ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যেভাবে কক্ষপথে যাবে-

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১০ মে ২০১৮

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যেভাবে কক্ষপথে যাবে-

বিডিনিউজ ॥ গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয় যে ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে, সেই একই ধরনের রকেটে মহাকাশে যাবে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’-এর ফ্যালকন-৯ রকেট ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে উড়াল দেবে স্থানীয় সময় ১০ মে বিকাল ৪টা ১২ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিট)। কেনেডি স্পেস সেন্টারের বিবৃতিতে এ সময়ের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ফলে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় কেইপ কেনাভেরাল থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যায়, বাংলাদেশও পড়ে এই সূচীর জটে। উৎক্ষেপণের আগে জটিল এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ মেজবাহুজ্জামান। তিনি জানান, ফ্যালকন-৯ রকেটে চারটি অংশ রয়েছে। ওপরের অংশে থাকবে স্যাটেলাইট, তারপর এ্যাডাপ্টর। এরপর স্টেজ-২ এবং সবচেয়ে নিচে থাকে স্টেজ-১। নির্ধারিত সময়ে রকেটটি সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই উৎক্ষেপণ করা হয় জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “উৎক্ষেপণের পরপরই স্টেজ ওয়ান চালু হয়ে ওপরের দিকে উঠতে শুরু করবে রকেট, প্রচ- শক্তিতে ধাবিত হবে মহাকাশের দিকে। মেজবাহুজ্জামান আরও জানান, এ উৎক্ষেপণ দেখতে হলে আগ্রহীদের উৎক্ষেপণ স্থান থেকে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিতে হবে। সাত মিনিটের কম সময় দেখা যাবে, তার পরপরই উচ্চগতির রকেট চলে যাবে দৃষ্টিসীমার বাইরে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে নিচের দিকে নামতে থাকবে, এরপর চালু হবে স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই থেকে যাবে। দুটি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শেষ হয় জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম ধাপটি হল লঞ্চ এ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। গাজীপুর ও বেতবুনিয়ায় নির্মিত হয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশন ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুর ও বেতবুনিয়ায় নির্মিত হয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশন। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে জানিয়ে মোঃ মেজবাহুজ্জামান বলেন, “এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্পট) স্থাপন করা হবে।” স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া গত বছর ৩০ অক্টোবর একই স্থান থেকে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। আমাদের স্যাটেলাইটটিও একইভাবেই উৎক্ষেপণ করা হবে। সেখানে কেটি বা কোরিয়ান স্যাটেলাইট লিখা ছিল। আমাদের স্যাটেলাইটে লেখা থাকবে বিবি এবং থাকবে একটি সরকারী লোগো।
×