ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুরে বাসা থেকে কলেজ শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

বগুড়ার গ্রামে চারজনকে জবাই করে লাশ ফেলে রাখা হয় ধানক্ষেতে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ মে ২০১৮

বগুড়ার গ্রামে চারজনকে জবাই করে লাশ ফেলে রাখা হয় ধানক্ষেতে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে চারজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার ধান ক্ষেত থেকে এদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের হাত পিছন থেকে বাঁধা ছিল। নিহতদের বয়স ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। পুলিশের ধারণা, রবিবার রাতের যে কোন সময় একই কায়দায় অস্ত্র দিয়ে এদের জবাই করা হয়েছে। পেশাদার খুনীরা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি এলাকার একটি বাসার একটি কক্ষ থেকে সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা এবং সোনালী ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল শাখার প্রিন্সিপাল অফিসারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। বগুড়া ॥ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের ডাবুইর গ্রামে ধান ক্ষেতে থেকে সোমবার ৪ জনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রামটির অবস্থান প্রত্যন্ত এলাকায়। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলো-পাশের কাঠগাড়া চকপাড়া গ্রামের সাবরুল ইসলাম (২৮) ও একই গ্রামের রং মিস্ত্রি জাকারিয়া (৩০) এবং জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচপাইকা চেয়ারম্যাানপাড়ার বাসিন্দা হেলাল (৩০)। তবে অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের বয়স ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে ডিবি ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন কর হয়েছে। হত্যাকারীরা কতজন ছিল সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, রবিবার রাতের কোন এক সময় দুষ্কৃতীরা একই কায়দায় ওই ৪ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। হত্যার পর তারা ধান ক্ষেতের মধ্যে লাশ ফেলে রেখে যায়। নিহতদের হাত পিছন দিক দিয়ে বাঁধা ছিল। ৪ জনের হাত বাঁধা ছিল একই ধরনের দড়িতে। প্রত্যেককে জবাই করার ধরনও একই রকম। পেশাদার খুনী এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানায়। একই সঙ্গে ৪ জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করে। হাজার হাজার মানুষ উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন গ্রামবাসীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশরাফ ভুঞাসহ উর্ধতন অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা এবং ডিবি, সিআইডি ও পিআইবি’র পৃথক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে হত্যাকা-ের রহস্য পুলিশ জানাতে না পারলেও পুলিশের একধিক সূত্রের ধারণা, মাদক সংক্রান্ত কোন বিষয় এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল ডাবুইর গ্রাম আটমুল ইউনিয়নের চন্দনপুর ও ফেনিগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে। এটি শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরে। পাকা রাস্তার পাশ থেকে শুরু বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেত শুরু। রাস্তা থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ধান ক্ষেতের মধ্যে ৪ জনের জবাই করা লাশ পড়েছিল। সূত্র জানায়, সকাল ৮টার দিকে কয়েকজন ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে লাশ দেখতে পায়। ঘটনাস্থলের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত ওসমানিয়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসা ছাড়া ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোন বাড়ি নেই। মাদ্রাসার শিক্ষক শিহাব উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীও লাশ দেখতে যায়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই সেখানেই আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের ঢল নামে সেখানে। এমন ঘটনা সেখানে আর ঘটেনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে। এরই মাঝে দু’জনেরর পরিচয় পাওয়া যায়। ছুটে আসে তাদের স্বজনরা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পাউরুটি, ম্যানিব্যাগ, দড়ি, মাদক সেবনের সরঞ্জামসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করে। নিহতদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া জাকারিয়া ও সাবরুলের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে কাঠগাড়া চকপাড়ায়। জাকারিয়া রং মিস্ত্রী ও দিনমজুরের কাজ করতেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বড় ভাই জান্নাতুলের সঙ্গে শেষ কথা হয় সে বাড়ি ফিরছে। তবে আর বাড়ি ফিরেনি। মা জাহানারা জানান, তার ছেলের সঙ্গে কাঠগাড়া নতুন পাড়ার ২ মাদক ব্যবসায়ীর বিরোধ ছিল। কয়েকদিন আগে ছেলের দামী মোবাইল ফোনটি তারা মারপিট করে কেড়ে নেয়। অপরদিকে সাবরুলের স্ত্রী করিমা খাতুন জানান, আগে সাবরুল মাদক সেবন করলেও শিশু পুত্রের মৃত্যুর পর থেকে সে আর মাদক সেবন করত না। মা সায়রা বেগম জানান, তার ছেলে ভাইয়ের পুকুর বাজারে মুদিখানার বাবাবার মুদি দোকানে বসত। রাত ৮টার দিকে সে মায়ের জন্য পাউরুটি নিয়ে দোকান থেকে বাড়ির উদ্দেশে বের হলেও আর বাড়ি ফিরেনি। চাঞ্চল্যকর এই ফোর মার্ডারের ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। অপরজনকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পূর্ব বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতাসহ সম্ভাব্য সবগুলো কারণই তারা খতিয়ে দেখছেন। কোন নির্দষ্ট কারণ এই পর্যায়ে বলা সম্ভব না। তবে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঘটনা তদন্ত গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পুলিশ সুপার সার্বিক তদন্ত কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। তবে কতজন দুর্বৃত্ত এই হত্যাকা-ে অংশ নিয়েছিল সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানতে পারেনি। ফরিদপুর ॥ ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকার একটি বাসার একটি কক্ষ থেকে সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা ও সোনালী ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল শাখার প্রিন্সিপাল কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লার নূরুল ইসলামের বাড়ির নিচতলার একটি ফ্লাট থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই কলেজ শিক্ষিকার নাম সাজিয়া বেগম (৩৪)। তিনি সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকার সুত্রাপুর এলাকার শেখ শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। শেখ শহীদুল সুত্রাপুর এলাকায় খুচরা যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন। নিহত অপরজন হলেন এমডি ফারুক হাসান (৩৮)। তিনি যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুশবাগ মহল্লার মিজানুর রহমানের ছেলে। ফারুক সোনালী ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এদিকে দুই সরকারী কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত সাজিয়া বেগমের স্বামী শহিদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া তৃতীয় কোন পক্ষ খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিনা তাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। সোমবার সকালে ঝিলটুলি এলাকা থেকে শহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়। শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লায় জামালের দোকানের পাশে অবস্থিত নূরুল ইসলামের ভবনের নিচতলায় একটি ফ্লাটে সাজিয়া এবং পাশের অপর একটি ফ্লাটে ফারুক থাকতেন। সাজিয়ার স্বামী বড় ছেলেকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসেন। ছোট ছেলে রিশাদকে (৫) নিয়ে সাজিয়া ফরিদপুরে থাকতেন। বড় ছেলে তাসিম (১১) ঢাকায় তার বাবার কাছে থাকে। ঘটনার সময় ওই বাড়িতেই ছিলেন স্বামী শহিদুল ইসলাম ও সাজিয়ার ফুপু আফসারী আহম্মেদ। ওই বাড়ির মালিক নূরুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল হাসান ডেভিড জানান, নিহত কলেজ শিক্ষিকা এক বছর আগে এই ফ্লাটটি ভাড়া নেন। আর ব্যাংক কর্মকর্তা গত এপ্রিলে ভাড়া নেন ফ্লাটটি। এক মাস আগে বাসা ভাড়া নিলেও তিনি থাকতেন না। নিহত ফারুক হোসেন নিজেকে ফরিদপুরের সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় বদলি হয়ে এসেছেন বলে দাবি করে বাসাটি ভাড়া নেন। একমাস আগে ভাড়া নিলেও বাসায় ওঠেন গত বৃহস্পতিবার। তিনি তার বাড়ি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বলে জানিয়েছিলেন। এদিকে ফারুক হোসেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুরের কোন শাখায় কর্মরত ছিলেন না দাবি করেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর প্রিন্সিপাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ শামসুল হক জানান, ফারুক হোসেনের ছবি দেখে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাত ১০টার দিকে সাজিয়ার স্বামী ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই ডায়েরিতে তিনি জানান, তার স্ত্রী সকালে কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। দুপুর বিকেল ও সন্ধ্যা পাড় হয়ে গেলেও তিনি ফিরে আসেননি। বাড়ির মালিকের ছেলে ডেবিড বলেন, রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফারুকের ফ্লাটের দরজাটি খোলা পেয়ে ভিতরে গিয়ে দেখি ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ঝুলছে, পাশে মেঝেতে পড়ে রয়েছে শিক্ষিকার রক্তাক্ত দেহ। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে জানান। সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহামুদ বলেন, সাজিয়া রবিবার কলেজে গিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি কলেজ থেকে বাড়ির জন্য বের হয়ে যান। কলেজ থেকে তার বাড়ির দূরত্ব হাটাপথ। ১০ মিনিটের মধ্যেই বাড়িতে পৌছে যেতে পারেন। নিহত কলেজ শিক্ষিকার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, ৪টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখন সে জানায় বাসায় আসছে। এরপর রাত হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি, তার সহকর্মীদের জানাই। কোথায় খুঁজে না পেয়ে রাত ১০টার দিকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ এফএম নাসিম বলেন, বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দিলে আমরা এসে লাশ উদ্ধার করি। দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকার নূরুল ইসলাম এর দ্বিতল বাড়ির নিচ তলার একটি ফ্লাট থেকে লাশ দুইটি উদ্ধার করা হয়। সাজিয়ার লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। ফারুকের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে তাদের মধ্যে পুরানো যোগাযোগ অথবা প্রেমের সম্পর্ক ছিল এই বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। ‘মরদেহ যেভাবে পাওয়া গেছে তাতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে সাজিয়াকে খুন করে ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসান আত্মহত্যা করেছেন। আবার এত বড় ঘটনায় ওই ফ্লাটের দরজা খোলা পাওয়ায় দু’জনকেই খুন করে থাকতে পারে। এই দুই ক্লুতেই তদন্ত করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদহে দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হবে।
×