ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় কে জিতবেন মাহাথির না নাজিব

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ৯ মে ২০১৮

মালয়েশিয়ায় কে জিতবেন মাহাথির না নাজিব

মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাধারণ নির্বাচন ৯ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক ৭ এপ্রিল পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করে দেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নোংড়ামি, কদর্যতা, নীচতা, ক্ষুদ্রত্ব প্রকট রূপে দেখা দেবে। এমন আশঙ্কার সঙ্গত কারণ আছে। পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার মাত্র ক’দিন আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে প্রধান বিরোধী কোয়ালিশনের নেতা মাহাথির মোহাম্মদের ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বেরসাটুর ক্রিয়াকলাপ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। এ থেকেই বোঝা যায় যে নির্বাচনের অধ্যায়টিতে বিরোধী দলের প্রতি কেমন আচরণ করা হবে। ৯ মে একই সঙ্গে ২২২ আসনের জাতীয় পার্লামেন্ট এবং ১৩টি প্রদেশে মধ্যে ১২টির প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হবে। শাসক দল ইউনাইটেড মালয়াস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (উমনো) ৬ দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায়। তবে ক্ষমতার ওপর দলটির নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলটি পপুলার ভোটে বিজয়ী হতে ব্যর্থ হয়েছিল তথাপি অতিমাত্রায় ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার বদৌলতে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে। সে সময় বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে সমকামিতার অভিযোগে জেলে পোড়া হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে জাতিগত রাজনীতির প্রাধান্য থাকবে। জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৯ শতাংশ হয় মালয়ী অথবা অন্যান্য দেশজ গোষ্ঠীভুক্ত। এদের সমষ্টিগতভাবে বলা হয় ভূমিপুত্র। ২৪ শতাংশ হলো চৈনিক এবং ৭ শতাংশ ভারতীয়। ভূমিপুত্ররা দীর্ঘদিন ধরে সরকারী চাকরি, শিক্ষা, সরকারের ঠিকাদারি কাজ প্রভৃতিতে জাতিগত অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। উমনো নিজেকে এই ব্যবস্থার রক্ষাকর্তা বলে দাবি করে যার কারণে দলটি মালয়ীদের অনেকের আনুগত্য অর্জন করতে পেরেছে। এই ক্ষতিকর ব্যবস্থাটি শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। কানাঘুষায় শোনা যাচ্ছে এবারের পার্লামেন্ট হবে ঝুলন্ত। বিগত নির্বাচনের পর থেকে রাষ্ট্রের উন্নয়ন তহবিল থেকে ৪৫০ কোটি ডলার লোপাট হওয়ার সংবাদ সরকারকে যথেষ্ট বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কেলেঙ্কারিটি স্বয়ং নাজিবকেও স্পর্শ করেছে। প্রায় ৭০ কোটি ডলার তার ব্যক্তিগত ব্যাংক এ্যাকাউন্টে চলে গেছে বলে অভিযোগ আছে। নাজিব অবশ্য অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেছেন তিনি কোন অন্যায় করেননি। ওটা ছিল সৌদি রাজপরিবারের এক নাম না জানা সদস্যের উপহার যা পরে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এতসব কেলেঙ্কারির পরও নাজিব যে স্বপদে বহাল থাকতে পেরেছেন সেটাই আশ্চর্য। নির্বাচনে তিনি খুলনায় বিজয়ী হতে পারেন এমন সম্ভাবনাও দেখেন কেউ কেউ। কিন্তু সে দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী কোন আয়কর দেয় না। তাদের অনেকেই রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের ঘটনায় তেমন ক্ষুব্ধ নাও হতে পারে। তাছাড়া বিরোধী দলের কয়েক বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তবে যে ইস্যুগুলো ভোটারদের সবচেয়ে প্রভাবিত করবে তা হলো জীবনযাত্রার ব্যয়ের উর্ধগতি। তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণের দরিদ্রতম অংশ ক্ষুব্ধ। আবাসনের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিরক্ত। স্নাতকদের বেকারত্ব অনেক বেশি। ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের ঋণ লাভ করা কঠিন। তাছাড়া ২০১৫ সালে চালু হওয়া ৬ শতাংশ পণ্য ও সার্ভিস করের ব্যাপারে সবাই নাখোশ। বিরোধী দল বকলে যে তারা ক্ষমতায় এলে এই কর বাতিল করে বিক্রয় ও সার্ভিস কর চালু করবে। বিরোধী দল আশা করে যে নির্বাচনে ডাঃ মাহাথির মালয়ী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারবেন। ডাঃ মাহাথির উমনোর প্রধান ছিলেন। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘকাল ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন তহবিল ১এমডিবির পরিচালনা নিয়ে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে তিনি উমনো ছেড়ে চলে যান। ৯২ বছর বয়স্ক মাহাথির এখনও দেশের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কেদায় তার রাজনৈতিক ঘাঁটি বজায় রেখেছেন। তবে জোহরের মতো যে সব প্রদেশে জোর লড়াই হবে সেগুলোতে ভোটার সমর্থন আদায়ের জন্য জোর উদ্যমে সফর করে চলেছেন। নির্বাচনে বিরোধী জোট জিততে পারলে মাহাথিরকেই প্রধানমন্ত্রী করা হবে বলে একমত হয়েছেন জোট নেতারা। ডাঃ মাহাথির জোর দিয়ে বলেছেন বিরোধী জোটকে জিততে হলে ‘মালয় সুনামি’ ঘটাতে হবে। তিনি আশা করছেন ভোটারের উপস্থিতি বেশি হবে। জোটের সৃষ্টি পূর্বাঞ্চলের সাবাহ প্রদেশের ওপরও নিবন্ধ রয়েছে। সেখানে শাসক কোয়ালিশনের মধ্যকার স্থানীয় দলগুলোর আধিপত্য। সেই আধিপত্য ভাঙ্গার চেষ্টা করছে বিরোধীরা। উমনোর জোটেও পরিবর্তন ঘটছে। এরা এখন প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টির (পাস) সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। কয়েক দশক ধরে পাস উমনোকে নাস্তিকদের দল বলে ধিক্কার দিয়ে এসেছে। পাস দলটি দরিদ্র, গ্রামীণ প্রদেশ কেলানটান শাসন করে থাকে। তারা ব্যভিচার, সমকামিতা ও মদ্যপানের জন্য ইসলামের ঐতিহ্যগত সাজা আরোপ করার পক্ষপাতী, পাসের এজেন্ডায় জোহরের সুলতান ‘উদ্বিগ্ন’। তিনি আশঙ্কা করেন এতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়বে। অন্যদিকে নাজিব এতে মোটেই বিচলিত নন। উমনো কয়েকটি আসনে ‘পাসকে’ প্রার্থী দাঁড় করাতে রাজি করাতে পারে যাতে করে বিরোধী ভোট বিভক্ত হয়ে যায়। গত বেশ কিছুদিন ধরেই নাজিব বিরোধী দলের পথে অনতিক্রম্য বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছেন। তবে তিনি শেষ রক্ষা করতে পারবেন কিনা এবং মাহাথিরের ক্ষমতায় পুনরাগমন রোধ করতে পারবেন কিনা তা দেখার জন্য ৯ মের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×