ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার আগেই রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে নিরাপদ এলাকা তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ মে ২০১৮

বর্ষার আগেই রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে নিরাপদ এলাকা তৈরি হচ্ছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্ষা মৌসুমের আগেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে কক্সবাজারে নতুন এলাকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে সেখানে আশ্রয় দেয়া হবে। মঙ্গলবার ঢাকার ইউএনএইচসিআর অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এই জমির অনেক এলাকা পাহাড় হওয়ার কারণে এর ক্ষুদ্র একটি অংশ বর্ষার আগেই নিরাপদ করে তৈরি করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই ১২ একর জমি নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা ৫০০ নতুন পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আইওএম, ইউএনএইচসিআর ও ডব্লিউএফপি যৌথভাবে কাজ করছে। নতুন এলাকা প্রস্তুতকরণে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক নিযুক্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেছেন, বছরের এই সংকটপূর্ণ সময়ে শরণার্থীদের নিরাপদ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও সহযোগী সংস্থাগুলো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে যেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করা যায়। আইওএমের কক্সবাজারের জরুরী সমন্বয়ক ম্যানুয়েল মারকুয়েস পেরেইরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রথম এলাকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে জীবন রক্ষা হবে। এছাড়া বর্ষাকাল আসন্ন, তাই আমরা আরও নতুন জমি প্রস্তুত করার জন্য দ্রুত কাজ চালিয়ে যাব। ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার অপারেশনের প্রধান কেভিন জে এ্যালেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের এই উচ্চাকাক্সক্ষী প্রকল্পের পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে পেরে আমরা খুবই খুশি। এই কাজে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তার জন্যও একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ভূমিধস ও বন্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোতে বর্ষা মৌসুমের বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই নিরাপদে সরানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে। ডব্লিউএফপির জরুরী সমন্বয়ক পিটার গেস্ট বলেছেন, ডব্লিউএফপি প্রকৌশলীরা সেতু নির্মাণ, রাস্তা তৈরি, নিরাপদ স্থানান্তরের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ, বাঁধ শক্তিশালীকরণ ও ড্রেনের রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছে। বর্ষাকালে যদি কোন স্থান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তালে সব শরণার্থীদের কাছে খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আইওএম, ইউএনএইচসিআর ও ডব্লিউএফপি সতর্ক করেছে যে, অর্থায়নের বড় ধরনের হ্রাসের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সেবা সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা রোহিঙ্গাদের জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করা সংস্থাগুলোর যৌথ সাড়াদান আবেদনে এই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সহায়তা পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ অর্থায়ন হয়েছে। এখানে আরও ৭৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অপূর্ণ রয়েছে। কক্সবাজারে কাজ করা এই তিন সংস্থার প্রধানরা বর্ষা মৌসুমের আগেই জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো এগিয়ে নেয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
×