ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মির্জাপুর গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৭ মে ২০১৮

আজ মির্জাপুর  গণহত্যা  দিবস

নিরঞ্জন পাল, মির্জাপুর ॥ আজ সোমবার ৭ মে মির্জাপুর গণহত্যা দিবস। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের এইদিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মির্জাপুরে গণহত্যা চালিয়ে কুমুদিনী হাসপাতাল ও ভারতেশ্বরী হোমসের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৬৯ জন নিরীহ বাঙালীকে হত্যা করে। দিনটি উপলক্ষে কুমুদিনী কর্তৃপক্ষ এবং মির্জাপুর গ্রামবাসী শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে স্মরণ সভা, প্রার্থনা, গীতাপাঠ, কীর্তন এবং প্রসাদ বিতরণ। এদিকে শহীদদের স্মরণে মির্জাপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে শনিবার থেকে রণদা নাট মন্দিরে তিন দিনব্যাপী নামযজ্ঞ ও লীলা কীর্তন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। ২৫ মার্চের কালো রাতের পর ৩ এপ্রিল রাজধানীর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয় মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান সাটিয়াচড়া নামক স্থানে। সেই যুদ্ধের পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী টার্গেট করে মির্জাপুরকে। একাত্তরের ৭ মে স্থানীয় কুখ্যাত রাজাকার ওদুদ মওলানার পরিকল্পনায় ও সহযোগিতায় শতাধিক পাকসেনা দুটি কনভয় যোগে কুমুদিনী হাসপতাল গেটের সামনে নামে। পাকি ক্যাপ্টেন আইয়ুবের নেতৃত্বে পাকসেনারা প্রথমে কুমুদিনী হাসপাতাল ও ভারতেশ্বরী হোমসে প্রবেশ করে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। পরে তারা লৌহজং নদীর উপর বাঁশের সাঁকো পার হয়ে মির্জাপুর গ্রামটি ঘিরে ফেলে। প্রথমেই ঘাতকরা ব্যবসায়ী কমল সাহাকে গুলি করে হত্যা করে। এর পরেই মির্জাপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কৃষ্ণ সাহার ভাই সুবাস সাহা ও পিতা মধুসূদন সাহাকে বসত ঘরের ভেতর গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। এভাবেই একে একে গ্রামটি থেকে ৩১ নিরীহ বাঙালীকে শিকারীর পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে পাকসেনারা। এরপর চলে অগ্নিসংযোগ লুটতরাজ। এদিন ছিল শুক্রবার মির্জাপুরের হাটের দিন। পাকবাহিনীর তা-বের খবর শুনে মির্জাপুর হাটটি লোকশূন্য হয়ে পড়ে। পরদিন নিহতদের লাশ আন্ধরা নদীর পাড়ে গণকবর দেয় মির্জাপুর থানার পুলিশ সদস্যরা। এদিকে কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে মির্জাপুরে না পেয়ে পাকসেনারা ওই দিনই তার নারায়ণগঞ্জের বাসায় হানা দেয়। সেখান থেকে রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবি এবং কর্মচারী গৌরগোপাল সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পাকসেনারা মির্জাপুরসহ আশপাশের ৭টি গ্রামে তা-ব চালিয়ে ৬৯ জন বাঙালীকে হত্যা করে। এর মধ্যে মির্জাপুর গ্রামের ৩৫ জন, আন্ধরা ৩ জন, সরিষাদাইড় ৮ জন, দুর্গাপুর ৪ জন, কাণ্ঠালিয়া ৩ জন, পোস্টকামুরী ৪ জন ও বাইমহাটি ২ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানী ঘাতকরা। বাড়িতে আওয়ামী লীগের অফিস থাকায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের বৃদ্ধ পিতা জয়নাল সরকারকে। পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বলায় মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে মাজম আলীকে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করে ঘাতক বাহিনী। এদিকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজাকার ওদুদ মওলানার ছেলে রাজাকার মাহাবুবের বিচার শুরু হয়েছে। শহীদ কমল সাহার ভাতিজা সুজিৎ সাহা বলেন, আমার কাকাসহ মির্জাপুর গ্রামের ৩৫ জন মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মরণে গ্রামটিতে অদ্যাবধি কোন স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি।
×