ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপকথন-১৬ ॥ দ্বাদশ বিশ্বকাপ ইতালি : ১৯৯০

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ৯ মে ২০১৮

বিশ্বকাপকথন-১৬ ॥ দ্বাদশ বিশ্বকাপ ইতালি : ১৯৯০

এখন একুুশতম বিশ্বকাপ ফুটবলের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় উন্মুখ গোটা ফুটবলবিশ্ব। খুব বেশি দেরিও নেই। সময়ের হিসাব এখন বছর থেকে নেমে এসেছে মাসে। আর সে মাসের হিসাবটা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। বাকি মাত্র মাস খানেক। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলের ‘ওপেনিং সেরিমনি’ নিয়ে কাজ। কেমন হবে সে অনুষ্ঠান চলছে তার মাস্টার প্লান। কারা থাকবে সে অনুষ্ঠানে সে তালিকাও তৈরি হয়ে গেছে। আয়োজকরা চাইছে, আগের অন্যসব বিশ্বকাপের চেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য হবে এ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আর সে অনুষ্ঠানকে সেরায় রূপ দিতে এখনই শুরু হয়ে গেছে তোড়জোড়। এ কথা সবার জানা, এবারের ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসছে রাশিয়ায়। এবারের ২১তম বিশ্বকাপে ৩২টি দল অংশ নেবে। কোন ৩২টি দল ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেবে সেটাও এখন সবার জানা হয়ে গেছে। রাশিয়ার ১২টি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ কথাও সবার জানা, ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসর বসে উরুগুয়েতে। মন্টিভিডিওতে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মন্টিভিডিও থেকে মস্কো। বিশ্বকাপ ফুটবলের ৮৮ বছরের পথচলা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন ‘বিশ্বকাপকথন’। লিখেছেন... প্রথিতযশা কবি, কথাসাহিত্যিক ও ক্রীড়ালেখক সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ আয়োজনের ধারাবাহিকতায় মেক্সিকোর পর দায়িত্ব পায় ইতালি। এর আগে তারা ১৯৩৪ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফুটবলের সফল আয়োজক ছিল। সেবার কাপও জিতেছিল। কিন্তু এবার তারা কাপ জয়ের সে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। ফিফার ১৬৭টি সদস্য দেশের সম্মতি ভোটে আয়োজক নির্বাচিত হয় ইতালি। এবার চতুর্দশ বিশ্বকাপেরও মূল পর্বে খেলে ২৪টি দেশ। এই ২৪টি দেশ নির্বাচন করা হয় বাছাই পর্বের ১১৪টি দেশের মধ্যে থেকে। অঞ্চলভিত্তিক দলগুলো হলো- ইউরোপ : ইতালি, প. জার্মানি, ইংল্যান্ড, চেকোশ্লাভাকিয়া, সুইডেন, স্পেন, যুগোশ্লাভিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, রুমানিয়া, অস্ট্রিয়া, স্কটল্যান্ড; কনমোবল : ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া; কনকাকাফ : যুক্তরাষ্ট্র ও কোস্টারিকা; আফ্রিকা : ক্যামেরুন ও মিসর; এশিয়া : দ. কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত চতুর্দশ বিশ্বকাপে অংশ নেয়। বাছাই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ৩১৩টি ম্যাচ। আর মূল পর্বে ২৪টি দল খেলল ৫২টি ম্যাচ। স্পেনের ১২টি স্টেডিয়ামে এই ৫২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ত্রয়োদশ বিশ্বকাপের মতো এবারও আবার গ্রুপিং করা হয়। এবার গ্রুপ পর্বের দেশ সংখ্যা ছিল ২৪টি। ফলে ২৪টি দলকে ৬টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক গ্রুপে ৪টি করে দল অংশ নেয়। ত্রয়োদশ বিশ্বকাপের নিয়মেই এবারও খেলা হয়। এবারও খেলার নিয়ম ছিল এ রকম, গ্রুপ পর্বের ২৪টি দলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপসহ শীর্ষ ১৬টি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে নক আউট পদ্ধতিতে খেলবে। দ্বিতীয় রাউন্ডের বিজয়ী ৮ দল কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলবে। কোয়ার্টার-ফাইনালে বিজয়ী ৪ দল সেমি-ফাইনাল ও সেমি-ফাইনাল বিজয়ী দুই দল ফাইনাল খেলবে। ২৪টি দলকে ৬ গ্রুপে ভাগ করা হয় এভাবে : ক গ্রুপ : ইতালি, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চেকোশ্লাভাকিয়া; খ গ্রুপ : আর্জেন্টিনা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, রুমানিয়া ও ক্যামেরুন; গ গ্রুপ : ব্রাজিল, সুইডেন, কোস্টারিকা ও স্কটল্যান্ড; ঘ গ্রুপ : প. জার্মানি, যুগোশ্লাভিয়া, কলম্বিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত; ঙ গ্রুপ : বেলজিয়াম, উরুগুয়ে, স্পেন, ও দ. কোরিয়া; চ গ্রুপ : ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মিশর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এবারেও আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। বিশ্বকাপের একটা রেওয়াজই হয়ে দাঁড়ায় বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের। এটি বিশ্বকাপের একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উদ্বোধনী ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বনাম আফ্রিকার সিংহ ক্যামেরুন। প্রথম ম্যাচেই অঘটন। রজার মিলার দলের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। ওবাম বিয়কের গোলে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টাইনরা আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। এ ম্যাচে পক্ষপাতদুষ্ট রেফারি ক্যামেরুনের বিয়ক ব্রাদারের অপর সদস্য কানা বিয়ককে অযৌক্তিকভাবে লাল কার্ড দিয়েও আর্জেন্টিনার হার বাঁচাতে পারেনি। অভিষেকেই ক্যামেরুনের ক্ষিপ্র গতির অল আউট ফুটবল দর্শক পছন্দ করে। অগণিত ভক্ত-সমর্থকও জুটে যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডের দেয়াল পেরিয়ে ক্যামেরুন কোয়ার্টারেও পৌঁছে যায়। কিন্তু বিধি বাম! কোয়ার্টারেও সেই পক্ষপাতদুষ্ট রেফারিংয়ের কারণে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। বিশ্বকাপে এই রেফারিং সমস্যা সব সময়ের, সর্বকালের। আশ্চার্যজনকভাবে এ ব্যাপারে ফিফাও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফিফা চাইলে এ বিতর্ক এড়াতে পারত। ক্রিকেটের মতো ম্যাচ রেফারি নিয়োগ করলেই এ সমস্যা আর থাকত না বলে অনেকে মনে করেন। একই গ্রুপে রাশানরাও হয়েছে পক্ষপাতদুষ্ট রেফারিংয়ের শিকার। বলা যায়, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে রাশানদের রেফারিই হারিয়ে দেন। ফরে রাশানরা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয়। তৃতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। বরাবরের মতো এবারও ব্রাজিল টপ ফেবারিট হিসেবে খেলা শুরু করে। তবে বরাবরের মতো এবারও তাদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। প্রথম রাউন্ডের দেয়াল সিংহের মতো ডিঙ্গোয় তারা। প্রথম পর্বে গ্রুপের ৩টি ম্যাচেই জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ভাগ্য তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সারা ম্যাচ ব্রাজিলিয়ানদের পয়ে পায়ে বল ঘুরলেও আর্জেন্টিনা পুরো খেলায় মাত্র একটি সুযোগ পায়। আর সেটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি কুশলী স্ট্রাইকার ক্যানিজিয়া। মাত্র এই একটি গোল করে ক্যানিজিয়া হিরো বনে যান। প্রচুর ভক্তও জুটে যায়। আর্জেন্টিনা পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। অন্যদিকে ব্রাজিল অসংখ্য সুযোগ পেয়েও তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি। টপ ফেবারিটদের ফিরতে হয় নিরাশ হয়ে। এরপর ছয় গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপসহ ‘টপ সিক্সটিন টিম’ দ্বিতীয় রাউন্ডে নক আউট পর্বে খেলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে নক আউট পর্বের ফলাফল ছিল এ রকম : মেক্সিকো ২-০ গোলে বুলগেরিয়াকে, বেলজিয়াম ৪-৩ গোলে সো. ইউনিয়নকে, ব্রাজিল ৪-০ গোলে পোল্যান্ডকে, আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে উরুগুয়েকে, ফ্রান্স ২-০ গোলে ইতালিকে, প. জার্মানি ১-০ গোলে