ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্ল্যাকমেল করে তিন বছর ছাত্রীকে ধর্ষণ ॥ শিক্ষক পলাতক

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৭ মে ২০১৮

 ব্ল্যাকমেল করে তিন  বছর ছাত্রীকে ধর্ষণ ॥  শিক্ষক পলাতক

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৬ মে ॥ শিবচরের উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় ঐ শিক্ষক ধর্ষিতাকে ব্ল্যাকমেল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে টানা ৩ বছর ধরে ধর্ষণ করে অবশেষে পালিয়ে গেছে। এদিকে ওই ছাত্রীর অভিযোগ উত্থাপনের পর ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আরও বেশ কয়েকটি অনৈতিক কর্মকা-ের তথ্য বেরিয়ে এসেছে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অডিও রেকর্ডসহ ছাত্রীদের সঙ্গে বরবেশে ছবি এবং অজানা আরও নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্য প্রমাণাদি পেয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই একাধিক ছাত্রীর সর্বনাশ করে পালিয়ে যায় এ শিক্ষক। রবিউল ইসলাম রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে যোগদান করেন। জানা গেছে, শিবচর উপজেলার উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তিপ্রাপ্ত একই বিদ্যালয়ের এক দরিদ্র মেধাবী ও সুন্দরী ছাত্রীর ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতো। ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় ঐ ছাত্রীর প্রতি শিক্ষকের নজর আরও বেড়ে যায়। দরিদ্র হওয়ায় সহযোগিতার কারণে ওই ছাত্রী সহজেই শিক্ষক রবিউলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। প্রায় ওই ছাত্রীসহ মেধাবী ৪/৫ ছাত্রী নিয়ে এক সন্তানের পিতা শিক্ষক রবিউল তার বাসায় নিয়ে প্রাইভেট পড়াতো এবং আপ্যায়ন করতো। স্ত্রী অন্য উপজেলায় চাকরি করার কারণে তার খালি বাসায় নির্বিঘেœই ছাত্রীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। ৮ম শ্রেণীতে পড়ার সময় একদিন তার খালি বাসায় রবিউল মেয়েটিকে জোর করে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর থেকেই শুরু“হয় ব্ল্যাকমেল। সুযোগ বুঝেই ভিডিও অন্যদের দেখানোর ভয় দেখিয়ে ও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ঐ ছাত্রীকে ৩ বছর ধরে নিয়মিত ধর্ষণ করতে থাকে। একাধিকবার গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। শিক্ষক রবিউল ইসলাম আরও একাধিক ছাত্রীকে বাসায় আসা দেখে প্রায় এক বছর আগ থেকে ঐ ছাত্রী আপত্তি করে। সে এক পর্যায়ে জানতে পারে বিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে রবিউল একই ধরনের সম্পর্ক করতে বাধ্য করছে। এতে সে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে তাকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করতে থাকে। এভাবে চলতি বছর (২০১৮ সাল) ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রবিউল ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। প্রতারক শিক্ষক রবিউল ইসলাম উল্টো ঐ ছাত্রীর নামে কুৎসা ছড়াতে থাকে। উপায়ান্তর না দেখে ঐ ছাত্রী বাধ্য হয়ে ঐ শিক্ষকের বিচারের দাবিতে গত ১৩ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ করে। এরপরই বের হয়ে আসে শিক্ষক রবিউলের একের পর এক অপকর্মের তথ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘রবিউল আমার মেয়ের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আমরা জানতে পেরে মেয়েকে ফিরিয়ে আনলেও সে ভয় দেখাতো। পরে হেড স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ওর মত দুশ্চরিত্র শিক্ষকের কঠিন বিচার হওয়া উচিত।’ ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী বলে, ‘রবিউল স্যার, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে লেখাপড়ার খোঁজখবর নিত। পরে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে আমাকেও বাসায় নিয়ে পড়াত। ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমাকে একদিন জোর করে ধর্ষণ করে এবং তা ভিডিও করে। পরবর্তীতে ভিডিও দেখানোর ভয় দেখিয়ে আমাকে অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছে। সে আরও কয়েকজন সিনিয়র আপাকেও একই কায়দায় ফাঁসিয়েছে। রবিবার দুপুরে উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রোকনুজ্জামনের জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ওই স্কুলছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষক রবিউলকে প্রশ্ন করা হলে সে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে তাকে শোকজ করা হলে সে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তর দেয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগেই গত ১৪ মার্চ কৌশলে পালিয়ে গিয়ে এখন ফোনে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন রকম হুমকি দিচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাদির খালাসী বলেন, ‘আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।
×