ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ না হলে পাহাড়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৭ মে ২০১৮

অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ না হলে পাহাড়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে

মোয়াজ্জেমুল হক/ জীতেন বড়ুয়া ॥পাহাড়ে উপজাতীয় দুটি সংগঠনের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে সহিংস হত্যাকা-ের যে ঘটনা ঘটে গেছে তা নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে এর অবসান নিয়ে সকলের মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) ও ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট) এর দ্বিধাবিভক্ত চার গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রক্তের যে হোলি খেলায় মেতে উঠেছে তা নিয়ে পাহাড়ী বাঙালী নির্বিশেষে সকলের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রমতে, পাহাড়ে অবাধ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের সুযোগ যতদিন থাকবে ততদিন এ ধরনের ঘটনা কম বেশি ঘটতে থাকবে বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা। দুর্বৃত্তদের মূল শক্তি অস্ত্র। আর এসব অস্ত্রের চালান আসছে পার্শ্ববর্তী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে। তিন দেশের সীমান্ত সংলগ্ন অরক্ষিত এলাকা দিয়ে অস্ত্র, চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই অবৈধ তৎপরতায় লিপ্ত। তিন দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী যৌথভাবে এসব অস্ত্রধারী ও অস্ত্রের আদান-প্রদান বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি থামানো যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বর্তমানে ইউপিডিএফএ’র অন্তর্দ্বন্দ্ব মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। জেএসএস’র মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত ইউপিডিএফএ’র তুলনায় কম। সন্তু লারমা ও প্রসিত খিশার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ব্যাপক বিরোধিতায় রয়েছে। পক্ষান্তরে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র মধ্যেও বিভক্তির পর নিজেদের একটি গ্রুপ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। আবার এই দুই সংগঠনের বিভক্ত চার গ্রুপে সশস্ত্র ক্যাডাররা চাঁদাবাজিতে পাহাড়ের জনজীবন অতিষ্ঠ করে রেখেছে। দীর্ঘদিন থেকে চাঁদাবাজি চলে আসছে এবং তা দিন দিন ব্যাপৃত হচ্ছে। পাহাড়ে সাধারণ মানুষ এদের সামগ্রিক অপতৎপরতায় একদিকে যেমন অতিষ্ঠ আবার নিজেদের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে পরপর দুদিন ৬ হত্যাকা- প্রশাসনকেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছে। ইতোমধ্যে দুই ঘটনা পুলিশী তদন্ত চলছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। এদিকে রাঙ্গামাটির বেতছড়িতে সন্ত্রাসীদের ব্রাসফায়ারে নিহত মাইক্রোচালক মোঃ সজিব হত্যাকা-ের বিচার ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে অপহৃত তিন যুবকের মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য অধিকার ফোরাম নামে দুইটি বাঙালী সংগঠনের ডাকে রবিবার সকাল সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। তবে পার্বত্য অধিকার ফোরাম নামের সংগঠনটি একই দাবিতে আলাদাভাবে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিলেও প্রশাসনের আশ^াসের প্রেক্ষিতে আজ সোমবারের হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এদিকে হরতালের সমর্থনে ভোর থেকে শহরে পিকেটিং করা হয়। খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ¦ালিয়ে পিকেটিং ও মিছিল করেছে হরতাল সমর্থকরা। এ সময় সড়কের উপর টায়ার জ¦ালানোর চেষ্টাকালে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হরতালে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ বাসগুলো ভোরে পুলিশ প্রহরায় শহরের প্রবেশ করেছে। শহর কেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজ ও অফিসগামীরা। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান। গত শনিবার খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হরতালের ডাক দেয় বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য অধিকার ফোরামের নেতৃবৃন্দ। খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটো জানান, জেলার সার্বিক পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইউপিডিএফের বক্তব্য ॥ গত ৬ মে দৈনিক জনকণ্ঠের ‘পাহাড়ে টার্গেট সিরিয়াল কিলিং’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে ইউপিডিএফ নেতা নিরন চাকমা তার বক্তব্যের অংশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন । তিনি জানিয়েছেন, প্রকাশিত সংবাদে তার বক্তব্যটি ভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে যা তিনি বলেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী একটি বিশেষ মহল। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকার ও নিরাপত্তাবাহিনীর কায়েমি স্বার্থবাদী একটি গোষ্ঠী জড়িত রয়েছে। তারাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও অশান্তি জিইয়ে রাখতে ‘নব্য মুখোশ বাহিনীর মতো সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টি করে তাদের মদদ দিয়ে খুন-গুম-অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করছে।
×