ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর ব্যবস্থা ॥ রমজানে পণ্যের দাম বাড়ালে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১০ মে ২০১৮

কঠোর ব্যবস্থা ॥ রমজানে পণ্যের দাম বাড়ালে

শংকর কুমার দে ॥ এবার রমজান মাসে মজুদ, কালোবাজারি, কারসাজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। সরকার এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে। রমজান মাস শুরুর আগেই বাজার মনিটরিং করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটর করবে তারা। দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট যাতে গড়ে উঠতে না পারে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখার তদারকিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম, উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তারা নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, বাজার পরিস্থিতির মূল্য নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দাদের মনিটরিং রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অতিরিক্ত মুনাফা লাভে যে সব ব্যবসায়ী মজুদ, কালোবাজারি, কারসাজি করে মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের নির্দেশনামা ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণে বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা বাজার মনিটরিং ছাড়াও ব্যবসায়ীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেবেন এবং কেউ সরকারী নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, সরকারের নীতি নির্ধারণ মহলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার মনিটরে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অবৈধ মজুদের সন্ধান পেতে সোর্স নিয়োগ করবে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ জন্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বাইরের পাইকারি বাজারগুলোর পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হবে। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাবে মন্ত্রণালয়। রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ পরিস্থিতি দেখতে বাজারে নামছে দেশের ৪টি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক টিম। পণ্যের মজুদ, চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি মনিটরিং করবে এসব টিম। এ সময় তারা পণ্যের দাম ও মান যাচাই করবেন। ভাউচারের সঙ্গে কোন ধরনের অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে ওই টিম। এ জন্য ব্যবসায়ীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাহিদার তুলনায় দেশে সকল প্রকার পণ্যের মজুদ সন্তোষজনক। দেশে কোন পণ্যের ঘাটতি নাই। সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারাও। গত রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা অঙ্গীকার করেছিলেন- নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না, তারা যাতে এবারও সেই কথা রাখেন তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর। বাজারের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকারকে অজনপ্রিয় করে বেকায়দায় ফেলতে ফাঁদ পাততে পারে অশুভ শক্তি। সরকার বিরোধী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মজুদ, কালোবাজারি, কারসাজি করে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হতে পারে। এ জন্য আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সরকার। যে কোন অযুহাতে নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির না হয় সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। এ কারণেই সরকারের এই আগাম ব্যবস্থা। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছরই বাজারের মূল্য পরিস্থিতি জানতে ও তদারকি করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এ বছরও তাদের সেই ভাবেই কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। খুব শীঘ্রই তারা বাজারে নামবে। কোথাও কোন সমস্যা দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর খুব দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আসার পর সরেজমিনে বাজারের মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন রমজান ও বৃষ্টিকে পুঁজি করে ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করার প্রবণতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে আমদানি করা নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য বৃদ্ধি করার অজুহাত ও বৃষ্টির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে এখন পর্যন্ত পণ্যের সরবরাহে কোন প্রকার সমস্যা নেই বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×