অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ এবং নিজের জীবনের দ্বাদশ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্বাচনী বছর হলেও এক ধরনের রক্ষণশীল বাজেট তৈরির আভাস দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট হবে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার। সচিবালয়ের এক বৈঠকে এ তথ্য জানান তিনি।
সচিবালয়ে গত সোমবার আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক ঠিক করতে সম্পদ কমিটির বৈঠক হয়। অর্থমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়েছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়ার চিন্তা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনী বছর হওয়ার কারণেই রাজস্ব সংগ্রহে সরকারের দিক থেকে নতুন নতুন পথ খোঁজা হবে না। ফলে রাজস্ব সংগ্রহ স্বাভাবিকভাবে যা বাড়বে, তাতেই সরকার সন্তুষ্ট থাকবে। আগামী বাজেটে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এতে মূল এডিপির আকার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মূল এডিপির আকারের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন যোগ করলে তা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে সূত্রগুলো জানায়।
বৈঠকে এডিপির বাস্তবায়ন হার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং এ জন্য নতুন উপায়ের চিন্তা করছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাস্তবায়ন হারের তুলনায় দ্বিতীয় ছয় মাসে যে হার দেখানো হয়, তা অনেকটা অবাস্তব বলেও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। আবার এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকেও অনেকে দায়ী করেন। কারণ অর্থ বিভাগ টাকা ছাড় করতে দেরি করে।
আগামী বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়তে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় এ খাতে তেমন ভর্তুকি রাখতে হয়নি, সরকারও স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় সম্পদ কমিটির বৈঠকে জ্বালানি খাতে বড় আকারের ভর্তুকি রাখার পরামর্শ এসেছে। এ ছাড়া আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারী কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ দিতেও ভর্তুকি রাখতে হবে। গৃহনির্মাণ খাতে জনগণকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হলেও সরকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রথম দুই প্রান্তিক, অর্থাৎ ছয় মাসের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের তহবিলে দিয়ে দেয়া হবে। তৃতীয় প্রান্তিকের টাকার জন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর মতামত হলেই চলবে। শেষ প্রান্তিকের জন্য শুধু অর্থ বিভাগের সম্মতির দরকার পড়বে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে, বাকি তিন মাসে কীভাবে এডিপির ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব? বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপিতে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
মূল্যস্ফীতির হার আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বিবিএসের মাসওয়ারি হিসেবে দেখা যায়, গত মার্চে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই এবারের বাজেট হচ্ছে সরকারের নির্বাচনী বাজেট। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা নিয়ে বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগের ব্যবহার, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও নতুন রফতানির বাজার অনুসন্ধানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও অর্থবছর শেষ হবে ২০১৯ সালের ৩০ জুন।