ট্রেড ইউনিয়নের উপস্থিতি কম। কল্যাণ সংঘ তুলনামূলকভাবে ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। তবে ট্রেড ইউনিয়নের পরিস্থিতি দুর্বল।
×