ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বজ্রপাতে আরও ২১ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১০ মে ২০১৮

বজ্রপাতে আরও ২১ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। বুধবার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ২০ জন। এর মধ্যে হবিগঞ্জে কৃষকসহ ছয় জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া রাজশাহীর তানোরে দুই কৃষক, মানিকগঞ্জে স্কুল ছাত্রসহ দুজন, নীলফামারীতে মহিলাসহ দুজন, কিশোরগঞ্জে যুবকসহ দুজন, সুনামগঞ্জে ভটভটি চালকসহ দুজন, চাঁদপুরে এক স্কুলছাত্র, গাইবান্ধায় এক কৃষক, সিলেটে যুবক, জামালপুরে এক কৃষক ও নারায়ণগঞ্জে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকা ও গফরগাঁওয়ে ১৫ ছাত্রছাত্রী বজ্রপাতে আহত হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের। বুধবার মুহুর্মুহু বজ্রপাতে বানিয়াচঙ্গ, নবীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুরে অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। লাখাইয়ে তেঘরিয়া গ্রামের শহীদ আলীর পুত্র সফি মিয়া (৪৫), বানিয়াচঙ্গে শ্রমিক, সিরাজগঞ্জের দত্তকান্দি গ্রামের জয়নাল আবেদিন (৭০), নবীগঞ্জে বৈলাকিপুর করগাঁও গ্রামের বাসিন্দা হরি পালের পুত্র নারায়ণ পাল (৩৫) ও আমরাখাই বড় বাকৈর গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র আবু তালিব (২০), মাধবপুরের পিয়াইম গ্রামের রাজকুমার সরকারের পুত্র জহুর লাল সরকার (২৩) ও সুনামগঞ্জের বোয়ালিয়া দাইপুর এলাকার বসন্ত দাশের পুত্র স্বপন দাশ (৩৫) মারা যান। এছাড়া আরও অন্তত নয় জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ওই হাওড়ে সিরাজগঞ্জ থেকে বানিয়াচঙ্গে আগত দুলাল মিয়ার পুত্র কামরুল মিয়া (১৮) ও রঘু চৌধুরীপাড়ার ওয়াহেদ আলীর পুত্র মিজানুর মিয়া (২৪), দৌলতপুর গ্রামের মর্তুজ আলীর পুত্র জহির মিয়া (২২), কাগাপাশা গ্রামের গোপেশ দাশের পুত্র দিপুল দাশ (২৮) ও বিশেষপদ দাশের পুত্র বিষ্ণুপদ দাশসহ (৩৫) আরও চারজন। এদিকে ঝড় ও দমকা হাওয়ার ছোবলে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা-পাকা বসত ঘর ও গাছপালাসহ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। হবিগঞ্জে বজ্রপাতে মহিলা-শিশুসহ অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদিকে বজ্রপাতে এই হতাহতের নেপথ্য কারণ হিসেবে কৃষকসহ অনেকেই মত প্রকাশ করে বলেছেন, খোলা আকাশের নিচে জমি-ফসল এমনকি মানুষের প্রাণরক্ষায় ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত পরিকল্পিত ম্যাগনেট সিস্টেম সীমানা পিলারগুলো দুর্বৃত্তরা তুলে নেয়ায় বজ্রপাত ভূমিতে আঘাত করছে। এতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। রাজশাহী ॥ রাজশাহীর তানোরে বজ্রপাতে দুই কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। বুধবার সকাল নয়টার দিকে কামারগাঁ ও পাঁচন্দর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কামারগাঁ ইউনিয়নের বাতাসপুর গ্রামের আনছার আলী (৩০) ও পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল গ্রামের সোহাগ আলী (১৮)। এরা দুজনেই মাঠে কাজ করছিলেন। এ ঘটনায় আহত অপর দুই কৃষক শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জ ॥ দৌলতপুরে স্কুল চলাকালে বজ্রপাতে এক ছাত্র নিহত ও আট শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বজ্রপাতে মারা গেছেন এক কৃষকও। বুধবার দুপুরে দৌলতপুরের বাঁচামারা ও তালুকনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সাইফুল ইসলাম অন্তর (১২) এবং বাঁচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামের হাফেজ শেখের ছেলে কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ (৪৮)। তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান জানান, দুপুর পৌনে দুটার দিকে স্কুলের টিফিন চলাকালে শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলছিল। এসময় বজ্রপাত হলে বিভিন্ন শ্রেণীর ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সাইফুল ইসলাম অন্তরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আহতদের মধ্যে আট জনকে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামে। ইয়াকুব আলী ধানক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় তার ওপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। নীলফামারী ॥ বজ্রপাতে বুধবার সকালে জলঢাকার পৃথক স্থানে এক নারীসহ দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। একই সময় ডিমলা তিস্তা নদীর চরে দুই কৃষকের পাঁচটি গাভীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন জলঢাকা বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালনগ্রামের মৃত ইসলাম হোসেনের স্ত্রী আসমা বেগম (৫০) ও কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে কৃষক নূর আমিন (৪৫)। কিশোরগঞ্জ ॥ কিশোরগঞ্জে পৃথক বজ্রপাতে নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন নিকলী ছাতিরচরের পরিষদপাড়া গ্রামের মাঈন উদ্দিনের ছেলে শাহ জালাল (২৫) ও পাকুন্দিয়ার সুখিয়ার আশুতিয়া এলাকার সুধীর চন্দ্র বর্মণের স্ত্রী দিপালী রানী বর্মণ (৩৮)। বুধবার দুপুরে ভারি বৃষ্টিপাতের সময় আকস্মিক বজ্রপাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুনামগঞ্জ ॥ শাল্লা ও ধর্মপাশায় বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত হলে হাওড় থেকে ধান নিয়ে ট্রলি (ভটভটি) যোগে বাড়ি ফেরার পথে শাল্লায় এবং ধানকাটা অবস্থায় ধর্মপাশায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত ট্রলিচালক হলেন শাল্লা কাশিপুর গ্রামের যুক্ত মিয়ার ছেলে আলমগীর হেসেন (২৫) এবং ধর্মপাশা পূর্ব দুর্বাকান্দা গ্রামের কৃষক আবদুর রহিমের ছেলে মোঃ উজ্জল মিয়া (১৫)। খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনরা হাওড় থেকে তাদের লাশ নিয়ে আসেন। গাইবান্ধা ॥ ফুলছড়ি উদাখালী ইউনিয়নের পূর্ব ছালুয়া গ্রামে বুধবার সকালে বজ্রপাতে মহর আলী (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সকাল নয়টায় বাড়ির পাশে বিলের জমিতে মহর আলীসহ কয়েকজন কৃষক ধান কাটছিলেন। এসময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ বজ্রপাত শুরু হলে কৃষকরা পাশের জমিতে আশ্রয় নিলে মহর আলী পেছনে পড়ে। মহর আলী পেছনে থাকায় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জামালপুর ॥ দেওয়ানগঞ্জে চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মৌলভীর চরে বজ্রপাতে মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৬) নামের এক কৃষক মারা গেছেন। বুধবার সকালে বজ্রবৃষ্টির সময় এ ঘটনা ঘটে। হাবিবুর রহমান বুধবার সকালে কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই ধান কাটতে যান। সকাল নয়টার দিকে বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে তিনি ধান কাটা বাদ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে তার কাছাকাছি বজ্রপাতের প্রচ- শব্দে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নারায়ণগঞ্জ ॥ সোনারগাঁওয়ে বজ্রপাতে কুলফী আক্তার (৮) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কুলফী আক্তার তিলাবো গ্রামের শাহ কামালের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। বুধবার দুপুরে জামপুর ইউনিয়নের তিলাবো গ্রামের কুলফী আক্তার বাড়ির পাশে খেলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভালুকা ॥ ভালুকা পৌরসভার পূর্ব ভালুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে বজ্রপাতে ছয় শিক্ষার্থী ও এক মহিলা এবং ভরাডোবায় অপর এক বজ্রপাতে এক মহিলা আহত হন। আহতদেরকে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গফরগাঁও ॥ মশাখালী ইউনিয়নের আওলাজুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ শিশু শিক্ষার্থী বজ্রপাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সিলেট অফিস ॥ গোয়াইনঘাটে ঝড় ও বজ্রপাতে ১জন নিহত, ১০জন আহত ও ১০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বুধবার দুপুরে তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি কামারগাঁও গ্রামে বজ্রপাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত নুরুল হক (৩০) কোম্পানীগঞ্জের মোড়ারগাঁও গ্রামের চন্ডু মিয়ার ছেলে। নুরুল গোয়াইনঘাটের তোয়াকুলের লাকি কামারগাঁওয়ে তার মামার বাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় বজ্রপাত ঘটলে তার মৃত্যু হয়। কচুয়া, চাঁদপুর ॥ কচুয়ায় ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ জামাল হোসেন (১৪) মারা গেছে। বুধবার সাচার ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের আঃ মতিনের ছেলে সাচার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ জামাল হোসেন পিতার সঙ্গে ধান কাটতে গেলে বজ্রপাতে মারা যায়।
×