ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইরান চুক্তির বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৮ মে ২০১৮

ইরান চুক্তির বিকল্প নেই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে না আসার অনুরোধ জানিয়েছে ব্রিটেন। এই পরমাণু চুক্তির চেয়ে হোয়াইট হাউসের নিকট ভাল কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছে দেশটি। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন স্বাক্ষরিত নিউইয়র্ক টাইমসের উপসম্পাদকীয়তে প্রকাশিত একটি কলামে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে সফররত বরিসের সঙ্গে সোমবার মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠক। খবর এএফপি ও বিবিসির। যুক্তরাজ্য ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে না আসার জন্য বিভিন্ন সময় অনুরোধ জানিয়ে আসছে। ট্রাম্প বরাবরই চুক্তিটিকে ‘অন্যায্য’ বলে কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। গত শনিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ‘ইরানকে কখনই পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হতে দেয়া যাবে না- প্রেসিডেন্টের দেয়া এমন প্রতিশ্রুতি থেকে তিনি সরে যাচ্ছেন।’ ঐতিহাসিক ওই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইরান স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে বলা হয়, ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করবে, বিনিময়ে ইরানের ওপর চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি এ বিষয়ে একমত যে, বর্তমান চুক্তিটিকে ধরে রেখেই ইরানের পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং জাতিসংঘও ইতোমধ্যে ট্রাম্পকে এই চুক্তি থেকে সরে না আসার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। ট্রাম্প কিছুদিন আগেই চুক্তিটি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছেন। আগামী ১২ মে চুক্তিটি নবায়ন করার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে ইরান ও উল্লিখিত ছয় দেশের মধ্যে পরমাণু চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে সরে এলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। জনসন পত্রিকাটিতে লিখেন, ‘এই সঙ্কটের সময়ে পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়া ভুল হবে।’ তিনি তার কলামে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিদর্শকরা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কতদূর কি হচ্ছে সে বিষয়ে নিশ্চিয়তা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন। পরিদর্শকরা জানিয়েছেন, ‘ইরান এ রকম কোন প্রচেষ্টা করলে সেটা তাদের নজরে অবশ্যই আসতো।’ জনসন আরও লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করার চুক্তিই পারে তেহরানের আগ্রাসী আচরণ রুখতে। আমি একটি বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত যে, সহজলভ্য প্রতিটি বিকল্প ভাল হয় না।’ এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে’ অনেক বেশি অনুতাপে ভুগতে হবে। সোমবার ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মর্কতাদের সঙ্গে বৈঠককালে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিটি রক্ষার জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মতে, ইরানের সঙ্গে তার মিত্রদের করা এই পরমাণু চুক্তি ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে চুক্তি। চুক্তির ‘ত্রুটিপূর্ণ শর্তগুলো পরিবর্তন বা বাতিল না করা হলে’ যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে বলে ট্রাম্প তার ইউরোপীয় মিত্রদের হুমকি দিয়েছেন। তার দাবি মানা না হলে তিনি ইরানের ওপর আবার অবরোধ আরোপেরও ঘোষণা দিয়েছেন। রুহানি রোববার ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে দেয়া এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তবে আপনারা দেশটিকে এমনভাবে অনুতাপে ভুগতে দেখবেন যা এর আগে ইতিহাসে কেউ কখনও করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প ও ইসরাইল সরকারের জানা উচিত যে আমাদের দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ।’ ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজ ইরানের ডানপন্থী, বামপন্থী, রক্ষণশীল, সংস্কারপন্থী ও উদারপন্থীসহ সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’ রুহানি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করি। তবে একই সঙ্গে আমরা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের অস্ত্র ও আমাদের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে আমরা কারও সঙ্গে সমঝোতা করব না।’ ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তিনি তার দেশের আঞ্চলিক ভূমিকার ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনায় ইচ্ছুক। তিনি ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে’ লড়াই বন্ধ করবেন না। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আঞ্চলিক সুরক্ষার স্বার্থে আমরা গোটা বিশ্বের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আমরা নতুন আইএস (ইসলামিক স্টেট) সৃষ্টি করতে দিব না।’
×