ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণী আক্তার সান

স্মিথ-ওয়ার্নারের বিলম্বিত বোধোদয়

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ৯ মে ২০১৮

স্মিথ-ওয়ার্নারের বিলম্বিত বোধোদয়

অস্ট্রেলীয়দের চোখে স্টিভেন স্মিথ ছিলেন ‘এ যুগের ব্র্যাডম্যান’। ব্যাটিংয়ে- নেতৃত্বে কী অসাধারণ পারফর্মেন্স। এক ভুলে সব তছনছ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে সতীর্থ ব্যানক্রফটকে দিয়ে বল টেম্পিরিং করানোর দায় মাথায় নিয়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন অধিনায়ক স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। এ যেন নক্ষত্রের পতন। এত কঠিন শাস্তি নিয়ে অবশ্য পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। ক’দিন আগে খোদ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) প্রধাণ জেমস সাদারল্যান্ড বলেছেন, ‘ওদের আসলে সুযোগটা প্রাপ্য।’ তবে নিষেধজ্ঞার এ ক’দিনে পরিবার-ভক্তদের সড়ায় অভিভূত স্মিথ বলেছেন, যাঁরা তাঁকে এতটা ভালবাসেন, তাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটাই এখন তার প্রথম কাজ। ‘অনেকদিন পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসাটা চমৎকার। এই দীর্ঘ সময়ে আমি আপনাদের অসংখ্য ই-মেইল আর অবিশ্বাস্য সব চিঠি পেয়েছি। এখন আপনাদের বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জন্য আমাকে অনেক কিছু করতে হবে। মা, বাবা ও ড্যানি (বান্ধবী ড্যানি উইলস), এসময়টা আমি তোমাদের আঁকড়ে ছিলাম। তোমাদের জন্য ধ্যনবাদ যথেষ্ট নয়। বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবার। তোমাদের ভালবাসা আর সমর্থনের জন্য অনেক ধন্যবাদ।’ ইনস্টগ্রামে লিখেছেন স্মিথ। শাস্তি ঘোষণার পর নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে যান স্মিথ। স্মিথের বাবা ব্রিটিশ এক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বান্ধবী উইলসকে নিয়ে বিদেশে গেছে সে। গুঞ্জন আছে, কষ্ট ভুলতে মার্কিন মুলুকে গিয়ে বিয়ের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন ২৮ বছর বয়সি তারকা। খুব শীঘ্রই গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছেন দু-জনে। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। বিপদের সময় তার পাশে থাকার জন্য পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোস্ট। শুরুতে অপরাধ স্বীকার করার পর স্মিথ-ওয়ার্নারদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। অনেকে তাদের আজীবন নিষিদ্ধের দাবি জানান। খোদ অসি প্রধানমন্ত্রীও তাদের কঠোর শাস্তির পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু, যখনই শাস্তি ঘোষণা হলো, অনেকে তখন সহানুভূতি প্রকাশ করতে শুরু করেন। অনেকে শাস্তির মাত্রা নিয়ে অসন্তুষ্টি জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই সমর্থকদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা আর ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্মিথ। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত পোস্টে তাকে তার বান্ধবী ড্যানি উইলস ও তাদের পোষা কুকুর চার্লির সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা গেছে। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সিএÑ জানিয়েছিল ফেরার পর আর কখনই অধিনায়ক হতে পারবেন না স্মিথ ও ওয়ার্নার। তবে শাস্তির বিপক্ষে আপীল করতে পারবেন। যদিও শাস্তি মেনে নিয়ে আপীল করবেন না, বলে জানিয়েছেন স্মিথ। আর ওয়ার্নার তো ক্রিকেটে ফেরার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। ভক্তদের আবেগ আর বাস্তবতা দেখে অস্ট্রেলিয়ান কর্তারাও এখন নমনীয়। গত সপ্তাহে বোর্ড প্রধাণ বলেছেন, ‘আরও একবার সুযোগ পাওয়া উচিত স্মিথ-ওয়ার্নারদের। একই সঙ্গে ক্রিকেটারদের নৈতিকভাবে দৃঢ় করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ব্যবস্থা নিয়েছে সিএ।’ এই দু-জনকে ছাড়া মাঠের ক্রিকেটেও দলটির কঠিন বিপদ। আগামী বছর বিশ্বকাপ পর্যন্ত যদি তার মাঠের বাইরে থাকেন, তবে রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের কপালে আরও দুর্ভোগ নেমে আসবে। তার ওপর স্পন্সর, দর্শক ডিমান্ড, এসব বিবেচনা করেই সিএ-র মনোভাবের এই পরিবর্তন। ক্যারিয়ারে একাধিকবার মাঠের বাইরে অসদচারণ করেও দুর্বার প্রতিভার জোড়ে পাড় পেয়ে গেছেন। এমনকি সহ-অধিনায়কও করা হয়েছিল। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে সঙ্গী করে দেশকে টানছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু রক্তে মিশে যাওয়া ভ্রান্তিগুলো হয়ত মুছতে পারেননি! বহুল আলোচিত বল টেম্পারিংয়ের মূল হোতা ভাবা হয় তাকেই। নিষেধাজ্ঞার এ কঠিন কঠিন সময়ে পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু, ভক্তদের সহানুভূতির পর সব হারিয়ে যেন ভালবাসার মূল্য বুঝলেন ওয়ার্নার, ‘স্ত্রী-সন্তানের সান্নিধ্য থেকেই সবকিছু অনুভব করতে পারছি। বুঝতে পারছি সবাই আমাকে কত ভালবাসে। তাদের এই ভালবাসার মূল্য অপরিসীম।’ সম্প্রতি ৩১ বছর বয়সী তারকা ব্যাটসম্যান এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘এটা আসলে মাথা নোয়ানোর মতো, ভীষণ আনন্দের। কখনও কখনও আপনাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়, ভাবতে হয় এবং বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, মানুষ আপনার কতটা অনুভব করে। মাঝে মধ্যে আমাদের সমাজে এমন কিছু ঘটে যেটা মানুষের জন্য বাজে হয়ে দেখা দেয় এবং সমর্থনের প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয়, আমি নিজে এই সমর্থন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা শিক্ষা পেয়েছি।’ বল টেম্পারিং কা-ের মূল হোতা ছিলেন তিনি। অশ্রুবিজরিত কণ্ঠে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। অনেকটা সময় আড়ালে থেকে অবশেষে লোকসম্মুখে আসলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সহ-অধিনায়ক। জানালেন, মানুষের ভালবাসা আর সমর্থন তাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। স্ত্রী ক্যান্ডিস আর মেয়ে আইভি আর ইন্ডিকে নিয়ে সময়টা খারাপ কাটছে না, বলেও জানিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান, ‘আমার মনে হয়, আমাদের বড় একটা ব্যাপার হলো রুটিনের বৃত্তে থাকতে হয়- ক্রিকেট, হোটেল, ব্যাগ গুটানো আর বাড়িতে আসা। তবে বাড়িতে আপনি বেশি সময় থাকতে পারবেন না। দীর্ঘ সময় আপনাকে একটি ভাল রুটিনের মধ্যে কাটাতে হয়। এতে নিজের স্বার্থ দেখার সুযোগ নেই। বাচ্চাদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তাদের কেয়ার, সাঁতার শেখানো, জিমনেস্টিক, সন্তানদের সঙ্গে ভাল কিছু সময় কাটানোরও দরকার আছে।’ নিষেধাজ্ঞার এই সময়টায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটালেও ক্রিকেটটা ওয়ার্নারের রক্তে মিশে আছে। খেলা কতটা মিস করছেন, সেটি দেখা গেছে তার আচরণে। সিডনির রাস্তায় অদৃশ্য ব্যাট দিয়ে আনমনে খেলে যাওয়া এই ওপেনারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালই হয়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনের নর্দান টেরিটরির খুদে ক্রিকেটারদের নানা টিপস দিতে এসে আবেগের ¯্রােতে ভেসেছিলেন ওয়ার্নার। কচিকাঁচাদের টিপস দেয়ার পাশাপাশি মিটিয়েছের অটোগ্রাফ শিকারিদের আবদার।
×