ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

বিএনপির পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীরও আপীল॥ আজ শুনানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৯ মে ২০১৮

বিএনপির পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীরও আপীল॥ আজ শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের দেয়া তিন মাসের স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের করা আবেদনের শুনানির জন্য আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বার জজ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। আজ বুধবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। এদিকে বিএনপির প্রার্থীর পর এবার আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার চেম্বার জজে আপীল শুনানিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন। অন্যদিকে রিট আবেদনকারী শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। এর আগে গত সোমবার বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে আপীল আবেদন করেন এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। ওই দিন দুপুরে তারা শুনানির জন্য চেম্বার জজ আদালতের বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর খাস কামরায় গেলে বিচারক বিষয়টি আজকের কার্যতালিকার প্রথম দিকে রেখে দিন ধার্য করেন। উল্লেখ্য, গত ৬ মে ভোটের মাত্র ৯ দিন আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত ৬টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেন। শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৬টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সাভারের শিমুলিয়া এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ রিটটি করেন। জাহাঙ্গীর আলমের আবেদন ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের ওপরে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রার্থীর পর এবার আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। মঙ্গলবার তার আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়েছে। চেম্বার বিচারপতির আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। আপীলের সিদ্ধান্ত ইসির ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ওপর দেয়া আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব হেলালুদ্দিন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীলের জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন শুনানির আগে পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার কথা। কিন্তু ইসি নোটিস পায়নি। ইসিকে যথেষ্ট সময় দেয়াও হয়নি। গত রবিবার সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয় হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ। আগামী ১৫ মে এই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজের এক রিট আবেদনে আদালত এই স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। স্থগিতাদেশের পরেই বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলা হয়ে নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সরকার গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় আদালতের ওপর তাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই। স্থগিতের একদিন পরেই বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করেছেন। এখন তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর একদিন পরেই আওয়মী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল আবেদন করেন। দুই প্রার্থীর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন আপীলের প্রস্তুতির কথা জানালো। ইসি সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনে গণমাধ্যম কর্মীদের দায়িত্ব পালন নিয়ে নীতিমালা তৈরির বিষয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে আদালতের স্থগিতাদেশ এসেছে তা আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছে। তারা বলেছে, কোন আইনী জটিলতা নেই, মামলা নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগের সব ‘ক্লিয়ারেন্স’ পেয়েই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরেও নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এজন্য একজন আইন পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কীভাবে আইনী লড়াই করা যায় তা নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন। সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এমন নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিস ও শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোন আদালত অন্তর্বর্তী বা অন্য কোন আদেশ বা নির্দেশ দেবেন না।’ সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদের ৭ ধারা তুলে ধরে সচিব বলেন, উচ্চ আদালতের অবারিত ক্ষমতা রয়েছে। অনেক সময় এ ধরনের ঘটনা হয়ে থাকে। কিন্তু সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি, নোটিস পাইনি। আপীলে আইনী লড়াইয়ে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। তিনি জানান, রবিবার আদালতের নির্দেশনা পেয়েই মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভোটের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের আদেশের সার-সংক্ষেপ সোমবার বিকেলে হাতে পেয়েছে কমিশন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার কার্যক্রম বন্ধের লিখিত নির্দেশও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান খন্দকার, এসএম আসাদুজ্জামান, ফরহাদ আহাম্মদ খান ও উপ-সচিব ফরহাদ হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×