ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ অনুমোদন

এবার ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার এডিপি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১০ মে ২০১৮

এবার ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার এডিপি

আনোয়ার রোজেন ॥ শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতির ভিত। সক্ষমতা বাড়ছে সরকারের। সেই সঙ্গে বাড়ছে সরকারী বিনিয়োগও। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যভাবে বড় হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল মাত্র ৫০১ কোটি টাকা, যার শতকরা ৭৫ ভাগই ছিল বৈদেশিক সাহায্য। শতকরা হিসাবের এই অঙ্ক পাল্টেছে ৪৬ বছরে। আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেই এডিপির প্রস্তাবিত আকার দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা, যার শতকরা ৬৩ শতাংশ পাওয়া যাবে দেশীয় উৎস তথা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) আজকের সভায় প্রস্তাবিত এডিপির অনুমোদন দেয়া হবে। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। আগামী এডিপিতে প্রাধান্য পাচ্ছে স্থানীয় সরকার, বিদ্যুত ও সড়ক খাত। প্রস্তাবিত এডিপিতে মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি (৩৭ শতাংশ) যাচ্ছে এই তিন খাতে। এনইসি চেয়ারপার্সন হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ আরও বাড়তে পারে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৪৬ বছরের ইতিহাসে গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে ভাল অবস্থানে পৌঁছেছে। এ সময়ে এডিপি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের হারও ছিল সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গত ১০ অর্থবছরে এডিপির আকার বেড়েছে ছয় গুণেরও বেশি, যা আগের যে কোন ১০ বছরের তুলনায় বেশি। এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হারও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও গত সাত বছরে এই হার ৮৯ থেকে ৯৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এটিও আগের যে কোন ১০ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে বাজেট বৃদ্ধির হার, বৈদেশিক প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব এডিপির ক্ষেত্রেও পড়েছে। তবে দ্রুত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ‘ডাবল ডিজিটে’ (১০) নিয়ে যেতে এডিপির আকার আরও বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে এডিপির শতভাগ যৌক্তিক বাস্তবায়ন ও গুণগত মান নিশ্চিত করাও এক্ষেত্রে জরুরী বলে মনে করছেন তারা। ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সাল- এই ২৮ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারই ক্ষমতায় ছিল। মাঝখানে পালাবদলের সূত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কয়েক বছর ক্ষমতায় ছিল। রাজনৈতিক দলের সরকার আমলে এডিপির আকার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এডিপির আকার বেশি বেড়েছে। এই সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাস্তবায়নাধীন এডিপি ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকায়। এই হিসেবে গত ১০ বছরে এডিপির আকার ছয় গুণেরও বেশি বাড়ছে। এই নয় বছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে যথাক্রমে ৯১ শতাংশ, ৯২ শতাংশ, ৯৩ শতাংশ, ৯৬ শতাংশ, ৯৫ শতাংশ, ৯১ শতাংশ, সাড়ে ৯২ শতাংশ, ৯০ শতাংশ এবং ৮৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এ পর্যন্ত এডিপির ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা (৫২ শতাংশ) ব্যয় হয়েছে। বছর শেষে এডিপির জন্য বরাদ্দ অর্থ যতটা খরচ করা যায়, সেটাই এডিপির প্রকৃত বাস্তবায়ন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন করা গেছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা (৯১ শতাংশ)। আর সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপির জন্য প্রথমবারের মতো এক লাখ টাকার বেশি ব্যয় করা গেছে। ওই অর্থবছরে এডিপিতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা (৮৯ শতাংশ)। এ হিসেবে এই সময়ে টাকার অঙ্কে এডিপি বাস্তবায়নও হয়েছে চার গুণের বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি জনকণ্ঠকে বলেন, মূল্যস্ফীতি, টাকার মূল্যমান, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় এডিপির বাস্তবায়ন চার গুণ হয়েছে- এমনটা বলার সুযোগ নেই। তবে চার গুণ না হলেও এডিপির বাস্তবায়ন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে এডিপি বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাস্তবায়নের পরিমাপ কেবল টাকার অঙ্কে করলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। সত্যিকার অর্থে কি চাওয়া হয়েছিল, আর প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কী পাওয়া গেল সেটি বিবেচনায় আনা উচিত। এজন্য বিভিন্ন প্রান্তিকে এডিপির যৌক্তিক বাস্তবায়ন ও কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
×