ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বোরোর বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৭ মে ২০১৮

বোরোর বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে ॥ কিশোরগঞ্জে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাওড়ে এখন বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। এবারের বাম্পার ফলনে বোরো উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি বিভাগ ধারণা করছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জমি আবাদ বেশি হওয়ার পাশাপাশি হেক্টর প্রতি ফলনও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। এতে করে হাওড়াঞ্চলের কৃষকরা গত বছরের আগাম বন্যার ধকল কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চলতি সপ্তাহে হাওড় এলাকায় ভারি বর্ষণসহ বন্যার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এজন্য আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলায় হাইব্রিড, উফশী এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৮২ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হওয়ায় এবার প্রায় পৌনে ৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলার হাওড়ে হাওড়ে এখন পাকা ধান কাটার তাড়া থাকলেও শ্রমিক সংকটের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কৃষক শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো ধান কাটতে পারছেন না। চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না একজন শ্রমিক। শ্রমিক মিললেও একর প্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা। এছাড়া চোখ রাঙাচ্ছে ভারি বর্ষণ। ফলে হাওড় ভর্তি পাকা ধান নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওড়ের কৃষক। স্থানীয়রা জানায়, গত বছর বন্যার পর অভাবের তাড়নায় এলাকায় বেশির ভাগ শ্রমিক কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছে। কৃষি শ্রমিকরা ইতোমধ্যে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া কৃষির চেয়ে অন্য কাজে মজুরি বেশি হওয়ায় বেশ আগে থেকেই কৃষি শ্রমিকরা পেশা বদল শুরু করেছে। তাছাড়াও অন্যান্য বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, রংপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য জেলার হাওড় এলাকায় আসত। বিগত বছরসমূহে পরপর অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আগের মতো আর ধান কাটা শ্রমিকরাও আসছে না। এছাড়া বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনাও ধান কাটা শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে। কৃষকরা জানায়, একদিকে ধান কাটার কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে পাকা ধান কাটা যাচ্ছে না। অন্যদিকে কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তার কারণে হাওড় থেকে কাটা ধান জমি থেকে বাড়িতে নেয়া যাচ্ছে না। কোন কোন এলাকায় কৃষক জমির ধান কাটতে পারলেও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে বেহাল যোগাযোগের কারণে কাটা ধান কৃষক বাড়িতে নিতে পারছেন না। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের একমাত্র কষ্টের ফসল। এ অবস্থায় জমিতে ফলানো সোনার ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত এ নিয়ে তাই কৃষকদের উদ্বেগ আর শঙ্কা যেন কাটছে না।
×