ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘উন্নত জগত গঠন করুন’-আজ আইইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৭ মে ২০১৮

‘উন্নত জগত গঠন করুন’-আজ আইইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্র্রকৌশলীদের পেশাজীবী সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-বাংলাদেশের (আইইবি) ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দিবসটিকে কেন্দ্র করে আইইবি মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। প্রতিবছর দিবসটিকে আইইবি ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর রমনায় অবস্থিত আইইবি কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু, প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামান, ড. প্রকৌশলী এম এম সিদ্দিক, প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ আবুল হোসেন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার, প্রকৌশলী মোঃ আবুল কালাম হাজারী, প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রশিদ, ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্র্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিউল্লাহ সিকদার, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোঃ মুসলিম উদ্দিন, প্রকৌশলী মোঃ মোজাম্মেল হক, সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ শাহাদাৎ হোসেন শীবলু প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ এবার ইঞ্জিনিয়ার্স ডেতে ‘উন্নত জগত গঠন করুন’ সেøাগানকে সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা পালন করার জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই সেøাগান সামনে রেখেই প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইনস্টিটিউশনের যাত্রা শুরু হয়। আইইবি এই দেশের প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর আইইবিই একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান, যার সদর দফতর বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ কারণেই আইইবি নিয়ে আমাদের গর্বের অনেক কিছু রয়েছে। আইইবি দেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, বিশ্বের নিত্য নতুন আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রকৌশলীদের পরিচয় করে দেয়া, বিদেশী প্রযুক্তিকে দেশোপযোগী করে প্রয়োগ, বিভিন্ন কারিগরি ইস্যু, উন্নয়ন কর্মকা-ে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সহযোগিতা করা এবং প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনে ইনস্টিটিউশন ৭০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রকৌশলীগণ যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত উন্নয়নই একটি জাতির উন্নয়নের মূলধারা। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে আমাদের বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছি। বর্তমান সরকার দেশে সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি ২০১৯ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। বিগত ৯ বছরে সুলতানা কামাল সেতু, শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, চট্টগ্রামে শাহ্ আমানত সেতু, বরিশালে শহীদ সেরনিয়াবত সেতু এবং রংপুরে তিস্তা সেতুসহ ৫ হাজার মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৪টি বৃহৎ সেতু এবং ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরের দুঃসহ যানজট নিরসনের জন্য প্রায় ২ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা ৩য় ফেইজ হতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ স্টেশন বিশিষ্ট উভয় দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম ‘মাস র‌্যাপিড টান্সপোর্ট (এমআরটি), মেট্রোরেল বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যুতকে অগ্রাধিকার খাত এবং উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করে এ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সরকার ২০২১ সাল পর্যন্ত নতুন বিদ্যুত উৎপাদনে আনার পরিকল্পনা করেছে। সে অনুযায়ী এ বছর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে চার হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত। একইভাবে ২০১৯ সালে চার হাজার ৮৩৩, ২০২০ সালে চার হাজার ৭২ এবং ২০২১ সালে তিন হাজার ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এ চার বছরে যুক্ত হওয়া বিদ্যুতের মধ্যে সরকারী খাত থেকে আসবে আট হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত এবং বেসরকারী খাত থেকে সাত হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট। এছাড়া পরামাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া পরিবেশ উন্নয়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণে প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে বলা হয়, সরকারের সঙ্গে প্রকৌশলীদের নিবির সম্পর্কের কারণে কাজে গতি রয়েছে। ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, ৭ মে সোমবার আইইবি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল ৭টায় আইইবি সদর দফতর ও ঢাকা কেন্দ্র্রের যৌথ উদ্যোগে আইইবি সদর দফতরে জাতীয় ও আইইবি’র পতাকা উত্তোলন, শপথ গ্রহণ, র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) উদ্যোগে ‘কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক আইইবি’র কাউন্সিল হলে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রী এ.কে.এম. শাহজাহান কামাল। সন্ধ্যা ৭টায় আকাশে আতশবাজি ফুটানো হবে। ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও আইইবি’র বিভিন্ন প্রকৌশল বিভাগ, কেন্দ্র-উপকেন্দ্র এবং ওভারসিস চ্যাপ্টারসমূহে মাসব্যাপী ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’র কর্মসূচী পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে।
×