ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বাসতন্ত্রের জীবাণু

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৯ মে ২০১৮

শ্বাসতন্ত্রের জীবাণু

শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল জীবাণুর আক্রমণ বাড়ছে। এই আক্রমণ হতে রেহাই পাওয়া সহজসাধ্য নয়, যে কোন বয়সীর জন্য। তবে প্রতিবছর এই জীবাণুর মাধ্যমে দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু আক্রান্ত হচ্ছে। এই হিসাবে বলা হয়েছে, সারাদেশে বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণকারী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর দুই-তৃতীয়াংশ মারা যায় এই ভাইরাসে। আর ঢাকায় প্রতিবছর প্রতিটি শিশু গড়ে এক দশমিক পাঁচবার শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয়েছে। বয়সী মানুষও বিভিন্ন ভাইরাস জীবাণুর আক্রমণ হতে রেহাই পাচ্ছে না। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ১৮৬ জন রোগীকে পরীক্ষা করে একশ’ জনের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এক গবেষণায় পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চেয়ে শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সময় থেকে রোগীদের ক্লাস্টার অনুসন্ধান এবং গবেষণাগারের পরীক্ষায় রোগের কারণ নিশ্চিতকরণে তিন থেকে দশ দিন সময় লাগে। আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ রোগসমূহের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় প্রজন্মের আগে এগুলো চিহ্নিত করার সম্ভাবনা কম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, যত তাড়াতাড়ি এই রোগ ধরা যাবে, তত তাড়াতাড়ি তা নিরাময় করা যাবে। শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, এ্যাডিনোভাইরাস, শ্বাসতন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-১, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-২ ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-৩। এসব রোগের নাম সাধারণ কেন, অনেক শিক্ষিতজনেরও অজানা। অনেকে রোগের লক্ষণ ও পূর্বাভাস সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকায় যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না। অসুখের মাত্রা বেড়ে গেলে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসায় গড়ে খরচ হয় প্রায় সাত হাজার টাকা, যা নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য অত্যধিক ব্যয়বহুল, অনেকের পক্ষে অর্থ যোগাড় করাও সম্ভব হয় না। ফলে শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু দুর্ভোগ পোহায় এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে। কিন্তু এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কোন আয়োজন কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। শিশুমৃত্যুর হার রোধ করার জন্য বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এই রোগ নিরসনে তেমন কোন প্রকল্প বা পরিকল্পনার আভাসও মিলছে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মতে, ওষুধবিহীন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যেমন হাঁচি, কাশি প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। এছাড়া এন্টিভাইরাল ওষুধ ও ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। আর শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা এবং সম্ভব হলে শ্বাসতন্ত্রজনিত সিনসিশিয়াল ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বাড়তি ইন্টারভেনশন চালু করা যেতে পারে। এই রোগের উপসর্গ হচ্ছে, ২১ দিনের বেশি জ্বর এবং কাশি কিংবা গলা ব্যথা থাকলে বুঝতে হবে শ্বাসতন্ত্রজনিত মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছে। আর মারাত্মক নিউমোনিয়া রোগীর বুক দেবে যাবে, বুকে শব্দ হবে গড় গড়, খিঁচুনি হবে। পান করতে প্রকাশ করবে অপরাগতা দেখা দেবে অচেতনতা এবং বমি হবে। মূলত, অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশ, বিভিন্ন কারণে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে একটি শিশু শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রকম অসুখ দুরারোগ্য নয়। তবে সংক্রমিত হলে এর পরিধি বাড়তে থাকে। যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না গেলে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে না। এই অসুখ থেকে শিশুসহ সব বয়সীদের সুস্থ করার জন্য দেশের হাসপাতালগুলোতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। সেবাখাতকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এই অসুখের নিরাময়ও একটি পদক্ষেপ।
×