ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন্য ভাবনায় ডায়াবেটিস

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ৮ মে ২০১৮

অন্য ভাবনায় ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে, অথচ ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে ডায়াবেটিস নেই এমন ব্যক্তির মূলত তেমন কোন পার্থক্য নেই- শুধু জীবনযাপন প্রণালীতে কিছু বিধিনিয়েধ ছাড়া। তা হলে চলুন এবার আমরা জেনে নিই কী কী অন্য ভাবনা রয়েছে আমাদের মাঝে। কেউ কেউ ভাবেন- ডায়াবেটিস একটি ছোঁয়াচে রোগ। অথচ এমন ধারণা ভুল। এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়। কেউবা মনে করেন- মিষ্টি খেলে বা টেনশন করলে ডায়াবেটিস হয় ! এ ধারণাও সঠিক নয়। অনেক সময় চিকিৎসক বলতে পারেন- আপনার হাল্কা ডায়াবেটিস হয়েছে! অথচ সত্যি কথা হলো- ‘হাল্কা বা মাইল্ড’ ডায়াবেটিস বলে কোন কথা নেই। বলতে হবে- ডায়াবেটিস আছে কী নেই (ণবং ড়ৎ হড়ঃ)। কেউ কেউ ডায়াবেটিসে খেলাধুলা করতে বা গাড়ি চালাতে নিষেধ করেন! যদি তাই হয় তবে স্টিড রেডগ্রেইভ কিংবা ওয়াসিম আকরামের মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়দের কথাই ভাবুন! তাঁরা দুজনেই ডায়াবেটিস রোগী। আসলে ডায়াবেটিসে খেলাধুলা করাকে বরং উৎসাহ দেয়া উচিত। এতে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক হয়। দায়িত্বশীল থাকলে ও রক্ত-শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে গাড়ি চালাতেও কোন বাধা নেই। তবে বিশেষ কিছু সতর্কতা নেয়া জরুরী। যেমন প্রয়োজন মতো খাবার সঙ্গে রাখা, মদ্যপান- ধূমপান না করা, একটানা বেশিক্ষণ গাড়ি না চালানো, মাঝে-মধ্যে গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেয়া, খুব লম্বা সফর ও রাতে গাড়ি না চালানো, ভারীযান যেমন মালবাহী ট্রাক, লরি, যাত্রীবাহী বাস ইত্যাদি এড়িয়ে চলা। কেউবা ভাবেন- ডায়াবেটিসে আস্তে আস্তে চোখ নষ্ট হয়ে যায়! ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের পর খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম মানলে, নিয়মিত হাঁটলে ও ডায়াবেটিসের প্রয়োজনীয় ওষুধ খেলে কিংবা ইনসুলিন নিলে এমনটি কেন হবে? তবে হ্যাঁ- এ কথা মনে রাখা দরকার যে, রক্তে- শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শুধু চোখ কেন হৃদপিণ্ড (ঐবধৎঃ), স্নায়ু (ঘবৎাব), ত্বক (ঝশরহ)-সহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতিসাধন হতে পারে। কেউ কেউ সেনাবাহিনীতে ডায়াবেটিস রোগীকে চাকরি করতে বাধা দেন! অথচ একজন ডায়াবেটিস রোগী স্বাভাবিকভাবে সেনাবাহিনীতে দায়িত্বশীল হিসেবে তাঁর কর্তব্য পালন করতে পারেন। কেউ কেউ দাবি করেন- হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল মেডিসিন ডায়াবেটিস সারায়! কীভাবে সারাবে আগে নিজেই ভাবুন। কেননা এটি তো হরমোনজনিত একটি রোগ। এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ইনসুলিন নামক হরমোন- যা তৈরি হয় অগ্ন্যাশয় থেকে। আর ডায়াবেটিস হয় এই ইনসুলিন তৈরি কম হলে বা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা কমে গিয়ে সেটা শরীরে ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে। ডায়াবেটিস হওয়ার বিষয়টিকে একটি গাছের সঙ্গে তুলনা করা যাক। কোন গাছ যখন অনেক দিনের হয়ে যায় কিংবা গাছ লাগিয়ে সেটার যদি সঠিক পরিচর্যা করা না হয় তাহলে কী ওই গাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফুল-ফল পাওয়া যায়? ঠিক তেমনি শরীরের যে কোন সমস্যায় ইনসুলিন তৈরি ও কাজে যদি একবার বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং রক্তের গ্লুুকোজের পরিমাণ সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাহলে সেটা আর সারানো যায় না। অতএব, হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল মেডিসিনে ডায়াবেটিস সারে এমন দাবি কেউ করলে বুঝবেন- হয় তিনি মিথ্যা বলছেন কিংবা ডায়াবেটিস সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের অভাব রয়েছে। কেউবা বলেন- করলা, উচ্ছে, মিথি বা নিমপাতা খেলে ডায়াবেটিস সারে! এমন ধারণাও ভুল। কারণ, ডায়াবেটিস সারাজীবনের একটা রোগ। একবার হয়ে গেলে কোনভাবেই এটাকে সারানো যায় না। সঠিক নিয়ম মেনে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় মাত্র। তেতো খাদ্যের রস খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয় এ রকম ধারণা কম বেশি প্রচলিত থাকলেও এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই যে, এগুলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এ কথা সত্যি যে- করলা, উচ্ছে, মেথি বা নিমপাতা ডায়াটারি ফাইবারযুক্ত। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হজমে সহয়তা করতে, নানা প্রকার চর্মরোগ প্রতিরোধে বিভিন্নভাবে এসব খাবার উপকারী। মেথি রক্তে কোলেস্টরল কমাতে ভূমিকা পালন করে। কারণ, এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। তাই, কোন ডায়াবেটিস রোগী তেতো খাবার খেয়ে মনের দিক থেকে ভাল থাকলে তিনি নিয়মিতভাবে এগুলো খেতে পারেন। তবে চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে নয়। কেউ কেউ দাবি করেন- স্পেশাল ডায়াবেটিক ডায়েট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল! এ কথাটি সত্য নয়। বাজারে ‘ডায়াবেটিক’ সন্দেশ, বিস্কুট, জ্যাম, চকোলেট ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। এসব খাবারের গায়ে চমকপ্রদ কিছু লেখা দেখে স্বাভাবিকভাবেই একজন ডায়াবেটিস রোগীর খেতে মন চায়। অথচ ব্রিটিশ ডায়াবেটিক এ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিক খাবারে বাড়তি তেমন উপকার কিছু নেই। এমন খাবার পরিহার করা উচিত। ডাঃ শাহজাদা সেলিম এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম) এমএসিই (ইউএসএ) হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
×