ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টি ইসলাম তারিক

ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে নিপাট ভদ্রলোক...

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ৯ মে ২০১৮

ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে নিপাট ভদ্রলোক...

বার্সিলোনার সঙ্গে নাড়ির বন্ধন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার। কিন্তু প্রাণের ক্লাব ছাড়তে চলেছেন আর দিন কয়েক বাদেই। পাড়ি জমাবেন চীনের অখ্যাত লীগে। অর্থাৎ ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ক্যারিয়ারের শেষটা দেখে ফেলেছেন। গত রবিবার রাতে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ম্যাচের মধ্য দিয়ে জীবনের শেষ এল ক্লাসিকো খেলে ফেলেছেন ইনিয়েস্তা। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ শেষে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনে সিক্ত হয়েছেন। প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান তাঁকে যেভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সেটি অনেক দিন মনে রাখবেন স্প্যানিশ তারকা। খেলা শেষ হওয়ার পর ন্যু ক্যাম্পের টানেলে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন জিদান। উদ্দেশ্য, ‘গ্রেট’ ফুটবলারকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাবেন। খবর পেয়ে ইনিয়েস্তা আসেন। জিদান তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। আবেগঘন এক পরিবেশ। আপ্লুত সদ্যই বার্সিলোনা ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া এই তারকা। দুই সময়ের দুই গ্রেটকে এমন দুর্দান্ত মুহূর্তে বন্দী করেছে স্প্যানিশ টেলিভিশন চ্যানেল। ম্যাচের আগেই ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালের স্পেনের পক্ষে জয়সূচক গোল করা এই মিডফিল্ডারকে ‘অন্য দুনিয়ার’ ফুটবলার বলেছিলেন ফ্রান্সের সাবেক বিশ্বকাপজয়ী তারকা। রামোসও ইনিয়েস্তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে নিজের ভবিষ্যতটাই যেন বলতে চেয়েছেন। ম্যাচ শেষ সংবাদ সম্মেলনে ইনিয়েস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনও হতে পারে, আর দুই-এক বছর পর চীনে ইনিয়েস্তার সঙ্গে দেখা হবে আমার। রামোস ইনিয়েস্তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রামোসের ভাষায়, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার নাম যদি আন্দ্রেস না হয়ে আন্দ্রেসিনহো হতো, তবে তাঁর ভাগে দুটি ব্যালন ডি’অর থাকত। ব্রাজিলিয়ান কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে তারকা খ্যাতি বেশি জোটে। আর বিশ্বসেরার পুরস্কারের ক্ষেত্রে সেই তারকা খ্যাতির মতোই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এই ওই অঞ্চলের খেলোয়াড়দের। রামোস বলেন, তাকে যদি ইনিয়েস্তা না ডেকে আন্দ্রেসিনহো ডাকা হতো, সে দুটি ব্যালন ডি’অর পেত। এর আগে ২০১৫ সালে তারকা কোচ পেপ গার্ডিওলাও প্রায় একই কথা বলেছিলেন। ইঙ্গিত দেয়ার পর থেকে চারদিক থেকে একটাই আবদারÑ ‘যেও না ইনিয়েস্তা’। কিন্তু না, সব মায়াজাল ছিন্ন করে সত্যিই তিনি প্রাণের ক্লাব বার্সিলোনা ছেড়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে কোপা ডেল রে’র শিরোপার জয়ের পর বিদায়ের ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্সিলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বার্সিলোনার হয়ে ৬৬৯টি ম্যাচ খেলা ইনিয়েস্তা জিতেছেন ৩১টি শিরোপা। এর মধ্যে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের চারটি ও লা লীগার আটটি শিরোপা। চলতি মৌসুমেও ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। কোপা ডেল রের ফাইনালে সেভিয়ার বিপক্ষে দলের ৫-০ ব্যবধানের জয়ের ম্যাচেও দারুণ এক গোল করেন। কিন্তু বিদায় শেষ পর্যন্ত বলেই দিলেন। সংবাদ সম্মেলনে চোখের জল ঝরিয়ে ইনিয়েস্তা বলেন, এটা আমার জন্য কঠিন একটি দিন। কিন্তু আমাকে যেতেই হচ্ছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যদি বার্সিলোনায় ক্যারিয়ার শেষ করার কথা কখনো ভেবে থাকি সেটা এভাবেই করতে চেয়েছি। দলের কাজে লেগেছি, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করেছি এবং শিরোপা জিতছি। এটা আমার জন্য অনেক কঠিন দিন, কারণ সারা জীবন আমি এখানেই ছিলাম। আমার ঘর ও জীবনকে বিদায় বলা খুব কঠিন। