ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পা হারানো কিশোরী শুভ এসএসসি পাস করলেও তার স্বপ্ন কি অঙ্কুরেই ঝরে যাবে!

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ মে ২০১৮

পা হারানো কিশোরী শুভ এসএসসি পাস করলেও তার স্বপ্ন কি অঙ্কুরেই ঝরে যাবে!

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৬ মে ॥ শুভ। নামটা শুনলেই যেন কত কল্যাণ, আনন্দ আর সুখের মনে হয়। ছিলও তাই। আনন্দ আর দুরন্তপনায় ভরেছিল কিশোরী শুভ আক্তারের জীবন। অভাবের সংসার হলেও সুখ ছিল, শান্তি ছিল। যে বয়সে ছুটে বেড়াবে। দৌড়াদৌড়ি করবে। এ বাড়ি ও বাড়ি যাবে, দুষ্টুমি করবে। রঙিন স্বপ্ন আর আদর-সোহাগে ভরে থাকবে জীবন। সেই কিশোরী বয়সেই একটি দুর্ঘটনা তার জীবন থেকে সবকিছু কেড়ে নিল। ডান পা হারিয়ে সে আজ বাকরুদ্ধ। শুভ’র বেঁচে থাকার স্বপ্নটুকুও ধূসর হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তার মায়া ভরা চোখে কত জিজ্ঞাসা, কত স্বপ্ন, কত প্রত্যাশা-কত আয়োজন-এর সবই আজ নিরাশার দোলায় দুলতে দুলতে অন্ধকারের গভীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। পঙ্গুত্ববরণ করে বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করে শুভ চোখের জলে বুক ভাসায়। এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ এপ্রিল মাদারীপুর সদর উপজেলার হুগলীর আদিত্যপুর গ্রামের শাজাহান খোয়াজের মেয়ে শুভ আক্তারের জীবনে। শুভ এবার সদর উপজেলার আলগী হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ঢাকায় কিছু দিন থাকার পর গত ৬ এপ্রিল মাদারীপুরে আসে। ঐ দিন রিক্সাভ্যানে নিজ বাড়িতে ফিরছিল সে। পথিমধ্যে হুগলী গ্রামের মোল্লাবাড়ির সামনে আসলে জমি চাষের ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার ডান পা শরীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে শুভ’র। সুস্থ হয়ে উঠলেও কিভাবে চলাফেরা করবে শুভ? ৬ ভাই বোনের অভাবের সংসারে অসুস্থ বেকার বাবা নিজেই চলতে পারেন না। সেখানে মেয়ের চিকিৎসার খরচসহ অন্যন্যা চাহিদাগুলো কিভাবে পূরণ করবেন তিনি? তাই ভাবছে পরিবারসহ স্থানীয়রা। রবিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। শুভ জিপিএ-৩.২২ পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। এখন এই ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটির ভবিষ্যৎ কি হবে? কিভাবে পড়াশুনা করবে, কিভাবে কলেজ ভর্তি হবে? কোথায় পাবে টাকা, বই, যাতায়াতসহ নানা খরচ কিভাবে চলবে? সকল বাধা পেরিয়ে সে কি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবে? এসব চিন্তা করে গোটা পরিবার এখন দিশেহারা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার রেজাল্ট জানতে পারে শুভ। তার দু‘চোখ কান্নায় ভরে ওঠে। শুভ চায় দু‘পায়ে দাঁড়াতে না পারলেও পরিবার-সমাজের বোঝা না হয়ে পড়াশুনা করে নিজেই স্বাবলম্বী হতে। সে জানে না, তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা। না কি শুভ’র স্বপ্ন অঙ্কুরেই ঝরে পড়বে?
×