ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহার সঙ্গে অবৈধ লেনদেন- দুজনকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ মে ২০১৮

সিনহার সঙ্গে অবৈধ লেনদেন- দুজনকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা দেয়ার ঘটনায় অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে ব্যবসায়ী মোঃ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা নামের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার সকাল দশটায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দুদক সূত্র বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এস কে সিনহাকে তার বাড়ি বিক্রির ৪ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী মোঃ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার সঙ্গে আসা তাদের দুই আইনজীবী আফাজ মাহমুদ রুবেল এবং নাজমুল আলম। গত ২৫ এপ্রিল ওই দুই ব্যবসায়ীর ঢাকার উত্তরায় তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং টাঙ্গাইলের স্থায়ী ঠিকানায় দুদকে হাজিরের জন্য নোটিস পাঠানো হয়। তবে দুদকের তলবি নোটিসে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি এস কে সিনহার নাম উল্লেখ নেই। তবে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নাম উল্লেখ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, এস কে সিনহার উত্তরার ৬ তলা বাড়িটি ৫ কাঠা জমির ওপর ছিল। এ বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরু দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্ত্রি রায় ৬ কোটি টাকায় ক্রয় করেন। এ সময় বায়না দলিলকালে তিনি ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিলেন। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য নিরঞ্জন ও শাহজাহানের সহযোগিতা নেন। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা শান্ত্রি রায়ের স্বামী রনজিতের চাচা (চাচা শ্বশুর)। আর শাহজাহান রনজিতের বন্ধু। তারা বলেন, বাড়ি কিনতে বাকি ৪ কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিরঞ্জন ও শাহজাহান ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শান্ত্রি রায় জামিনদার হন। জামিনদার হিসেবে টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশপাশের বেশকিছু জমি বন্ধক রাখেন শান্ত্রি। তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নবেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালী ব্যাংক সুপ্রীমকোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। পে-অর্ডারের পরে ২৪ নবেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্ত্রি রায়কে বুঝিয়ে দেন। দুর্নীতির তদন্ত সম্পর্কে সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছিলেন, যদি পাই, যারই হোক না কেন, আমরা দুর্নীতির অনুসন্ধান করব। এরপর এ বিষয়ে জানতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবালকে জিজ্ঞাসা করা হলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, অস্বাভাবিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। নথিপত্রে উল্লিখিত ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বিচারপতি সিনহা কি না- জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহা ঋণ নেন। এরপর একই বছরের ১৬ নবেম্বর সেই অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেন। ওই বিষয়ে সম্প্রতি দুদকে আসা এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তা যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে ছুটি নিয়ে বিদেশ গিয়ে সেখান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বিচারপতি সিনহা। তিনি বিদেশ যাওয়ার পর সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে ১১ ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের’ কথা বলা হয়। এর মধ্যে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ করা হয়।
×