ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ষ পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ষ বেড়েছে জিপিএ-৫ পাসের হার বেশি রাজশাহী বোর্ডে, কম সিলেটে

পাসের হার কমেছে ॥ এবারও নতুন পদ্ধতিতে এসএসসির খাতা মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ মে ২০১৮

পাসের হার কমেছে ॥ এবারও নতুন পদ্ধতিতে এসএসসির খাতা মূল্যায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পরেও কমেছে পাসের হার। কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান, বেড়েছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। তবে বেড়েছে সর্বোচ্চ মেধা স্কোর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ পরীক্ষার্থী। গতবছর এ পরীক্ষায় ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল, জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। পরিসংখ্যান বলছে, গত নয় বছরের মধ্যে এবারই পাসের হার সবচেয়ে কম। এবার পাসের হার বেশি রাজশাহী বোর্ডে, কম সিলেটে। এদিকে পাসের হার কমার ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁসের কোন প্রভাব পড়েনি দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের (বেদু) উদ্যোগে বাস্তবায়িত নতুন পদ্ধতিতে খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হওয়ায় পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। আগে খাতার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ভালভাবে মূল্যায়নের কারণে গত বছরও পাসের হার কমেছিল। সঠিক মূল্যায়নের কারণেই এবারও পাসের হার সামান্য কমেছে। মূল্যায়নে সমতা আনার কারণে এমনটি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এবার দশ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪। এবার মোট ২৮ হাজার ৫৫৮ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৩৫৯। অর্থাৎ এবার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৯৯টি। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা তিন হাজার ৪১৫, গত বছর এ সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৩০৩, বেড়েছে ১১২টি। সাধারণ ৮ বোর্ডে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪২৩, যা গত বছর ছিল ১৪ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯। এবার পাস করেছে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৫। পাসের শতকরা হার ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮১ দশমিক ২১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট এক লাখ ২ হজার ৮৪৫, গত বছর ছিল ৯৭ হাজার ৯৬৪ জন। রবিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কপি হস্তান্তরের পর দুপুর দেড়টায় সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশের ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপরই স্ব স্ব কেন্দ্র, বিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানতে পারে পরীক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর পাশে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমান বিশ্বাস, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হকসহ বিভিন্ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পাসে এগিয়ে রাজশাহী, জিপিএ-৫ এ ঢাকা ॥ পরীক্ষার পাসের হারের দিক দিয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো সারাদেশে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে রাজশাহী বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বরাবরের মতোই শীর্ষে আছে ঢাকা বোর্ড। এবার রাজশাহী বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ৮৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে, ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছর রাজশাহী বোর্ডে সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। তার আগে ২০১৬ সালে ৯৫ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৯৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে ৯৪ দশমিক ০৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অংশ নিয়েছিল পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ৪২২ পরীক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছে চার লাখ ৩২ হাজার ২০১ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৭ সালে যা ছিল ৮৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫, গত বছর যা ছিল ৪৮ হাজার ৪৮১ জন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৮২ হাজার ৭১১ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৭ শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল মাত্র ৫৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ড থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৮৬৫, গত বছর যা ছিল চার হাজার ৪৫০ জন। যশোর শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৮৪। উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৬৯৯ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮০ দশমিক ০৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৩৯৫, গত বছর ছিল ছয় হাজার ৪৬০ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ১৪৮ পরীক্ষার্থী। পাস করেছে এক লাখ দুই হাজার ৩৭। