ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৯ মে ২০১৮

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এমন আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার পালিত হয়েছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে পালন করে নানা কর্মসূচী। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, দেশে রক্তশূন্যতাজনিত রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এ রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। কোন পরিবারে একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা করাতে সে পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের রক্ত পরীক্ষা, আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিয়ে না করা এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এর প্রতিরোধ করা সম্ভব। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর ন্যাশনাল এজমা সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডাইরেক্টর ডাঃ নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা বলেন, থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক ১ কোটিরও বেশি। বাহকদের মাঝে বিয়ের কারণে প্রতিবছর এদেশে প্রায় ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। আক্রান্ত রোগীকে আজীবন অন্যের দেয়া রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হবে এবং বার বার রক্তগ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিরাময়সহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়া রোগীরা মানবেতর জীবনযাপন করে। তাই বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থ্যালাসেমিয়া রোগটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এ বিষয়ে জাতীয় কর্মসূচী ঘোষণা করে। মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২৮ সালের মাঝে বাংলাদেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্মূলের ঘোষণা দেন বলে জানান ডাঃ নাসিমা সুলতানা। এদিকে, বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত সেমিনার ও আলোচনা সভায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে এখনও থ্যালাসেমিয়া রোগের উন্নত চিকিৎসা হয় না। অথচ ডিএনএ এ্যানালাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই থ্যালাসেমিয়া রোগ নিরুপণ করা যায়। ডিএনএ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত উৎপাদন করে। এই ডিএনএ সুস্থ কিনা তা পরীক্ষার জন্যই এ্যানালাইসিস পদ্ধতি। এ পদ্ধতির দুটি কাজ। একটি হলো রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া রোগ চিহ্নিত করা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীর থেকে মাত্র দু’ সিসি রক্ত দরকার হয়। অন্যটি হলো গর্ভধারণের ১০ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুর ভ্রƒণ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। ভ্রƒণ থেকে কোরিয়োনিক ভিলাস নামে এক ধরনের পদার্থ নিয়ে তা আল্ট্র্রাসনোগ্রাম যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। রোগাক্রান্ত হলে মেডিক্যাল টারমিনেশন অব প্রেগন্যান্সি (এমটিপি) করে আক্রান্ত শিশুটির জন্ম প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ্যানালাইসিস পদ্ধতিতে মাত্র একদিনে দুটি পরীক্ষার ফলই পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়া রোগ একবার হয়ে গেলে তা আর সরানো যায় না। কেবল ভারতের দু-একটি হাসপাতালে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সুস্থ করে তোলা যায়। তবে এক্ষেত্রে অর্ধেক রোগীরই সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
×