ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘাতময় হয়ে উঠবে বিশ্ব

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৯ মে ২০১৮

সংঘাতময় হয়ে উঠবে বিশ্ব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের পরমাণু চুক্তির বিষয়ে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি পূর্বসূরি বারাক ওবামার সময়ে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনতে পারেন। তবে তিনি আসলে সেটি করলে গুরুতর বৈশ্বিক সঙ্কট দেখা দেবে। সিএনএন। ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা হতে পারে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটাবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি সংঘাত বেঁধে যেতে পারে। ট্রাম্প এখন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরমাণু চুক্তি বাতিল করে ইরানসহ ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বের পথে যেতে পারেন। ২০১৫ সালে চুক্তিটি হওয়ার পর ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ক্রমাম্বয়ে শিথিল করা হয়েছিল। ট্রাম্প জানুয়ারি মাসেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন যে, তিনি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরবর্তী আদেশে সই করবেন না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন। তার মতে, এক দশকের জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। তেহরান যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে না পারে তার কোন নিশ্চয়তা এ চুক্তিতে নেই। ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে না আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বেড়েছে। ট্রাম্প এমন করতে পারেন যে তিনি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরবর্তী আদেশে সই করলেন না আবার নতুন করেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন না। এটি করলে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে অন্তত দর কষাকষির একটি পথ খোলা থাকে। ইউরোপের কূটনীতিকদের অনেকে মনে করেন ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরবর্তী আদেশে সই করবেন না। যদিও পরিণতিতে অবস্থা আরও জটিল হবে তবে ট্রাম্প সেটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেই মনে হয়। ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্যও একটি বড় মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হবে। কারণ তার পূর্বসূরি ওবামার সময়ে পররাষ্ট্র নীতির বৈশিষ্ট্য ছিল বহুপাক্ষিক। গত শতাব্দীর বড় একটা সময়জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পররাষ্ট্র নীতিই অনুসরণ করেছে। এছাড়া একটি বৈরী দেশের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করে অপর বৈরী দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পরমাণু ইস্যু নিয়ে আলোচনায় বসা কিছুটা অস্বাভাবিক দেখাবে। ট্রাম্প খুব শীঘ্রই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে কথা রয়েছে। জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব এ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের ওই চুক্তিটি ইরান ও ছয়টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল। ট্রাম্প মনে করেন এটি ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চুক্তি। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য এই চুক্তি জরুরী। এমন কোন কারণ ঘটেনি যে কারণে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ইরান জরুরী ভিত্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচী আবার শুরু করতে পারে। চুক্তির সমর্থকরা বলছেন, চুক্তিটি করার মাধ্যমে তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা পিছিয়ে গেছে। সমালোচকদের মতে ইরান যদিও সেন্ট্রিফিউজ তৈরি বন্ধ ও ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে, তারপরও চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি। চুক্তি বহাল থাকা অবস্থাতেই তেহরানে সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও চুক্তিটির বিরোধী। তাই ট্রাম্পের পক্ষে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়।
×