ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দারিদ্র্য জয় করা দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে বাধা অর্থ

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৯ মে ২০১৮

দারিদ্র্য জয় করা দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে বাধা অর্থ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৮ মে ॥ দুই বোন কবিতা ও মোহনা। ৯ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পিতার আদর- ¯েœহের কথা মনে নেই ওদের। মায়ের ক্লান্তিহীন চেষ্টা ও নিজেদের অদম্য মানসিকতাকে সম্বল করে মামাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েই ২ বোন অর্জন করেছে এসএসসিতে জিপিএ-৫। শবচর উপজেলার উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এ সফলতার দিনেও দরিদ্রতার কারণে তাদের ভবিষ্যত ও লেখাপড়া নিয়ে শঙ্কিত মা কল্পনা বেগম। তার সামনে মেয়েদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত। এ অনিশ্চিয়তার কারণে অসহায় মা এখন অদম্য মেধাবী ২ মেয়ের বাল্যবিয়ের কথা ভাবছেন। জানা গেছে, ৯ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় সৌদি প্রবাসী পিতা আবদুল কাদের মাতুব্বর প্রবাসেই মারা যায়। ৩ মেয়েকে নিয়ে হিমশিম খাওয়া কল্পনা বেগম বাধ্য হয়ে তখন ১ম শ্রেণীতে পড়ুয়া কবিতা ও মোহনাকে মামা বাড়িতে রেখে আসেন। ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় তারা। শুরু থেকেই এ ২ বোনের দখলে ছিল রোল ১ ও ২। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৮ সনের এসএসসি পরীক্ষায় জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর জিপিএ-৫ পেলেও মলিন তাদের মুখ। স্বতঃস্ফূর্ততা নেই ওদের মনে। দারিদ্র্যের রোষানলে বিপর্যস্ত পরিবারটিতে ভর করেছে ২ মেয়ের ভবিষ্যত ভাল কলেজে লেখাপড়ার শঙ্কা। জিপিএ-৫ পেয়ে চমক মোশারফের স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, বাবা লড়ছেন মরণঘাতী ক্যান্সারের সঙ্গে। তারপরেও পেটের ক্ষুধা আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করছেন। তবে প্রায়ই অসুস্থ থাকায় কাজে যেতে পারেন না। তখন সঙ্কট আরও বাড়ে। সামান্য ভিটেমাটি ছাড়া সহায় সম্বল কিছুই নেই। সংসারে অভাব নিত্যদিনের। প্রয়োজনীয় লেখাপড়ার খরচ আর বই, পোশাক জোগাড় করতে পারেন না। এ ধরনের নানা প্রতিকূলতা জয় করে জিপিএ-৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছে দরিদ্র মেধাবী মোশারফ। সে এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষাতেও সে পেয়েছিল জিপিএ-৫। মোশারফের বাড়ি সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ভেরভেরি গ্রামে। বাবা হারুন অর রশিদ রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করেন। দৈনিক আয় ৩০০ টাকা। দরিদ্র হারুনের ১৫ শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই। তার ওপর ৭ বছর ধরে লড়ছেন থ্রট ক্যান্সারের সঙ্গে। কয়েক দফা কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপি নিয়েছেন। এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা। দৈনিক ১০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। সংসারের খরচ চিকিৎসা ব্যয় আর দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। মোশারফের বাবা হারুন অর রশিদ জানান, বড় ছেলে মিনহাজুল মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ে। মাসে ৩ হাজার টাকা পাঠাতে হয়। ছোট ছেলে মোশারফ ভাল ফলাফল করার পর তাকে ভাল কলেজে পড়াতে হবে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে গেছে তার জন্য। মোশারফের স্বপ্ন চিকিৎসক হবার। এখন কোন ভাল কলেজে পড়ার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের বড় বাধা আর্থিক সঙ্কট। কুড়িগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক এনামুল হক জানান, ধরলা নদীর পাড়ে এক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন সাইকেলে স্কুলে আসত মোশারফ। চরম দারিদ্র্য জয় করে সে যে সাফল্য পেয়েছে, তাতে শিক্ষকরা গর্বিত তার জন্য। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রতিভাবান মোশারফ তার স্বপ্ন ছুঁতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
×