ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের নক্সা চূড়ান্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ মে ২০১৮

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের নক্সা চূড়ান্ত হচ্ছে

রশিদ মামুন, চট্টগ্রাম থেকে ॥ জুনের মধ্যেই দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিটের নক্সা চূড়ান্ত হচ্ছে। আর চলতি বছরের শেষে সবকিছু ঠিক থাকলে তেল পরিশোধনাগারের ক্ষমতা আরও ৩০ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধির জন্য নতুন এই ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সোমবার চট্টগ্রামে ইআরএলের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্্যাপন অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ সালে দেশের একমাত্র জ্বালানি পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করা হয়। এরপর দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও গত ৫০ বছরে দেশে কোন তেল পরিশোধনাগার করা হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করে মেটানো হয়। এতে লিটার প্রতি ৫ থেকে ছয় টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে। সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরই দেশে নতুন তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তবে বিনিয়োগ প্রাপ্তিকেই তেল পরিশোধনাগার শিল্পে বড় বাধা মনে করা হতো। বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে বিনিয়োগ না পেয়ে সরকার নিজস্ব উদ্যোগে তেল পরিশোধনগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপকে দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিট করার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরবর্তীতে টেকনিপ দ্বিতীয় ইউনিটের নক্সা প্রণয়ন এর কাজ শুরু করে। আগামী জুনের মধ্যে নতুন ইউনিটের নক্সা হাতে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ইআরএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আকতারুল হক। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা আশা করছি জুনের মধ্যেই ইআরএল এর দ্বিতীয় ইউনিটের নক্সা হাতে পাব। এরপর সরকারের অনুমোদন এবং আমাদের প্রস্তুতি নিতে কিছু সময় প্রয়োজন হবে। নতুন ইউনিটটি নির্মাণ শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, আশা করছি চলতি বছরের শেষ নাগাদ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। ইআরএলএর ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী ২ মাসের মধ্যে ইআরএল এর দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। ইতোমধ্যে নক্সার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা বলে দিয়েছি অন্যসব দরকষাকষি শেষে ২ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটরে নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি সব থেকে সেরা তেল পরিশোধনাগার। পঞ্চাশ বছরেও তেল পরিশোধগারটি ৯৫ ভাগ দক্ষতায় তেল পরিশোধন করতে পারে। প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি খাতের উন্নয়ন প্রকল্পর কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা গভীর সমুদ্রে তেল পাইপ লাইন করছি। এখান থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল পাইপ লাইনের মাধ্যমে আনা সম্ভব হবে। এছাড়া তিনি খুলনার দৌলতপুর এবং বাঘাবাড়ি তেল ডিপো উন্নয়নের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা সারাদেশের উন্নয়ন করতে চাই। কেবল চট্টগ্রামের মাধ্যমে তেল না এনে অন্যস্থানকেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যাতে দেশের কোথাও সঙ্কট তৈরি হবে না। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের উন্নয়নের জন্য স্বক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। সারাদেশের উন্নয়নে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ইআরএল এর দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিপিসির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন, ইআরএল এখন পর্যন্ত খুব ভাল কাজ করছে। তবে এখানের দেড় মিলিয়ন মেট্রিক টনের সঙ্গে বার্ষিক আরও তিন মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্ষমতার তেল পরিশোধনাগার পরিচালনার সক্ষমতার প্রমাণ রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে টেকনিপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বক্তব্য রাখেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ইআরএল এর সব কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে ইআরএল এর পরিশোধনাগার ঘুরে দেখা যায় সেখানে তেল পরিশোধন চলছে। বছরে এখান থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন ক্রড অয়েল পরিশোধন করা হয়। আর দেশের চাহিদার বাকি ৪৫ লাখ মেট্রিকটন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি। তবে দেশের গ্যাস ক্ষেত্রের উপজাত কনডেনসেট থেকে কিছু জ্বালানি তেল উৎপন্ন হয়।
×