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৯৪, গত বছর যা ছিল আট হাজার ৩৪৪ জন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ তিন হাজার ১২৪ শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৯ হাজার ৫২০। পাসের হার ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ, গত বছর ছিল ৭৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৪৬২ শিক্ষার্থী, গত বছর ছিল দুই হাজার ২৮৮ জন। সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ আট হাজার ৯২৮ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৬ হাজার ৭১০। পাসের হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮০ দশমিক ২৬ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৪৬২ শিক্ষার্থী, গত বছর যা ছিল দুই হাজার ৬৬৩ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৪ শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৮৭৬ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, গেল বছর ছিল ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দশ হাজার ৭৫৫, গত বছর যা পেয়েছিল ছয় হাজার ৯২৯ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৩৭১ এবং কারিগরি শিক্ষা পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৪১৩ শিক্ষার্থী। প্রশ্নফাঁস, তবু কেন খারাপ ফল ॥ গত ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় গত ৮ মার্চ। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, পরীক্ষায় ১৭ বিষয়ের মধ্যে ১২টিতেই নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) অংশের ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এইচএসসিতে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ। যার সুফলও পাওয়া যায়। এসএসসিতে অধিকাংশ প্রশ্নফাঁস হলেও এইচএসসিতে একটিও ফাঁস হয়নি। কিন্তু রবিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল পাসের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক সূচকেও ফল আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। জানা গেছে, নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০০৯ সালে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার বছর এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে তা ২০১৪ সালে ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে পাসের হার আবার কমছে। গত নয় বছরের মধ্যে এবারই পাসের হার সবচেয়ে কম হলেও এ ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ইতিবাচক পরিবর্তনই’ দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেছেন, বছরের প্রথম দিন সব স্কুলে নতুন বই পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, উত্তরপত্রের অতি মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খাতা দেখার অতীতের যে ত্রুটি ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা নেয়ার ফলে একটা মান আমরা অর্জন করেছি। তবে আরও উন্নত করতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্ন ফাঁসের প্রভাব ফলে পড়েনি, সঠিক মূল্যায়নের কারণে ফল খারাপ হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আসলে ইতিবাচক দিক হলো পাসের হার কমেছে। আমরা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছি। মূল্যায়নে সমতা আনার জন্য এই পরিবর্তন। শিক্ষকরা যাতে ভাল করে খাতা দেখেন, ভাল করে না দেখেই যেন নম্বর না দেন। সেদিক থেকে ভাল করে খাতা দেখার ফলে পাসের হার কমেছে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবারও পাসের হার কমেছে, এবারও পাসের হার কমেছে। তবে দেখা দরকার মূল্যায়নটা সঠিক হয় কিনা। আমাদের শিক্ষার্থী বাড়ছে। সবাই ফেল করছে তা নয়। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দুই বছর ধরে অব্যাহতভাবে প্রচেষ্ট নেয়ার ফলে কুমিল্লা বোর্ড এ জায়গায় এসেছে বলে মনে করি। তারপরেও আরও কী কী বিষয় হতে পারে তা আমরা জেনে জানাতে পারব। ফলাফলে সমতা আসছে, সবাই কাছাকাছি আছে। একটা ভিত্তি তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে পাঁচ হাজার সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এদের সবাইকে খুঁজে বের করছি। কেউ রেহাই পাবেন না। প্রথমত ওই সময় ধরা পড়েছে অনেকে। ১৫৭ জন আছে ২৫টি মামলা নিয়ে। যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের ছাত্রজীবন, শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এই বিষয়ে কাজ করছে। এর বাইরেও খাতা দেখার মধ্যে আমরা সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস হয়েছে শুধুমাত্র ৩০ নম্বরের। ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার অনেক আগে হলে ঢুকে গেছে। তাই ফলে এর সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বছরের পর বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে লাগামহীন উদারতার কারণে ফলাফলে রীতিমতো সাফল্যের বিস্ফোরণ ঘটে। শিক্ষার মানে অগ্রগতি না হলেও অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে পাসের হার ও জিপিএ-৫। এ অবস্থায় সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু ও কঠোরতা অবলম্বন করলে ফলে তার প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা ছিল সকলের। এবার দ্বিতীয়বারের মতো খাতা মূল্যায়নে নেয়া হয়েছিল নতুন উদ্যোগ। যা কার্যকর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সেসিপ প্রকল্পের একটি ইউনিট। বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের (বেদু) উদ্যোগে বাস্তবায়িত নতুন এ পদ্ধতিতে খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হওয়ায় পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। কমেছে বেশ কিছু সূচক। