ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৯ মে ২০১৮

রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই বাসের প্রতিযোগিতায় হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব আহম্মেদের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও বিআরটিসির আইনজীবী মুনিরুজ্জামান। হাইকোর্টের আদেশের পর রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন এবং রাজীবের গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই হিসাবে এক মাসের মধ্যে দুই বাস কর্তৃপক্ষ ২৫ করে ৫০ লাখ টাকা জমা দেবেন। টাকা জমা দেয়ার পর আগামী ২৫ জুনের মধ্যে আদালতকে দুই কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করবেন। তিনি আরও বলেন, ২৫ জুন বিষয়টি আবার আদালতে এলে তখনই বাকি ৫০ লাখ টাকার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারে আদালত। গত ৩ এপ্রিল কাওরান বাজারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে বিআরটিসির যাত্রী রাজীবের ডান কনুইয়ের ওপর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার মাথার সামনে-পেছনের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ছাড়াও মস্তিষ্কের সামনের দিকে আঘাত লাগে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল রাতে সরকারী তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে আদালত ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়ার পর আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে তা নিয়ে আপত্তি জানান বিআরটিসির আইনজীবী মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কোন ধরনের মূল্যায়ন না করেই যেন ক্ষতিপূরণের আদেশটি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিআরটিসি বাসের অবহেলাজনিত কোন দায় ছিল কিনা- সেটা মূল্যায়ন করা জরুরী। বিআরটিসি যে কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত যদি সেটা সঠিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়।’ এ আইনজীবী বলেন, মোটর ভ্যাহিকেল অর্ডিন্যান্সের ১২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের পরিবারের করা মামলায় সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে ক্ষতিপূরণের আদেশ হয়েছে। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) আদালত ওই অনুচ্ছেদ ও আইনী প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে এ আদেশ দিয়েছে। ফলে আমি মনে করি আজকের (মঙ্গলবার) এ আদেশটি অনাকাক্সিক্ষত। আদালতের এ আদেশের বিষয়ে তিনি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে তিনি নিজে মনে করেন, হাইকোর্টের ওই আদেশ আপীলযোগ্য। দুই বাসের চাপায় ঝুলতে থাকা রাজীবের হাতের ছবি সংবাদমাধ্যমে এলে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ৪ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের চিকিৎসা ব্যয় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহন করতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেয়া হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে রুল দেয় আদালত। ওই রুল শুনানির আগেই রাজীবের মৃত্যু হলে রুহুল কুদ্দুস কাজল ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আদালতে একটি সম্পূরক আবেদন করেন। পটুয়াখালীর বাউফলের ছেলে রাজীব যখন তৃতীয় শ্রেণীতে, তখনই মারা যান তার মা। বাবাও চলে যান রাজীব অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পর। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে খালার বাসায় থেকে, কঠোর পরিশ্রমে স্নাতক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওই তরুণ। তিতুমীর কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করে আর আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় নিজের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। রাজীবের দুই ভাই মেহেদী হোসেন ও আবদুল্লাহ যাত্রাবাড়ীর তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের বিষয়ে শুনানির জন্য খালা জাহানারা পারভীনের সঙ্গে তারাও মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত ছিল। রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ রায়ে আমরা খুশি। কোন চালকের কারণে আর যেন কারও প্রাণ ঝরে না পড়ে। আমরা রাজীবকে হারিয়েছি, রাজীবের মতো ঘটনা আর কোন পরিবারে যেন না ঘটে। রাজীবের ভাই মেহেদী হাসান বলে, ‘আমরা ভাইকে হারিয়েছি। আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণে ভাইয়ের স্থান পূরণ হবে না। তবে আদালতের এ নির্দেশের মাধ্যমে অন্যরা সচেতন হবে।
×