ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বাজেটে কর হার কমানোর আভাস অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৯ মে ২০১৮

আগামী বাজেটে কর হার কমানোর আভাস অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করহার কমানোর আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, করদাতার সংখ্যা আশাতীতভাবে বেড়েছে এবং বাড়ছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরে ৪০ লাখ মানুষ কর দেবে। এটা একটি বড় অর্জন। আগামী বাজেটের পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও আভাস দেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রচেষ্টা নেয়ার কথা জানান তিনি। মঙ্গলবার বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর যৌথ উদ্যোগে সরাসরি অনুষ্ঠান আইএফআইসি ব্যাংক ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাত ৮টা ১০ মিনিটে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ঢাকা হোটেলের ওয়াটার গার্ডেনের বলরুম থেকে এনটিভিতে সরাসরি অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টুডিও থেকেও অতিথিরা কেমন বাজেট চাই অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। মুহিত বলেন, এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, এটা নির্বাচনের বাজেট নয়। টানা নয়টি বাজেটের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার দশম বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকার ছয় মাস সময় পাবে। তাই এটা নির্বাচনী বাজেট, এটা ঠিক নয়। অর্থমন্ত্রী বলেন বলেন, এবার বাজেট প্রণয়নের কাজ আগে-ভাগে শুরু করা হয়েছে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও এবার জানুয়ারি থেকে বাজেটের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজেট সংক্রান্ত ১২টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামনে আরও কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, এবার বাজেট প্রণয়নের সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মুহিত বলেন, সরকারের আয় বাড়ায় বাজেটের আকারও বাড়ছে। দেশের তরুণ সমাজ কর দিতে এগিয়ে আসছেন। ১৪ লাখ করদাতা থেকে আগামীতে ৪০ লাখ মানুষ করের আওতায় আসছেন। করহার বাড়ানোর চেয়ে করের আওতা বাড়াতে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে তরুণ সমাজ কর দিতে এগিয়ে আসায় দেশে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন। তবে বাজেটের সঙ্গে নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। জ্বালানিখাত প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়বে। তবে এই বাড়াটা সহনীয় হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যে এলএনজি গ্যাস আমদানি শুরু করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির, বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও ইংরেজী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন বক্তব্য রাখেন। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী-চেম্বার নেতৃবৃন্দ, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক জহিরুল আলম। এছাড়া চট্টগ্রাম স্টুডি থেকেও দুজন আলোচক সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা এবং চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ও বিদ্যুত, শিল্প-বাণিজ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বিগত দিনের বাজেটের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির পাশাপাশি আসছে বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। ড. কে এ এস মুর্শেদ বলেন, আকারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আয় বৈষম্য নিরসন করা। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন। নিহাদ কবির বলেন, আগামী বাজেট ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হওয়া প্রয়োজন। অর্থনীতির গতিশীলতা যাতে বাড়ে সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরী। ডলারের দাম বাড়ছে-কমছে, ব্যাংকিংখাতে অরাজকতা বিরাজ করছে। বাজেটে এসব বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো উচিত। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট শুধু সরকারের আয়-ব্যয় নয়। আকার না বাড়িয়ে বাস্তবায়নযোগ্য হতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যাতে আর না বাড়ে সেদিকে বাজেটে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাজেট হওয়া উচিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানমুখী। আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেছি। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে এখন পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, কর-ভ্যাট না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো, ব্যবসা-বিনিয়োগবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো, জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাস-বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, নির্মাণ ব্যয় কমাতে রড সিমেন্টের দাম কমানো, কৃষি ও আইসিটিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো, পোল্ট্রি শিল্প উন্নয়ন এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
×