আনোয়ার রোজেন ॥ চতুর্থ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প’। আগের তিন পর্যায়ের বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় নতুন করে প্রকল্প সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারীভাবে চিহ্নিত ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত এক লাখ শিশু পাবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা। আরও এক লাখ শিশুকে দেয়া হবে কারিগরি প্রশিক্ষণ। সেই সঙ্গে প্র্রতি মাসে দেয়া হবে এক হাজার টাকা করে বৃত্তি। এ জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির সম্প্রসারণ প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবারের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। রবিবার পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে ৮টি বিভাগের ১৪টি এলাকার মোট ১ লাখ শিশু শ্রমিককে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং ১ লাখ শিশু শ্রমিককে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সরকার কাজ করছে। কোন কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কতসংখ্যক শিশু শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে তা নিরূপনে জরিপ চালানো হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কাজ চলছে। সরকার ৩৮টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এর বাইরে গৃহশ্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলাদাভাবে গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। পরবর্তী সময়ে গৃহকর্মী সুরক্ষা বিষয়ে আইনও প্রণয়ন করা হবে। উল্লেখ্য, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে সরিয়ে আনার বিষয়ে ২০১৬ সালের প্রথম টার্গেট অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আবারও ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম দিচ্ছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি শিশু নানা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। সর্বশেষ ‘জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ-২০১৩’ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনও না কোনও শ্রমে নিয়োজিত। এর মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, একনেকে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইং বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ একনেকের জন্য তৈরি করা সার-সংক্ষেপে বলেছেন, সর্বশেষ পিইসি সভার সুপারিশ বাস্তবায়ন করায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।