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য আগামী দু’তিন বছর পাসের হার আরও কমবে বলেও ধারণা করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ফল কিছুটা আগের তুলনায় খারাপ হলেও সঠিক খাতা মূল্যায়ন জরুরী হয়ে পড়েছিল। যুগের পর যুগ ধরে একটি ত্রুটিপূর্ণ খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ছিল যার পরিবর্তনের ফলে পরীক্ষার সঠিক ফল পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে উদ্যোগ কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে একটি পরীক্ষা পর্যালোচনা পর্ষদ করে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ব্যবস্থা হয়। একই খাতা ২০টি ফটোকপি করে দেয়া হয় দেশের ২০ সেরা পরীক্ষককে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদাভাবে নম্বর নেয়া হয়। দেখা যায়, ২০ জনই ২০ ধরনের নম্বর দিয়েছেন। একজন ছাত্র ৪ পাচ্ছে, আরেকজন ছাত্র এখানে সাত পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে কত পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আগেই আমরা বলেছি, যিনি প্রধান পরীক্ষক, তিনি আসলে খাতা দেখেন না। একটা রিপোর্ট দিয়ে দেন। আবার যিনি খাতা দেখেন, তিনিও ভাল করে দেখেন না। বোঝা যায়, অনেক সময় তিনি এটা ওজন করে দিয়ে দিলেন, কত পাতা লিখেছে সেই পরিমাণে। এটা হলে তো সত্যিকার অর্থে আমাদের ছেলেমেয়েদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিংবা সে একটা বাড়তি সুযোগও পেয়ে যেতে পারে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই নতুন পদ্ধতি। খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নয়নে তিন বছর ধরে কাজ করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রথমে প্রধান পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে তাদের মাধ্যমে সারাদেশে সব পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘একটি মান’ বজায় রাখার এই ব্যবস্থা চালু হয়। এ জন্য আমরা এই খাতাগুলো দেখে একটা উত্তরপত্র আগেই বাছাই করে আমাদের হেড এক্সামিনাররা বসে এবং দুই বার চেক করে একটা সাধারণ মান ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি এবং দেশের শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নিয়েই মূল্যায়ন ব্যবস্থার এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের তিন বছরের এই প্রচেষ্টার ফল হচ্ছে, সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে খাতা দেখে আমরা ফল আনতে পারছি। এতে ছেলেমেয়েরা আরও সিরিয়াস হবে। শিক্ষকরাও খাতা দেখা এবং পড়ানোর ক্ষেত্রে সিরিয়াস হবেন এবং এখানে আমরা সঠিক বাস্তবতা দেখতে পাব। শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, বিভিন্ন মানের সাড়ে ১২ শতাংশ খাতা বিভিন্ন জনকে দেখানো হয়েছে। খাতা দেখার পরে মিলিয়ে দেখা হয়েছে যে ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না। প্রধান পরীক্ষকের খাতা দেখার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের রাখা হয় যারা এটা মূল্যায়ন করবেন। যাতে দেখা যায় তারা (প্রধান পরীক্ষক) ঠিকমতো খাতা দেখেছেন কী না। এক প্রশ্নে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলছিলেন, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষক চাপের মধ্যে ছিলেন যে তার খাতা আবার দেখা হতে পারে। এজন্য তাকে কঠোর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষকের ফাঁকি দেয়ার সুযোগ ছিল না। শতভাগ হয়ে গেছে এটা আমি বলছি না। সেই দিক থেকে বলা যায় বিরাট পরিবর্তন এখানে এসেছে। নতুন পদ্ধতিতে একই ধারায় নম্বর দেয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। তবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে কাম্য ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ছায়েফ উল্লাহ বলছিলেন, খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে গেল বছর। এটা অত্যন্ত কঠোর ও কার্যকরি একটা উদ্যোগ। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে সব কাজ করেছি। এতে ফলাফলে একটু প্রভাব পরলেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফল নিয়ে কথা বলছিলেন বাংলাদেশ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার। তিনি বলছিলেন, তার প্রতিষ্ঠানে পাসের হার প্রায় শতভাগ। তবে সরকারের নেয়া নতুন খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে পাসের হার কিছুটা কমেছে। তবে নতুন এ উদ্যোগ দেশের শিক্ষার জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মত তার। ফল পুনঃনিরীক্ষা ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে আজ ৭ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইজেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
×