ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১০ মে ২০১৮

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

জাতি হিসেবে বাঙালীর জন্য অত্যন্ত আনন্দ, সুখ আর গর্বের দিন আজ ১০ মে। এক অবর্ণনীয় গৌরব অর্জনের পথে বাংলাদেশ। আজ হতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় যুক্ত হলো। আজ এক অন্যরকম দিন। অন্যরকম আবেগ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশের দিন। আগামী পনেরো বছরের জন্য মহাকাশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে রওনা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালের লঞ্চিং প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশের পথে উড়াল দিচ্ছে। আকাশে ভাসবে এখন বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহটি। যা ছিল অভাবনীয় এ দেশবাসীর জন্য, তাই আজ বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। বার বার উৎক্ষেপণের তারিখ পেছানো নিয়েই অনেকে ছিলেন সন্দিহান। তবে তা উৎক্ষেপণের ব্যাপারটা আসলে পৃথিবীর কক্ষপথ, আবহাওয়াসহ আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। আজ উৎক্ষেপণের পর কক্ষপথে অবস্থান নিতে এবং ব্যান্ডউইথ সরবরাহে সক্রিয় হতে সময় লাগবে আরও প্রায় তিন সপ্তাহ। এটি একটি ভূস্থির উপগ্রহ বা জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূউপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মহাকাশ জয়ের সূচনা করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে কক্ষপথে স্থাপিত হতে হচ্ছে এই উপগ্রহ। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়েছে এটি। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করেন। এর জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের প্রস্তাব নাকচের মতোই মারাত্মক ওই পশ্চাদমুখী সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এ কারণে বাংলাদেশ মহাকাশে ‘অরবিটাল প্লট’ হারিয়েছে। তাই এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশকে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানির কাছ থেকে ২১৯ কোটি টাকার ১৫ বছরের জন্য কক্ষপথ বা ‘অরবিটাল প্লট’ ক্রয় করতে হয়েছে। উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রে সম্পন্ন হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। এই উপগ্রহে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। যার কুড়িটি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। বাকি কুড়িটি অন্যান্য দেশকে ভাড়া দেয়া হবে। দেশের ৩৭টি স্যাটেলাইাট টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে বছরে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার আয় হবে। এতে বর্তমানে বিদেশী উপগ্রহ ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় তা সাশ্রয় হবে। তাছাড়া উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওড় এবং পাহাড়ী অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে। একই সঙ্গে উন্নত-সমৃদ্ধ প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ত্বরান্বিত ও টেকসই হবে। আগামী সাত/আট বছরের মধ্যে বিনিয়োগের টাকা উঠে আসবে। পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ গঠন করা হয়েছে, এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করার জন্য। শান্তিকালীন সময়ে নেভিগেশন, জিপিএস, কমিউনিকেশন, যোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, স্পেস রিসার্চ, আবহওয়ার পূর্বাভাসসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি, বিপুল পরিমাণে অর্থ সাশ্রয় হবে। আপদকালীন সময়েও নানা কাজে ব্যবহৃত হবে। এই উপগ্রহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশ থেকে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান এবং আফ্রিকার কিছু দেশ পর্যন্ত ‘কভারেজ’ করতে পারবে। তবে পুরো বিশ্বকে আওতায় আনতে অন্তত তিনটি স্যাটেলাইট দরকার। দেশীয় ব্যবহারের পরও সর্বমোট ক্ষমতার প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ফাঁকা থাকবে, যা দেশে কিংবা বিদেশে বিক্রি করা যাবে। এটিকে লাভজনক করতে হলে এখনই পরিকল্পনা নেয়া সঙ্গত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট, ব্যাংকিং সেবা টেলিমেডিসিন সেবা ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের ক্ষেত্রে একে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা পূর্বেই প্রণয়ন করা উচিত। এর সেবার মানও হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ত্রুটিপূর্ণ সেবা হলে দেশের অন্যতম ব্যয়বহুল এই খাতটি কখনও আলোর মুখ দেখবে না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং এটিকে লাভের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে নিলেই হবে একটি লাভজনক ও সফল প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর যাত্রা এবং ব্যবস্থাপনা হোক শুভÑ সেই কামনা দেশবাসীর।
×