ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চতুর্থ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী শুরু

৯৮ শিল্পীর ১১৭টি কাজ সমকালীন চর্চায় ভবিষ্যতের রূপরেখা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১০ মে ২০১৮

৯৮ শিল্পীর ১১৭টি কাজ সমকালীন চর্চায় ভবিষ্যতের রূপরেখা

মোরসালিন মিজান ॥ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় এখন কেউ গেলে, নিশ্চিত করেই বলা যায়, অভিভূত হবেন। বিশেষভাবে মুগ্ধ হবেন। কারণ বর্তমানে এখানে চলছে চতুর্থ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী। হ্যাঁ, দেশে ভাস্কর্য নিয়ে এটি সবচেয়ে বড় আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা অংশ নেয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রতিযোগিতায় টিকে তার পর প্রদর্শনীতে নিজের কাজ দেখানোর সুযোগ পান। এবারও তাই হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ভাস্কর্য দেখে, মান বিচার করে শতাধিক ভাস্কর্য চূড়ান্ত করেছেন বিচারকরা। একাধিক গ্যালারিতে সেগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ভাস্কররা। ঘুরে দেখতে দেখতে বাংলাদেশের সমকালীন ভাস্কর্য চর্চা, সাম্প্রতিক প্রবণতা ও ভবিষ্যতের রূপরেখা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। বুধবার বিকেলে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে দারুণ মুখর হয়ে উঠেছিল জাতীয় চিত্রশালা প্লাজা। এবারের প্রদর্শনীতে সারাদেশ থেকে ২১ বছর বা তদুর্ধ বয়সী ১৮৭ জন শিল্পীর মোট ৩৮২টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য জমা পড়ে। নির্বাচকম-লী তা থেকে বাছাই করে ৯৮ জন শিল্পীর মোট ১১৭টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করেন। এত এত ভাল কাজ থেকে পুরস্কারের জন্য মাত্র পাঁচটি নির্বাচন করা মুশকিলের ছিল বৈকি। বিচারকম-লী অনেক মাথা খাটিয়ে এই গুরুকর্ম সম্পন্ন করেন। ‘আমার বিশ্বাসের অন্তরালে’ শিরোনামে চমৎকার ভাস্কর্য গড়েছেন খোকন চন্দ্র সরকার। সিরামিক মাধ্যমে গড়া ভাস্কর্যটির জন্য জাতীয় ভাস্কর্য পুরস্কার ২০১৮ লাভ করেছেন তিনি। প্রদর্শনীতে ‘সংকট’ তুলে ধরেছেন পলাশ সাহা। কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ দেখিয়েছেন ফ্রেগমেন্টেড ইউনিটি। অলোক কুমার সরকার সিমেন্ট মাধ্যমে গড়েছেন সম্পর্কে। শিমুল দত্তের ভাস্কর্যের শিরোনামÑ চাপ সামলাও। নিজ নিজ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এরা প্রত্যেকেই লাভ করেছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। তবে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরী যে, প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজ নির্বাচিত। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। সবগুলো কাজ খুঁটিয়ে দেখার মতো। এ ছাড়া ১১ জন আমন্ত্রিত শিল্পী ও প্রয়াত চার খ্যাতিমান ভাস্করের কাজ উপস্থাপিত হয়েছে প্রদর্শনীতে। এ সব কাজে বাংলাদেশে ভাস্কর্য শিল্পের নাতিদীর্ঘ জার্নি সম্পর্কে জানা যায়। সব মিলিয়ে উপভোগ্য একটি প্রদর্শনী। মাসব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, খ্যাতিমান ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, ভাস্কর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম। এই মাধ্যম ইতিহাস ও সভ্যতাকে সযতেœ ধারণ করে। সারা পৃথিবীতে প্রবলভাবে উপস্থিত ভাস্কর্য। প্রাচীন মিসর থেকে গ্রীস, ইরাকÑ সবখানেই ভাস্কর্যের চর্চা দেখতে পাই আমরা। কাঠ খোদাই করে, পাথর কেটে, লোহা গলিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কাজ ভাস্করের মেধা এবং শ্রমের ফসল। অন্য মাধ্যমের শিল্পকর্ম যত সহজে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এ মাধ্যমের বেলায় অতো সহজে তা হয় না। জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আলোচনায় এসে মন্ত্রী বলেন, আয়োজনটি দীর্ঘকাল বন্ধ ছিল। ৩১ বছর পর আমরা সেটি আবারও শুরু করি। ক্রমশ ভাল হচ্ছে প্রদর্শনী। কাজের সংখ্যা ও মানের মধ্যে সুন্দর একটি সমন্বয় ঘটেছে এবার। নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দ্রুতই শিল্পকলা একাডেমিতে একটি ভাস্কর্য পার্ক নির্মাণ করা হবে। এটি হবে প্রাথমিক শুরু। এছাড়াও অনেক আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাস্কর্য পার্ক নির্মাণের যে পরিকল্পনা হয়েছিল, সেটিও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানও প্রদর্শনীর প্রশংসা করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, গত তিন বারের চেয়ে এবারের কাজ মান ভাল। প্রচ্ছন্ন সুন্দর। ডাইভার্সিটি আছে। বাংলাদেশ যে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রদর্শনীটি তার উদাহরণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী বলেই অনুষ্ঠানে বার বার চলে আসে মহাতারকা নভেরার নাম। বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্য শিল্পের পথিকৃৎ শিল্পীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন একাধিক বক্তা। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, নভেরার কয়েকটি চিত্রকর্ম ফ্রান্স থেকে দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ফ্রান্স যাচ্ছেন তিনি। জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী চলবে আগামী ৭ জুন পর্যন্ত।
×