ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কারা, কেন, কী কারণে?

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৮ মে ২০১৮

কারা, কেন, কী কারণে?

এক মাস হয়ে গেল অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে তা-ব ও নারকীয় হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ইত্যাকার অভাবনীয় ও অকল্পনীয় ঘটনার কারণ এখনও উদ্ঘাটন করা যায়নি। বরং বিষয়টি আড়াল করার জন্য শিক্ষকদের একটি অংশ সমাবেশ-মানববন্ধন করে আসছে অন্য একটি ঘটনাকে সামনে এনে। কারা, কেন এই ‘সাহস’ প্রদর্শন করেছে তা অচিরেই বেরিয়ে আসবে। চাপা থাকবে না বলে আশাবাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তার দাবি, হামলার কারণ শীঘ্রই জানা যাবে। দেশবাসীও তা জানার জন্য উদগ্রীব। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের উপাচার্যের বাসভবনে আকস্মিক হামলাকারীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে যে এ হামলা চালিয়েছে সব মহলই তাতে নিশ্চিত। পুলিশ অবশ্য মাদ্রাসার ছাত্রসহ বহিরাগত চারজনকে লুটের মালামালসহ গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও আর কেউ গ্রেফতার হয়নি, এমনকি সন্দেহভাজনও নয়। এরা দাগী আসামি। এদের হয়ত ভাড়া করা হয়েছে নাশকতার জন্য। পুলিশ খুব সতর্কভাবে এগুচ্ছে, যাতে নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয়। ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় উপ-উপাচার্যকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, এক মাসের মধ্যেও তারা তেমন কোন তথ্যই উদ্ঘাটন করতে পেরেছে এমনটা নয়। ভয়াল সেই রাতের ঘটনা যদি উদ্ঘাটনে এত বিলম্ব ঘটে, তবে স্পষ্ট হয় যে, ঢিলেঢালা তদন্ত চলছে। কিংবা বিষয়টি কম গুরুত্ব পাচ্ছে। যা কোনভাবে কাম্য নয়। কোটা বাতিল ও সংস্কারের নামে যে আন্দোলন, আর নেতৃত্ব রয়েছে নাশকতাকারী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাতে। তারা রাতের বেলা ক্যাম্পাস এলাকায় মিছিল, সেøাগান দিলেও চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণ ভাংচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। আট এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে রাত দুটার মধ্যে শতাধিক মুখোশধারী উপাচার্যের বাসায় হামলা চালায়। দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী ও আন্দোলনকারীদের একাংশ দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, পাইপ, হ্যামার, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে উপাচার্যের বাসার দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। ঐতিহ্যবাহী ভবনে রক্ষিত মূল্যবান আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ সব মালামাল ভাংচুর এবং মোবাইল, অলঙ্কারসহ অন্যান্য সামগ্রী লুট করে। তারা উপাচার্যকে মেরে ফেলার জন্য আঘাতও করে। তবে সাংবাদিকদের ব্যারিকেড থাকার কারণে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ভবনের সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে এবং আলামত নষ্টের জন্য কম্পিউটারের রক্ষিত ভিডিআর পুড়িয়ে দেয়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কথিত আন্দোলনকারীরা এর আগে পুলিশকে মারধর করায় তারা এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। রাস্তা বন্ধ করে টায়ার ও আসবাবপত্র পুড়িয়েছে। আন্দোলনের আড়ালে মূলত নাশকতাকেই সে রাতে প্রাধান্য দিয়ে বিভীষিকা তৈরি করা হয়েছিল। এসব অপকর্ম কোনভাবেই আন্দোলন হতে পারে না। উপাচার্যের প্রাণনাশের চেষ্টা ও বাসভবনে তা-ব চালানোর ঘটনা কোন সাধারণ ঘটনা, হামলা বা তা-ব নয়। পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠানে রাতভর নাশকতা চালানোর সুযোগ মিলেছিল বিভ্রান্ত সাধারণ ছাত্রদের কারণে। তারা বুঝতে পারেনি কোটা সংস্কার বা বাতিলের দাবি আদায়ে রাতভর সংঘাত, নাশকতার পথ বেছে নিতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারা থেকে সরে গিয়ে চরমপন্থা চালানো সাধারণ ছাত্রদের কাজ নয়। তাদের ছাত্রঢাল বানিয়ে সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে। যে চারজন গ্রেফতার হয়েছে তারা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। অথচ ছাত্রদের আড়ালে নাশকতা কাজে এরা নেমেছিল সংঘবদ্ধ শক্তির প্ররোচনায় সম্ভবত। এ ঘটনার তদন্ত জটিল বলে মনে করছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য। কিন্তু ঘটনার জট উদ্ধার কোনভাবেই জটিল হতে পারে না পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা হলে। তারপরও তদন্ত হোক। হামলার নেপথ্যে কি ধরনের ষড়যন্ত্র কাজ করছে তা জানাও সমীচীন। যে দাবিতে আন্দোলন তার সঙ্গে উপাচার্যের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও কী কারণে এই নাশকতা, তা সচেতন মানুষ সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ থাকবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীরও। কারা, কেন, কী কারণে, কার প্ররোচনায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচার হতেই হবে।
×