ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেক ও মঞ্জুর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ মে ২০১৮

খালেক ও মঞ্জুর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে মেয়র পদের প্রধান দুই প্রার্থীর তর্কযুদ্ধ অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ বেড়ে চলেছে। বিএনপি মনোনীত ২০ দলের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেছেন নির্বাচন প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা খুলনায় অবস্থান করছেন। তিনি ও তার দলের নেতারা অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, বিএনপি ঢালাওভাবে মিথ্যাচার করছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিনি (খালেক) পৌরসভার কমিশনার, সংসদ সদস্য ও মেয়র পদে নয়বার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কখনও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেননি, প্রশাসনকে কোন সন্ত্রাসীর বিষয়ে সুপারিশও করেননি। বরং কতিপয় বিএনপি নেতা যে অভিযোগ করছেন, তারাই চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতা। যার আয়ের কোন উৎস নেই, তিনি কিভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন তা নগরবাসীর অজানা নয়। মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেক আরও বলেন, আওয়ামী লীগ অরাজকতা নয় বরং জনগণের রায়ে বিশ্বাসী। বিএনপি বরাবরই মনগড়া কিছু কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন চান, আবার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আসামিদের গ্রেফতার করলে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। এটা নিত্যন্তই হাস্যকর। তিনি আগামী ১৫ মে ভোট বিপদের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দানকারী দল বিএনপিকে উপযুক্ত জবাব দিতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি মঙ্গলবার নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও মতবিনিময়কালে নগরবাসীর উদ্দেশে এসব কথা বলেন। সকাল ৮টায় তিনি নগরীর ফেরিঘাট জিন্নাহ মসজিদ থেকে শুরু করে ফারাজিপাড়া লেন, ফারাজিপাড়া মেইন রোড, শেরে বাংলা রোড, শেখপাড়া বাজারসহ ওয়ার্ডে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় মেয়র প্রার্থী খালেকের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাসদের মহানগর সভাপতি ও ১৪ দল নেতা রফিকুল হক খোকন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মলিক আবিদ হোসেন কবির, বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ, ডাঃ কাজী হামিদ আজগর, নগর আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শহিদুল হক মিন্টু, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ কামাল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চ.ম মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মীর মোঃ লিটন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আলহাজ মোঃ বাদশা হাওলাদার, সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদা বেগম, যুবলীগ নেতা শফিকুর রহমান পলাশ, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন, শেখ মোহাম্মদ আলী, রেজাউল করিম সবুজ, মোক্তার হোসেন, মিলকন হাসান রুমি, জনি বসু প্রমুখ। এদিকে মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণকালে ও পথ সভায় বিএনপি মনোনীত ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারা খুলনায় অবস্থান করে সিটি নির্বাচন প্রভাবিত করার নানা চক্রান্ত করছে। তিনি এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। গণসংযোগে গিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জু আরও বলেন, নগরবাসীকে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখাবেন না। মিথ্যা আশ্বাসের ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। নগর জীবনের সঙ্কট সমস্যা রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং কেসিসি, প্রশাসন, সাধারণ জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, এই শহরে কারা মাদক ব্যবসা করে, কারা তাদের পৃষ্ঠপোষক-গডফাদার, কারা সন্ত্রাসী তা সবার জানা আছে। তিনি নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য করতে তার গ্রীন সিটি- ক্লিন সিটি সেøাগান গ্রহণ করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে কেসিসি নির্বাচন। একে বাধাগ্রস্ত করে জনরায়কে অবজ্ঞা না করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা এ্যাডভোকেট শাহ আলম, জেপি নেতা গোলাম মোস্তফা, বিজেপি সিরাজউদ্দিন সেন্টু, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন আলী, বিএনপি নেতা মোলা আবুল কাশেম, ফখরুল আলম, শেখ আব্দুর রশিদ, ইকবাল হোসেন খোকন, ইউসুফ হারুন মজনু, মোঃ শাহজাহান, সাদিকুর রহমান সবুজ, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ জামিরুল ইসলাম, জামাল হোসেন, মেহেদী হাসান সোহাগ, কাজী নজরুল ইসলাম, মুসা খান, আব্দুল হাকিম, আবু সাঈদ, আব্দুল আজিজ, সাইফুল ইসলাম, সুমন, সোহেল, সাঈদ, আনোয়ার, বেলাল, মিজান প্রমুখ। ২৪ বছর নগরবাসীকে ধোঁকা দিয়েছে বিএনপি ॥ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ ওহিদুজ্জামান বলেছেন, বিএনপির মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমান ‘গ্রীন ও ক্লিন’ সিটি গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন কিন্তু ১৭ বছরেও তিনি সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে ২ বছর এবং বর্তমানে ৫ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপির নেতা। কিন্তু সবুজ ও পরিচ্ছন্ন নগরী হয়নি। দীর্ঘ ২৪ বছর নগরবাসীকে ধোঁকা দিয়েছে বিএনপি। এখন আবারও ‘গ্রীন ও ক্লিন’ সিটি’র স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিএনপির প্রতারণা বিষয়টি বুঝতে পেরে নগরবাসী এবার নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আধুনিক খুলনা গড়ার রূপকার তালুকদার আব্দুল খালেককে এবার মেয়র হিসেবে দেখতে চায় নগরবাসী। তিনি মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগকালে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমবান্ধব সরকার। বিএনপির আমলে বন্ধ করে দেয়া মিল-কল-কারখানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালু করেছেন। কাজেই উন্নয়নের স্বার্থে তালুকদার আব্দুল খালেকের বিকল্প নেই। গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এস এম মোজাফ্ফর রশিদী রেজা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এস এম রুহুল আমিন বাপ্পী, জেলা সভাপতি মোঃ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ হোসেন, যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক, ওমর ফারুক, হাজী শিকদার ইব্রাহিম, শুকুর আলী প্রমুখ। খুলনায় নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ॥ ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কু-ুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ সময় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছিলেন। গণসংযোগ ও পথ সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা সিটি নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। এ সময় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সরকার তাদের নিশ্চিত পরাজয় ঠেকাতেই আজ্ঞাবহ আদালতকে ব্যবহার করে গাজীপুর নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। এর আগে ঢাকার নির্বাচনও স্থগিত করিয়েছিল। খুলনাতেও ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নগরবাসীর আস্থা ও বিশ্বাসের শীর্ষে অবস্থান করছেন। প্রার্থী মঞ্জু ও কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীর যে প্রান্তেই ভোট চাইতে যাচ্ছেন, সেখানেই জনতার ঢল নামছে। এ দেখে শাসক দলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা খুলনার নির্বাচন নিয়েও টালবাহানা করতে পারে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য সাধারণ জনগনের প্রতি আহ্বান জানান। কেসিসি এলাকায় যানবাহন চলাচল ও বহিরাগত অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন কেসিসি) নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহন চলাচল ও বহিরাগত অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কেসিসি নির্বাচন প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ জারি করেছেন। কেএমপি কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেসিসি নির্বাচন উপলক্ষে ১৪ মে রাত ১২টা থেকে ১৫ মে রাত ১২টা পর্যন্ত সিটি এলাকায় বেবিট্যাক্সি/অটোরিক্সা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও ট্রেম্পো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ঢাকার ৩০ এপ্রিল ১৮’র নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৩ মে রাত ১২টা থেকে ১৬ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেএমপি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে কেসিসির বাসিন্দা নয় বা ভোটার নয় শহরে অবস্থান করছেন তাদেরকে ১২ মে রাত ১২টার আগে কেসিসি এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ৯ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত অস্ত্রসহ চলাচল, অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
×