এমএ রকিব, কুষ্টিয়া ও বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে ॥ আজ ২৫ মে বৈশাখ। বাংলা সাহিত্য-সৌধের কালজয়ী প্রতিভা,বাঙালীর সৃজন-মননে দীপ্তমান কৃতী পুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী। এই মহান দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসব। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ উৎসবকে ঘিরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি চত্বর আজ পরিণত হচ্ছে রবীন্দ্রপ্রেমী ও ভক্তদের মিলনমেলায়।
এদিকে ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক’Ñ অহংকারমুক্ত বিশ্বের জনমানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে পুরনো দিনের সকল জরা-জীর্ণকে পেছনে ফেলে ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে কবির নওগাঁর পতিসরের কাছারিবাড়িকে। সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজে। প্রতি বছরের মতো এবারও পতিসরে আসবেন মন্ত্রী, এমপি, উর্ধতন কর্মকর্তাসহ দেশবরেণ্য শিল্পী, কবি ও রবীন্দ্রভক্তরা। নাচ, গান আর কবির রচিত কবিতা আবৃত্তি করে উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্বকবির জন্মোৎসব।
শতবর্ষ ধরে বিশ্বকবির অনন্য প্রতিভার আলো উদ্ভাসিত করে চলেছে বাঙালীর জীবন ও দর্শন। নিভৃত বাংলার এক পল্লী অঞ্চল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কেটেছে কবির জীবনের বেশ কিছু সময়। এ সময় তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ফুটে উঠে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে আজও কালের সাক্ষী হয়ে শিলাইদহের বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্র স্মৃতিমাখা ‘কুঠিবাড়ি’। কবি এক সময় কুষ্টিয়ার যে গ্রামে বসবাস করেছিলেন কুমারখালী উপজেলার অন্তর্গত সেই গ্রামটির নাম ‘শিলাইদহ’। পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীরঘেরা তিনতলা এ কুঠিবাড়ির চারদিকে রয়েছে সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা এক মায়াবী পরিবেশ। বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী প্রতিভা শিলাইদহের মাটি-হাওয়ার গন্ধে একাকার হয়ে এখানে বসেই নোবেলজয়ী গীতাঞ্জলির অধিকাংশ রচনা করেন। খুব কাছে থেকে দেখেছেন গ্রাম-বাংলার প্রকৃত রূপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ছিলেন আত্মার আত্মীয়। তিনি ছিলেন বাঙালী চেতনার প্রাণশক্তির জাগরণ। ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবির এলে শিলাইদহ ‘কুঠিবাড়ি’ চত্বরে জমে উঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। এখানে নামে আসে ভক্ত-অনুরাগী মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর। এবারের আয়োজনেও কমতি নেই শিলাইদহে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে কুঠিবাড়িকে। ২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখ রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে থাকছে আলোচনা, সেমিনার, আবৃত্তি, নাটক ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জেলা প্রশাসক জহির রায়হান জানান, শিলাইদহে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্নের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজনেও রয়েছে ভিন্নতা। মঙ্গলবার সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
নওগাঁ ॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারেও কবিগুরুর নিজস্ব জমিদারি তাঁর স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসর ‘কাছারিবাড়ি’ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে নানান উৎসবের। প্রতিবছরই এইদিনে পতিসরে নামে রবীন্দ্রভক্তদের ঢল। পরিণত হয় মানুষের মিলনমেলায়। সরকারীভাবে একদিনের কর্মসূচী নিলেও এ মিলনমেলা চলে সপ্তাহজুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে কবিভক্তরা ছুটে আসেন তাদের প্রিয় কবির পতিসর ‘কাছারিবাড়ি’ প্রাঙ্গণে। একে অপরের সান্নিধ্যে এসে স্মৃতিচারণে লিপ্ত হন কবিভক্তরা। কবি গুরুর ১৫৭ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কবির নিজস্ব জমিদারি নওগাঁর পতিসর যেন পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কাছারিবাড়িতেই কবিগুরুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পতিসরে নাগর নদের পাড়কে মনোমুগ্ধকর করে তোলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে শান বাঁধানো ঘাট। যে ঘাটে কবিগুরু তাঁর বোট থেকে ওঠানামা করতেন। দীর্ঘদিনেও পতিসরের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন না হলেও এবার যেন হাঁটি হাঁটি পা-পা করে উন্নয়নের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: