ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে নদী খননে পাউবোর ৯ কোটি টাকা পানিতে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৮ মে ২০১৮

পঞ্চগড়ে নদী খননে পাউবোর ৯ কোটি টাকা পানিতে

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জের করতোয়া নদী খনন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নদী খনন নীতিমালা ও প্রকল্পের বিধিমালার তোয়াক্কা না করে লোক দেখানো কাজ করে ৯ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এতে সরকারের সব টাকাই জলে চলে গেছে। নদী খননে যথাযথ ড্রেজার ব্যবহার না করে ছোট আকারের ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করা হয়। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে দালাল চক্র উত্তোলিত বালি, পাথর বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নদী খনন করে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে মর্মে অভিযোগে জানা গেছে। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ‘পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক নাজিরগঞ্জ ও দইখাতা ছিটমহল এলাকায় করতোয়া নদীর বামতীর সংরক্ষণ কাজ’ প্রকল্পটির অংশ নদী খনন (ড্রেজিং) ও চর অপসারণ কাজ শুরু করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর প্রকল্পিত ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় পাউবোর সঙ্গে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নারায়ণগঞ্জ সোনাকান্দা বন্দরের ‘ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করেন পার্থ সারথী সেন নামে জনৈক সাবঠিকাদার। সাবঠিকাদার পার্থ সারথী সেন প্রকল্পিত নদী এলাকাটি পাঁচটি অংশে ভাগ করে স্থানীয় দালাল চক্রসহ পাঁচ জনকে দিয়ে এই কাজটি করান। প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী এলাকার বারুণী মন্দির থেকে কালিয়াগঞ্জ বাজার পর্যন্ত করতোয়া নদীর ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে ৩ মিটার পর্যন্ত গভীরে খননসহ চর অপসারণের কথা ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, উল্লেখিত পাঁচ অংশের দুই অংশে কিছুটা খনন করা হয়। বাকি তিন অংশে নিয়মানুযায়ী খনন করা হয়নি। এসব নদী এলাকায় গড়ে ১ মিটারের বেশি খনন করা হয়নি। খনন এলাকা থেকে ২০০ মিটার দূরে বালি ফেলার কথা থাকলেও নদীর পাশেই ফেলা হয়েছে খননকৃত বালি। এতে নদী পাড়ের অধিকাংশ বালি আবারও নদীতেই গড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে যথাযথ নিয়ম না মেনে বিচ্ছিন্নভাবে বালি মজুদ এবং অপরিকল্পিতভাবে ট্রাকে বালি পরিবহনের ফলে নষ্ট হয়েছে এলাকার ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় কৃষক। নদী খননের সঠিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় কয়েক দফা কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে রফাদফা করে আবারও খনন শুরু করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় পাউবো’র দেখভাল করার কথা থাকলেও তেমন তদারকি ছিল না তাদের। প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতেও গড়িমসি করে স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ। তারা নৌ বাহিনীর ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড সম্পর্কে কোন তথ্য বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও দেননি। প্রকল্পে সর্বক্ষণিক তদারকির জন্য নিযুক্ত পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী ভানু জয়দাস প্রকল্প সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, নদী খননে কোন্ যন্ত্র ব্যবহার করার কথা এবং কোন্ যন্ত্র দিয়ে খনন করা হচ্ছে, আমি জানি না। সব কিছুই পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী বলতে পারবেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলালউদ্দীন আলাল বলেন, শুনেছি নদীতে ৯ ফুট (৩ মিটার) পর্যন্ত খনন করার কথা। কিন্তু আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে উন্নয়ন কাজের খোঁজ নিতে গেলে নানা সদস্যা দেখা দেয়। এজন্য পরে আর সেখানে যাইনি। প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নারায়ণগঞ্জ সোনাকান্দা বন্দরের ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, আমাদের সঙ্গে পার্ট ঠিকাদার হিসেবে স্থানীয় ঠিকাদার কাজ করেন। বড় ড্রেজার সেখানে নেয়া সম্ভব না হওয়ায় ছোট ( স্থানীয়) ড্রেজার ব্যবহার করা হয়।
×