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে আমি আমার সেরাটা দিতে পারতাম না। আমি আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার এ পর্যায়ে আসার পেছনে বার্সা ও লা মেসিয়ার অবদান। বার্সা আমাকে সব দিয়েছে। আমি ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পরিবারের সদস্য, সতীর্থ, কোচ আর্নেস্টো ভালভার্ডে ও বার্সিলোনা সভাপতি জোজেপ মারিয়া বার্টোমেউ উপস্থিতিতে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময় চোখের পানি আটকাতে পারেননি স্পেনের অন্যতম সফল এই ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়েও সফল ইনিয়েস্তা ২০১০ সালে জিতেন বিশ্বকাপ। ২০০৮ ও ২০১২ সালে জিতেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপ। ২০০১ সালে বার্সিলোনা বি দলের জার্সি গায়ে যাত্রা শুরু করে এখনও এই ক্লাবেই আছেন। যে কারণে অনেকটাই আবেগী হয়ে পড়েন ইনিয়েস্তা। কান্না ভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় এখানে অনেক স্মৃতি, অনেক আবেগ জমে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুশী। যে ধরনের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা এখানে পেয়েছি তাতে আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আশা করছি শেষবারের মতো লীগ শিরোপাটাও বার্সাকে দিয়ে যেতে পারব। চলতি মৌসুমের শুরুতে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পে থাকার চুক্তি করেছিলেন ইনিয়েস্তা। কিন্তু চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রতি মৌসুমের পরর তার ক্লাব ছাড়ার অনুমতিও ছিল। জাতীয় দল স্পেনের জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত ১২৫টি ম্যাচ খেলা মাঝ মাঠের এই খেলোয়াড়কে দেখা যেতে পারে রাশিয়া বিশ্বকাপেও। বার্সিলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্টোমেউ চাইনিজ সুপার লীগ থেকে ইনিয়েস্তার প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে চোংকিং লিফান ক্লাবেই খেলতে যাচ্ছেন স্প্যানিশ এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার। ৩৩ বছর বয়সী ইনিয়েস্তা ক্লাব ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন বার্সিলোনায়। ২০০১ সালে বার্সিলোনা বি দলের জার্সি গায়ে যাত্রা শুরু করে এখনও এই ক্লাবেই আছেন। বিদায়ী ইনিস্তো বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুশী। যে ধরনের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা এখানে পেয়েছি তাতে আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। চলতি মৌসুমের শুরুতে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পে থাকার চুক্তি করেছিলেন ইনিয়েস্তা। কিন্তু চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রতি মৌসুমের পর তার ক্লাব ছাড়ার অনুমতিও ছিল। ইনিয়েস্তা প্রসঙ্গে বার্সা সভাপতি বার্টোমেউ বলেন, আমরা জানি ইনিয়েস্তা বড় একটা প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে এটাও বলতে চাই, বার্সিলোনা তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তার চুক্তির মেয়াদটা আজীবনের। বার্সা সভাপতি যতই ‘আজীবন চুক্তি’র কথা বলুন না কেন, ইনিয়েস্তা নিজের ভবিষ্যতটা ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছেন।
×