ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল কোম্পানি বাজারে আনতে প্রণোদনা জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৯ মে ২০১৮

ভাল কোম্পানি বাজারে আনতে প্রণোদনা জরুরী

অপূর্ব কুমার ॥ বড় ও ভাল কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার একসঙ্গে কাজ করা উচিত। একইসঙ্গে প্রয়োজনে কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা এবং কর হার কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন এএএ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়দুর রহমান। দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। সিটি গ্রুপ, আকিজ গ্রুপের মতো বড় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে ওবায়দুর রহমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আসার সুবিধাগুলো বোঝাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কর রেয়াত সুবিধা, ঋণের মতো সুদ দেয়ার বাধ্যবাধকতা নেই, পরিচিতি বাড়ে ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে। যাতে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হয়। ইস্যু ম্যানেজারদের সহযোগিতায় দুর্বল কোম্পানি আসছে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টা সঠিক না। প্রত্যেক ইস্যু ম্যানেজারই সব ধরনের কমপ্লায়েন্স পূরণ করে একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনে। তাই শেয়ারবাজারে আসার সময় কোন কোম্পানিই দুর্বল থাকে না। তবে তালিকাভুক্তির কিছু উদ্যোক্তা/পরিচালকদের অসৎ উদ্দেশের কারণে কিছু কোম্পানি দুর্বল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যদি কোন উদ্যোক্তা/পরিচালক আইপিও ফান্ডের অপব্যবহার করে, টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলে তার দায়ভার ইস্যু ম্যানেজারের না। কারণ কোন উদ্যোক্তা/পরিচালক মনের খবর বোঝা সম্ভব নয়। গত বছরে সর্বনি¤œ ৭টি আইপিও অনুমোদনের বিষয়ে ওবায়দুর রহমান বলেন, গত ২০১৭ সালে ব্যাংকের সুদহার একক সংখ্যার ঘরে ছিল। যদি কম সুদে ব্যাংকের টাকা ঋণ হিসেবে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অনেক উদ্যোক্তাই পুঁজিবাজারের চেয়ে ব্যাংকের দিকে ঝুঁকবেন। সেটিও ঘটেছে। কারণ একটি কোম্পানিকে ‘এ’ ক্যাটাগরি ধরে রাখতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হয়। যা ব্যাংকের সুদহারের চেয়ে বেশি। সেই কারণে কম আইপিও জমা পড়েছিল। তবে ২০১৭ সালে যত ফাইল জমা ছিল, তাতেও আইপিওর সংখ্যা ৭টির বেশি হওয়া সম্ভব ছিল। বড় কোম্পানিগুলো কি শেয়ারবাজার আসার সুবিধা সম্পর্কে জানে না বলেই আসছে না বিষয়ে জানতে চাইলে অভিজ্ঞ এই মার্চেন্ট ব্যাংকার বলেন, প্রকৃতপক্ষে অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তারা ব্যবসাই বুঝে, কমপ্লায়েন্স বুঝে না। দেশে অনেক কোম্পানি আছে, যেখানে পেশাজীবী প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) নাই, এ্যাকাউন্টস ঠিক নেই ইত্যাদি সমস্যা আছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে আসলে অনেক রুলস-রেগুলেশনস, কমপ্লায়েন্স মানতে হয়। যা অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা মানতে চায় না। যে কারণে তারা শেয়ারবাজারে আসতে অনাগ্রহী। এজিএম পার্টির দ্ধারা নাজেহালের ভয়েও অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চায় না এমন অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ওবায়দুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এজিএম পার্টির ভয়ে উদ্যোক্তারা তাদের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে চায় না, এটা ঠিক না। এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের কথা বলার অধিকার আছে। তারা কথা বলবে। কিন্তু কেউ অনিয়ম করলে, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দেখতে পারে। যদি কোন উদ্যোক্তা এজিএমে অংশগ্রহণকারীদের বাড়তি ঝামেলা মনে করে তবে নিকটস্থ থানার পুলিশের সহায়তা নিতে পারে। শেয়ারবাজারে নতুন ইস্যু আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধার বিষয়ে তিনি মনে করেন সময়ক্ষেপণ সবচেয়ে বড় বাধা। একটি ইস্যু আনতে দেড় থেকে ২ বছর লেগে যায়। এক্ষেত্রে একটি কোম্পানির মোটিভ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ২ বছর পরে কোম্পানির ফান্ডের দরকার নাও লাগতে পারে। তাই উন্নত বিশ্বের মতো ফাইল জমা দেয়ার ৩ মাসের মধ্যে আইপিও অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে ইস্যু আনতে সময়ক্ষেপণের কারণ হিসাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ইস্যু ম্যানেজারদের দায়ী করা হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আপনাদের ভুল ধরিয়ে দেয়ার পরে সংশোধন করবেন এমন অপেক্ষায় থাকেন বলে অভিযোগ করে। এই বিষয়ে ওবায়দুর রহমান বলেন, ইস্যু ম্যানেজারদের কিছু সমস্যা আছে। তারা সব কমপ্লায়েন্স পরিপালন না করেও ফাইল জমা দেয়। তবে ইস্যু ম্যানেজাররা এখন সক্রিয়। তবে ভাল কোম্পানির ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স পরিপালনে কিছুটা শিথিল করা দরকার। এক্ষেত্রে একটি কোম্পানির টেক্স ফাইল দেখলেই বোঝা যায়, কোম্পানিটি কতটা ভাল। এছাড়া দ্রুত আনতে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ইস্যু ম্যানেজারদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। বসুন্ধরা পেপারসের কাট-অফ প্রাইস ৮০ টাকার বিষয়ে তিনি মনে করে এই দর কাক্সিক্ষত। এবং এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। একটি ব্র্যান্ড ইমেজ ও অন্যটি বিডিংয়ের সময় শেয়ারবাজারের উর্ধমুখী আচরণ। কারণ ওই সময়ে নতুন তালিকাভুক্ত শেয়ার আমরা নেটওয়ার্ক ও বিবিএস কেবলের দর ছিল ১৪০ টাকার ওপর। এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা সিমেন্টে নিয়মিতভাবে ব্যবসায় ভাল করছে। এছাড়া কোম্পানিটি নগদ ১৫ শতাংশের উপরে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে একই গ্রুপের বসুন্ধরা পেপারসে বিনিয়োগকারীদের আগৃহ সৃষ্টি হয়েছে। আর বসুন্ধরা পেপারসের বিডিংয়ের সময় শেয়ারবাজারে নতুন শেয়ারে ব্যাপক আগ্রহ ছিল ওই সময় অভিহিত মূল্যের শেয়ারগুলো ১০০ টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। যা বসুন্ধরা পেপারসের বিডিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বসুন্ধরা ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলেন মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিদেশে রফতানির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এ কোম্পানিটি বর্তমানে বাংলাদেশে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে এবং থাকবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। এএএ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট একসময় আইপিও আনার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে থাকলেও মাঝে কিছুদিন কম ইস্যু আনার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আসলে আমরা এখন মানসম্মত ও বড় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য কাজ করছি। একটি বড় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার ক্ষেত্রে বড় টিম লাগে এবং অনেক কাজ করতে হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটনকে শেয়ারবাজারে আনার কাজ করছে এএএ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
×