ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেএফএ অনুর্ধ-১৪ জাতীয় বালিকা ফুটবল ফাইনাল আজ

টাঙ্গাইল না ঠাকুরগাঁও- কে জিতবে প্রথম শিরোপা?

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৮ মে ২০১৮

টাঙ্গাইল না ঠাকুরগাঁও- কে জিতবে প্রথম শিরোপা?

রুমেল খান ॥ জাপান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনে (জেএফএ) আর্থিক সহযোগিতায় গত ২৪ এপ্রিল থেকে দেশের ছয় ভেন্যুতে ৩৫ দল (৫টি দল নাম প্রত্যাহার করে নেয়) নিয়ে শুরু হয়েছিল ‘জেএফএ অনুর্ধ-১৪ বালিকা জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর আঞ্চলিক পর্ব। পারে চূড়ান্ত পর্বের গ-ি পেরিয়ে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফাইনাল ম্যাচ। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বেলা সাড়ে ৩টায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে টাঙ্গাইল বনাম ঠাকুরগাঁও জেলা। এটি মূলত ট্যালেন্ট হান্ট টুর্নামেন্ট। এখান থেকে বাছাই করে প্রতিভাময়ী ফুটবলারদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যারা একসময় বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো হয় নকআউট পদ্ধতিতে। পরের পর্বের খেলাগুলো হয় লীগ পদ্ধতিতে। মূলত খরচ কমাতেই এই ব্যবস্থা। টুর্নামেন্টের কো-স্পন্সর ওয়ালটন গ্রুপ। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তারা। সোমবার প্রি-ফাইনাল ম্যাচ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কনফারেন্স রুমে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সদস্য ও মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ওয়ালটন গ্রুপের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর (গেমস এ্যান্ড স্পোর্টস) এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন), বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, দুই দলের অধিনায়ক, কোচ এবং ম্যানেজাররা। ঠাকুরগাঁও দলের কোচ জয়নুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৫ আসরে আমরা ফেয়ার প্লে ট্রফি এবং ২০১৭ আসরে রানার্সআপ ট্রফি পেয়েছিলাম। এবার আমাদের লক্ষ্য ভাল খেলে চাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করা। দলের অধিনায়ক ও এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বিথীকা কিসকুর অভিমত, ‘এই পর্যন্ত আসতে পেরে আমরা গর্বিত। ফাইনালে ভাল খেলার প্রত্যাশা করছি। গতবার রানার্সআপ হয়ে যে কষ্ট পেয়েছিলাম, এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই কষ্ট ভুলতে চাই।’ টাঙ্গাইলের কোচ গোলাম রায়হান বাপন বলেন, ‘২০১৫ আসরের ফাইনালে খেলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই অপূর্ণতা ঘোচাতে চাই। এজন্য সবার কাছে দোয়া চাইছি।’ দলের অধিনায়ক-গোলরক্ষক ফারজানা খানমের ভাষ্য, ‘অনেক যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। ফাইনালে সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলব। দু’দলই সমান ফেবারিট। প্রতিপক্ষকে সমীহ করছি।’ দলের ম্যানেজার কামরুন্নাহার খান মুন্নী বলেন, ‘দলের মেয়েরা শিরোপা জেতার বিষয়ে দারুণ আত্মবিশ^াসী।’ ফাইনাল ম্যাচটি হবে ৭০ মিনিটের (৩৫+৩৫ মিনিট)। ১০ মিনিটের বিরতি থাকবে। নির্ধারিত সময়ের খেলা অমীমাংসিত থাকলে সরাসরি টাইব্রেকারে হবে। মজার ব্যাপারÑ দুই ফাইনালিস্ট দলই আঞ্চলিক পর্বে খেলে একই গ্রুপে! টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পর্বের খেলায় শেরপুরকে ৬-০, গাজীপুরকে ১০-০, ময়মনসিংহকে ২-০; চূড়ান্ত পর্বে মাগুরাকে ৮-০, ঠাকুরগাঁওকে ৩-১, রাজশাহীকে ৪-০ এবং রংপুরকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসে। সবমিলিয়ে তারা করে ৩৮ গোল। হজম করে মাত্র ২ গোল, যা সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার কৃতিত্ব। ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পর্বের খেলায় দিনাজপুরকে ১২-০ এবং কুড়িগ্রামকে ৫-০ গোলে হারালেও সেমিতে রংপুরের কাছে ০-২ গোলে হেরে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে চূড়ান্তপর্বে নাম লেখায়। চূড়ান্ত পর্বে তারা রাজশাহীর সঙ্গে ০-০ গোলে ড্র করে। আর টাঙ্গাইলের কাছে ১-৩ গোলে হেরে যায়। এরপর মাগুরাকে ৩-০ এবং খুলনাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। সবমিলিয়ে তারা করে ২৪ গোল। হজম করে ৫ গোল। সর্বশেষ ২০১৭ আসরের চূড়ান্ত পর্বের সেমিফাইনালে টাঙ্গাইল টাইব্রেকারে ৩-৪ গোলে হেরে গিয়েছিল এই ঠাকুরগাঁওয়ের কাছেই। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে তারা। এর আগে ২০১৫ সালে ফাইনালে তারা ময়মনসিংহের কাছে ০-২ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল। একই অবস্থা ঠাকুরগাঁও দলেরও। এর আগে ২০১৭ সালের ফাইনালে ময়মনসিংহের কাছে ০-৩ গোলে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিল তারা। এছাড়া দু’দলের মধ্যে আরেকটি সাদৃশ্যও আছে। উভয় দলেই আছে গত আসরে খেলা ৬ জন করে ফুটবলার। তবে একটি ক্ষেত্রে এগিয়ে ঠাকুরগাঁও। তাদের দলের ১৮ ফুটবলারের মধ্যে ১৭ জনই রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের! এক্ষেত্রে টাঙ্গাইল দলের ১৮ ফুটবলার এসেছে ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম থেকে। দুই দলেই খেলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থী। টাঙ্গাইলের শক্তিমত্তা আক্রমণভাগে এবং ঠাকুরগাঁওয়ের মধ্যমাঠে। দু’দলেরই একাধিক ফুটবলারের হাল্কা চোটসমস্যা আছে। ছয় ভেন্যুর ছয় চ্যাম্পিয়ন এবং তাদের সঙ্গে সেরা দুই রানার্সআপসহ মোট ৮ দল ঢাকায় আসে। তাদের নিয়ে ঢাকায় আয়োজিত হয় এই আসরের মূলপর্ব। আঞ্চলিক পর্বের ভেন্যু ফি দেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। আঞ্চলিক পর্বে অংশ নেয়া প্রত্যেকটি দল ১৫ হাজার টাকা করে অংশগ্রহণ ফি পেয়েছে। আর মূলপর্বে অংশ নেয়া প্রত্যেকটি দল ২০ হাজার টাকা করে অংশগ্রহণ ফি পায়। এছাড়া আঞ্চলিক পর্বে ৫ হাজার টাকা করে উইনিংমানি দেয়া হবে। চূড়ান্ত পর্বের চ্যাম্পিয়ন দল ৫০ হাজার ও রানার্সআপ দল ২৫ হাজার টাকা প্রাইজমানি পাবে। এ ছাড়া পাওয়ার স্পন্সর ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়, ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় এবং রেফারিদের হোম এ্যাপ্লায়েন্স দিয়ে উৎসাহিত করা হবে। এখন দেখার বিষয়, আজকের জমজমাট ফাইনালে শিরোপা জিতে প্রথমবারের মতো বিজয়ীনির হাসি হাসে কোন্ দলের মেয়েরা।
×