ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রচার অব্যাহত রাখবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ মে ২০১৮

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রচার অব্যাহত রাখবে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। তবে আপাতত কৌশল পরিবর্তন করে হাকডাক না করে চুপচাপ গণসংযোগ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিএনপি হাইকমান্ড মনে করছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও আওয়ামী লীগ কৌশলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রেখেছে। তাই বিএনপি নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রাখলে আর শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে নির্বাচনের পক্ষে রায় এলে আওয়ামী লীগ সুবিধা পেয়ে যাবে। তাই এ নির্বাচনের বিষয়ে আদালতের চূড়ান্ত আদেশের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রচার বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। তাই যে যার মতো করে প্রচার চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নিতে বলা হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে এমন প্রত্যাশা রয়েছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আর দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলরদের পক্ষে প্রচারে নেমে তারা সাড়াও পেয়েছে আশানুরূপ। এ জন্যই বিজয়ের বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা আশাবাদী হয়ে ওঠে। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলামের রিটের প্রেক্ষিতে ৬ মে হাইকোর্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলে বিএনপি শিবিরে হতাশা নেমে আসে। আদালতের এ আদেশের পর পর গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের বিক্ষোভ দমাতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে আদালতের আদেশের পর নির্বাচন কমিশনও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত করে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারসহ সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিশ্চিত পরাজয় টের পেয়ে সরকার আদালতের মাধ্যমে এ নির্বাচন স্থগিত করেছে। সেই সঙ্গে রিটকারী সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। অবশ্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষোভ প্রকাশের পর বিএনপি এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে তেমন সুবিধা আদায় করতে পারেনি। এদিকে নির্বাচন হলে নিজের বিজয় নিশ্চিত মনে করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকার ৭ মে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করেন। ৮ মে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও এ বিষয়ে আপীল করেন। আর নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে নোটিস না দেয়ায় নির্বাচন কমিশনও সংক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও শীঘ্রই আপীল করা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সংবিধানের ৭ ধারার ১২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে এমন নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিস এবং শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোন আদালত অন্তবর্তীকালীন বা অন্য কোন আদেশ বা নির্দেশ দেবেন না। এ বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দিন বলেছেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত করার আগে আমরা কোন নোটিস পাইনি, আমাদের শুনানির জন্য সময়ও দেয়া হয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী থাকলেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তার মুক্তি নিয়ে জোরালো কোন কর্মসূচী না দিয়ে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দলের নেতাকর্মীরা। দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচরে পর জাতীয় নির্বাচনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে এমনটি মাথায় রেখে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করে তারা। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয় পেতে বিএনপি নানামুখী কৌশল নেয়। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদেরও এ নির্বাচনে সক্রিয় করা হয়। কিন্তু ৬ মে আদালতের আদেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ হন। প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বর্তমানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ওই বছরই ১৫ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুজ্জামান। তবে এর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। তবে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করতে চায় না দলটি। আর এ জন্যই গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় তারা। বিশেষ করে রাজধানীর অতি নিকটে হওয়ায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে প্রাধান্য দেয়। তাই আদালতের চূড়ান্ত রায়ে শেষ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হলে বিএনপি তাতে জয় পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে। উল্লেখ্য, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ৬ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। সেই সঙ্গে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করে জারি করা গেজেট এবং সম্প্রতি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। আদালতের আদেশ গণমাধ্যমে দেখার পরপরই গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়ার কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করার জন্য বিএনপির মেয়র প্রার্থী দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার ৭ মে আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অনুমতি নেন। পরদিন ৮ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ওপরে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও আপীল করেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর আবেদন শুনানির জন্য আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আপীল আদালতে এ আবেদনের ওপর আজ বুধবারই শুনানি হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যখনই হোক বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। ইতোমধ্যেই এ নির্বাচনে স্থগিতাদেশের বিষয়ে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে সে বিষয়ে আপীল করা হয়েছে। আমরা আশা করব উচ্চ আদালত নির্বাচনের পক্ষে রায় দেবে। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের দলের প্রার্থীর পক্ষে সরব থাকতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করছি নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে।
×