ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু, কম দামে পেয়ে ভোক্তা খুশি

পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য মজুদ রমজানে দাম বাড়ালে ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৮ মে ২০১৮

পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য মজুদ রমজানে দাম বাড়ালে ব্যবস্থা

এম শাহজাহান ॥ আসন্ন রমজান সামনে রেখে চাহিদার তুলনায় দেশে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ বাড়ানো হয়েছে। রোজায় ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর এবং পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব পণ্যের আমদানির সুযোগ থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শবে-বরাতের পরই সারাদেশে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি। এতে বাজারের চেয়ে কমদামে ভোক্তারা টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। রোজার সময় বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনিয়ম-কারসাজি ও সিন্ডিকেশন হলে তাৎক্ষণিক জেল-জরিমানা করবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় রমজান সামনে রেখে এবার কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন মতে, রমজানে বেশি বিক্রি হয় এমন সব ভোগ্যপণ্যের মজুদ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্য দেশে মজুদ রয়েছে। ফলে এবার রমজানে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে। ব্যবসায়ীরাও রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু এত মজুদ থাকার পরও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতপৎরতার অভিযোগ উঠেছে। এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রোজার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, রোজা এলে কয়েকটি পণ্য টার্গেট করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বাড়ে। যুগের পর যুগ এটা হয়ে আসছে। এবারও সেই আশঙ্কা অমূলক নয়। ইতোমধ্যে এক লাফে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ১৫-২০ টাকা দাম বেড়েছে। এটা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে হয়েছে। পেঁয়াজ ॥ চাহিদার তুলনায় দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সারা বছর এ পণ্যটির চাহিদা ২৪ লাখ টন। এ বছর উৎপাদন ও আমদানি ভাল হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের প্রধান উৎস ভারতেও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমদানি ভাল, তাই দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের আমদানি ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম যতটুকু বেড়েছে তা আবার কমে যাবে। এই পণ্যটি নিয়ে বাজারে এক ধরনের প্যানিক রয়েছে। ছোলা ॥ ইফতারির প্রধান উপকরণ এই ছোলা। এ কারণে রোজা আসলে ছোলার দাম বাড়ে। তবে এ বছর শবে-বরাতের পরও এ পণ্যটির দাম বাড়েনি। কারণ চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ছোলা দেশে মজুদ রয়েছে। সারা বছর দেশে ছোলার চাহিদা ১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই চাহিদা থাকে ৪০-৫০ হাজার টনের। এ পণ্য দেশেও উৎপাদন হয়। ভোজ্যতেল ॥ সরকারী তথ্যমতে, দেশে বছরে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। ওই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ ২০ হাজার টন করে ভোজ্যতেল লাগে। তবে রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে ২ থেকে আড়াই লাখ টন হয়। চলতি অর্থবছরের আট মাসে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে ১২ লাখ ৭১ হাজার টন ভোজ্যতেলের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া দেশে উৎপাদিত দুই লাখ টন সরিষার তেল বাজারে রয়েছে। অর্থাৎ পুরো বছরের চাহিদার সমান ভোজ্যতেল আট মাসেই ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছেছে। চিনি ॥ রমজানে ইফতারিতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে শরবত ও জিলাপির। আবার শরবত তৈরির প্রধান উপাদান চিনি। এছাড়া ইফতারি ও সেহরির অন্যান্য খাবার তৈরিতে চিনির ব্যবহার হয়। প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে দেশে। রমজান মাসে তার চাহিদা হয় তিন লাখ টন। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১৫ লাখ ৬৩ হাজার টন চিনি আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। দেশের কারখানাগুলো বছরে এক লাখ টন উৎপাদন করে। ফলে চিনির বাজারেও পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। মসুর ডাল ॥ সারাবছর দেশে বছরে চার লাখ টন মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজান মাসে প্রয়োজন হয় ৭০ হাজার টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৫৫ হাজার টন মসুর ডাল উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ১ লাখ ৪৪ হাজার টনের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। রহমতগঞ্জ ডালপট্টির ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের হাতে এবার যে পরিমাণ ডাল মজুদ আছে, তাতে কোন সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। খেজুর ॥ রমজানে খেজুরের সবচেয়ে বেশি চাহিদা তৈরি হয়। ইফতারির আরও একটি প্রধান খাবার খেজুর। দেশে সারাবছর যে খেজুর বিক্রি হয় তার ৯৮ ভাগের বেশি বিক্রি হয় রমজান মাসে। এবার রমজানে খেজুরের কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ ভোক্তাদের ॥ শবে-বরাতের পর থেকে টিসিবি ন্যায্যমূল্যে বাজারে চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেল, খেজুর ও ডাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা টিসিবির ট্রাকসেল। কারণ টিসিবি ভর্তুকি দিয়ে বাজারের চেয়ে কম দামে এসব পণ্য ভোক্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু কার্যক্রম সীমিত থাকায় ভোক্তারা পুরোমাত্রায় টিসিবির সুবিধা নিতে পারছে না। ভোক্তারা বলছেন, ঢাকায় ট্রাকসেল কার্যক্রম আরও বাড়ানো উচিত। বর্তমান রাজধানীতে ৩২টি এবং সারাদেশে ১৮৪টি ট্রাকে টিসিবির পণ্য সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। চিনি, মশুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি। ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সহজ শর্তের ব্যাংক সুদ ও শুল্কমুক্ত সুবিধা ॥ ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। পণ্যগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- সয়াবিন তেল, পামতেল, রসুন, মশুর ডাল, ছোলা, চিনি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা ও খাদ্য লবণ।
×