মরক্কোকে, ইংল্যান্ড ৩-০ গোলে প্যারাগুয়েকে এবং স্পেন ৫-১ গোলে ডেনমার্ককে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত করে। স্পেনের বুত্রাগুয়েনা হ্যাট্রিকসহ ৪ গোল করেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে বেলজিয়ামের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে সোভিয়েতরা হারে ৩-৪ গোলে। রাশান তারকা বেলানভের হ্যাটট্রিকও দলের হার বাঁচাতে পারেনি। কোয়ার্টার-ফাইনালে ফ্রান্স ১(৪)-১(৩) টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে, প. জার্মানি ০(৪)-০(১) টাইব্রেকারে স্বাগতিক মেক্সিকোকে, আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে এবং বেলজিয়াম ১(৫)-১(৪) স্পেনকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনার মাঝ মাঠ থেকে ৪/৫ জন ইংরেজ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে করা দৃষ্টিনন্দন গোলটি যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দেয়। বলা হয়, ম্যারাডোনা পা দিয়ে নয়; হাত দিয়ে গোলটি করেছিলেন। রেফারির চোখ ফাঁকি দিয়ে করা এ গোলটির বিষয়ে যদিও ম্যারাডোনা তা অস্বীকার করেননি। তিনি হাত দিয়ে করার কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও এটিকে ‘ঈশ্বরের গোল’ হিসেবে অভিহিত করেন। ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, ব্রাজিলের কারেকা, আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ২ গোল, লিনেকার গোল করেন। বিশেষ করে এ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার খেলা অনেক বছর মানুষ মনে রাখবে। সেমি-ফাইনালে প. জার্মানি ২-০ গোলে ফ্রান্সকে ও আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করে। জার্মান তারকা ব্রেহমে ওভয়েলার এবং আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা আবার ২ গোল করেন। গ্রুপ পর্বের ফলাফল : গ্রুপ-এ : ইতালি-১ অস্ট্রিয়া-০; চেকোশ্লাভাকিয়া-৫ যুক্তরাষ্ট্র-১; ইতালি-১ যুক্তরাষ্ট্র-১; চেকোশ্লাভাকিয়া-১ অস্ট্রিয়া-০; অস্ট্রিয়া-২ যুক্তরাষ্ট্র-১; ইতালি-২ চেকোশ্লাভাকিয়া-০; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ইতালি গ্রুপ রানার্স আপ : সুইজারল্যান্ড। গ্রুপ-বি : ক্যামেরুন-১ আর্জেন্টিনা-০; রুমানিয়া-২ সো. ইউনিয়ন-০; আর্জেন্টিনা-২ সো. ইউনিয়ন-০; ক্যামেরুন-২ রুমানিয়া-১; সো. ইউনিয়ন-৪ ক্যামেরুন-০; আর্জেন্টিনা-১ রুমানিয়া-০; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ক্যামেরুন গ্রুপ রানার্স আপ : রুমানিয়া তৃতীয় : আর্জেন্টিনা । গ্রুপ-সি : ব্রাজিল-২ সুইডেন-১; কোস্টারিকা-১ স্কটল্যান্ড-০; ব্রাজিল-১ কোস্টারিকা-০; স্কটল্যান্ড-২ সুইডেন-১; ব্রাজিল-১ স্কটল্যান্ড-০; কোস্টারিকা-২ সুইডেন-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ব্রাজিল গ্রুপ রানার্স আপ : কোস্টারিকা । গ্রুপ-ডি : কলম্বিয়া-২ আমিরাত-০; প. জার্মানি-৪ যুগোশ্লাভিয়া-১; যুগোশ্লাভিয়া-১ কলম্বিয়া-০; প. জার্মানি-৫ আমিরাত-১; প. জার্মানি-১ কলম্বিয়া-১; যুগোশ্লাভিয়া-৪ আমিরাত-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : প. জার্মানি গ্রুপ রানার্স আপ : যুগোশ্লাভিয়া তৃতীয় : কলম্বিয়া। গ্রুপ-ই : বেলজিয়াম-২ দ. কোরিয়া-০; উরুগুয়ে-০ স্পেন-৩; বেলজিয়াম-৩ উরুগুয়ে-১; স্পেন-৩ দ. কোরিয়া-১; স্পেন-২ বেলজিয়াম-১; উরুগুয়ে-১ দ. কোরিয়া-০; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : স্পেন গ্রুপ রানার্স আপ : বেলজিয়াম তৃতীয় : উরুগুয়ে। গ্রুপ-এফ : ইংল্যান্ড-১; আয়ারল্যান্ড-১; নেদারল্যান্ড-১ মিসর-১; ইংল্যান্ড-০ নেদারল্যান্ড-০; আয়ারল্যান্ড-০ মিসর-০; ইংল্যান্ড-১ মিসর-০; আয়ারল্যান্ড-১ নেদারল্যান্ড -১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ড গ্রুপ রানার্স আপ : আয়ারল্যান্ড তৃতীয় : নেদারল্যান্ড। সুপার সিক্সটিন : নক আউট সেকেন্ড রাউন্ড : যুগোশ্লাভিয়া-২ স্পেন-১; আর্জেন্টিনা-১ ব্রাজিল-০; ইতালি-২ উরুগুয়ে-০; আয়ারল্যান্ড-১ (৫) রুমানিয়া-০ (৪) (টাইব্রেকারে আয়ারল্যান্ড জয়ী); জার্মানি-২ নেদারল্যান্ড-১; চেকোশ্লাভাকিয়া-৪ কোস্টারিকা-১ ক্যামেরুন-২ কলম্বিয়া-১; ইংল্যান্ড-১ বেলজিয়াম-০; কোয়ার্টার ফাইনাল : আর্জেন্টিনা-৩ যুগোশ্লাভিয়া-২; ইতালি-২ আয়ারল্যান্ড-১ প. জার্মানি-১ চেকোশ্লাভাকিয়া-০; ইংল্যান্ড-৩ ক্যামেরুন-২ সেমি-ফাইনাল : আর্জেন্টিনা-১(৪) ইতালি-১(৩) (টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জয়ী); প. জার্মানি-১(৪) ইংল্যান্ড-১(৩) (টাইব্রেকারে প. জার্মানি জয়ী) তৃতীয় স্থান : ইতালি-২ ইংল্যান্ড-১; ফাইনাল: প. জার্মানি-১ আর্জেন্টিনা-০ (ব্রেহমে) চ্যাম্পিয়ন : প. জার্মানি রানার্স আপ : আর্জেন্টিনা তৃতীয় স্থান : ইতালি। রোমের স্বপ্নের ফাইনালে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে মাঠে নামে প. জার্মানি। এর আগের দুই বিশ্বকাপের দুটো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও কাপ না জেতার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই খেলতে নামে। তবে এবারে সতর্ক ছিল ম্যাথুউসের দল। কোন ভুলের খেসারত যেন না দিতে হয়। কাপ এবার চাই ই চাই। এ বিশ্বকাপে জার্মানরাই ছিল হট ফেবারিট। আর খেলা শুরুর পর থেকে সেটার প্রমাণও তারা দিয়ে এসেছে। ফাইনালে আসার আগে একটি ম্যাচেও তারা হারেনি। ফাইনালেও তারা দাপটের সঙ্গে খেলে। তাদের এবারের প্রতিপক্ষ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। শুরু থেকেই এ ম্যাচে মেরে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। তারা বুঝে গিয়েছিল, নৈপুণ্যে তারা জার্মানদের সাথে পারবে না। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা এতই বেপরোয়া হয়ে যায় যে মেক্সিকান রেফারি কোডেশালকে আর্জেন্টিনার দুইজন খেলোয়াড় মনজন ও দেজত্তিকে লাল কার্ড দেখাতে হয়। এমন কী কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনাকেও হলুদ কার্ড দেখতে হয়। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি আর্জেন্টিনার। জার্মানরা এত ভাল খেলেছে যে তাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ম্যারাডোনার দল। তারপরও জার্মানদেরকে সহজে জায়গা ছেড়ে দেয়নি ম্যারাডোনা-বুরুচাগারা। লড়েই জিততে হয়েছে জার্মানদের। লড়াই চলে সমানতালে। খেলার ৮৫ মিনিট পর্যন্ত জার্মানিকে আটকে রাখে আর্জেন্টিনা। ২ জন লাল কার্ড পাওয়ার পরও অদম্য তারা। তারপরও শেষ রক্ষা হল না। খেলা শেষ হবার ৫ মিনিট আগে জার্মান দলনেতা লুথার ম্যাথিউসের থ্রো থেকে পাওয়া বল নিয়ে ভয়েলার আর্জেন্টিনার গোল মুখে ঢুকে পড়লে সেনসিনি তাকে ফাউল করেন। আর এ কারণে রেফারি পেনাল্টি দেন জার্মানদের। পেনাল্টি থেকে জার্মান তারকা গোল করে দলের তৃতীয়বারের মতো বিজয় নিশ্চিত করেন। তৃতীয়বারের মতো কাপ জয়ের স্বপ্ন ভেস্তে যায় আর্জেন্টিনার। তৃতীয় স্থান পায় ইতালি। এখানেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তারা ২-১ গোলে হারায় ইংল্যান্ডকে। ১৪তম বিশ্বকাপে প. জার্মানির নেতৃত্ব দেন লুথার ম্যাথিউস আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা । ১৪তম বিশ্বকাপে মোট ১১৫টি গোল হয়। ১৪তম বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোল করেন ইতালির সালভাটর শিলাচি। তিনি এ বিশ্বকাপে ৬টি গোল করে ‘টপ স্কোরার’ হন। হ্যাটট্রিক করেন ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার, স্পেনের বুত্রাগুয়েনা, সোভিয়েত তারকা বেলানভ। বিশ্বকাপের ১৪তম আসরের ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করেন মেক্সিকোর রেফারি এডগার্ডো কোডেশাল। (চলবে) লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ লেখক পরিষদ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রকাশিত দুই শতাধিক বইয়ের লেখক e-mail : [email protected]
×