ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোটা আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হয়েছিল ষড়যন্ত্র, তৈরি হয় বিশাল ফান্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ মে ২০১৮

কোটা আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হয়েছিল ষড়যন্ত্র, তৈরি হয় বিশাল ফান্ড

শংকর কুমার দে ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গাড়ি পোড়ানো, সন্ত্রাসের ঘটনাটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে সরকারকে অচল করার জন্য ছক কষেছিল বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। লাখ লাখ টাকার ফান্ড তৈরি করে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করার ইঙ্গিত পেয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাবির ভিসির বাসভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন এমন আরও ৩২ জনের তালিকা তৈরি করে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়, ছাত্র নাকি বহিরাগত সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়াসহ গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রসহ গ্রেফতার হওয়া চারজনকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কোটা আন্দোলনে যে সরকারবিরোধী অশুভ শক্তি জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে টেলিফোনে কোটা আন্দোলন অর্গানাইজ করার জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুনকে অনুরোধ জানানোর বিষয়টি। এ ছাড়াও কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সকালের বৈঠকে সমঝোতা হওয়ার পর বিকেল বেলায় ভেঙ্গে দিয়ে ফের আন্দোলনে যোগদানের বিষয়টিতে তৃতীয় পক্ষের কোন হাত ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঢাবির চত্বরে সীমাবদ্ধ কোটা আন্দোলনটি এত দ্রুতগতিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে অদৃশ হাত কাজ করেছে যার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ছাত্র সমাজের কোটা আন্দোলনের মতো বিষয়টি এত দ্রুত ও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক প্রভাব থাকার বিষয় স্বাভাবিক। কোটা আন্দোলনের সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ছাত্রের মৃত্যু, এক ছাত্রীর রগকাটা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে কোটা আন্দোলনকে বেগবান করে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের উদ্দেশ্য যে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লোটার ষড়যন্ত্র ছিল তাও পরিষ্কার। তা ছাড়া ভিসির বাসভবনে হামলার সঙ্গে কোটা আন্দোলনের সম্পর্ক কি? মুখোশ পরে ভিসির বাসভবনে হামলা হলো কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ডিবি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটা আন্দোলনের আড়ালে গভীর রাতে ভিসির বাসভবনে হামলা করার জন্য কোন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নামের অশুভ শক্তি উস্কানি দিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া চারজনকে। রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকা থেকে রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব (২৬), মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ (২৫), আলী হোসেন শেখ ওরফে আলী (২৮) এবং আবু সাইদ ফজলে রাব্বী ওরফে সিয়াম (২০) নামে চার যুবককে গ্রেফতার করার পর বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও ভিসির বাসভবনে তারা হামলা করতে গেল কেন? কি তাদের কি উদ্দেশ্যে এবং কার নির্দেশে উপচার্যের বাস-ভবনে গিয়ে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরে অংশ নেয় তা জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে চারজনকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলার সময়ে ভিসির বাসভবনের সামনের সিসিটিভিগুলো ভেঙ্গে ফেলা হলেও হামলার আগে ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয় ৩২ জনকে। বিশেষ করে ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনের সড়কে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও কলেজের ছাত্র ও বহিরাগত রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। যেই ৩২ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে গ্রামের বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক পরিচয়, বহিরাগত কিনা ইত্যাদি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভিসির বাসভবনে তারা হামলা করেছে কিনা তার সত্যতা যাচাই-বাছাই করেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গত ৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের বাস-ভবনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। দুষ্কৃতকারীরা উপাচার্যের বাসার নিচে থাকা চারটি গাড়ি ভাংচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় পরদিন ১০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এস এম কামরুল আহ্সান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৯ এপ্রিল অজ্ঞাতপরিচয় মুখোশধারী সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীরা লোহার রড, পাইপ, হ্যামার, লাঠি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায়। তারা সীমানা দেয়াল টপকে এবং ভবনের মূল ফটকের তালা ভেঙ্গে ভবনের ভেতরে ঢোকে। এ সময় বাসভবনে মূল্যবান জিনিসপত্র, আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, লাইট, কমোড ও বেসিনসহ অনেক মালপত্র ভাংচুর করা হয়। লুটও করা হয়। এ ছাড়া ভবনে রাখা দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং আরও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভেঙ্গে ফেলে এবং আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে যায়। কয়েকটি ফেসবুক আইডি, পেজ ও গ্রুপ, ইউটিউব, টুইটার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ, ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহারে সঙ্গে ইমরান এইচ সরকারের ছবি সংবলিত ফেবসুকের কয়েকটি স্ক্রিনশটসহ মোট ৭২ পাতার স্ক্রিনশট যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রক্তভেজা টুয়েন্টিফোর ডটকম, মনিটরবিডি ডট নিউজ, বিডিট্রিবিউন এ প্রকাশিত রিপোর্টের স্ক্রিনশটও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মৃত্যু, রগকাটা, লন্ডন থেকে ঢাকায় টেলিফোনের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যে সহিংসতার সৃষ্টি করার অভিযোগে দায়ের করা পাঁচটি মামলার তদন্ত করতে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
×