ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর স্কুলগুলোতে আবেগঘন উদযাপন

ভাল ফলে কচিকাঁচাদের মুখে হাসি, আনন্দের ফোয়ারা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৭ মে ২০১৮

ভাল ফলে কচিকাঁচাদের মুখে হাসি, আনন্দের ফোয়ারা

মোরসালিন মিজান ॥ কত যে পরীক্ষা এখন! পরীক্ষার্থীরা ছোট হলেও, বড় বড় পরীক্ষা। রাত দিন লেখাপড়া। ছাত্র নং অধ্যয়নং তপঃ। এরপরও পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় ঘনিয়ে এলে বুক ধুঁকধুঁক শুরু হয়ে যায়। এবারও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনেকেই ফল প্রকাশের আগের রাতটি নিশ্চিত করেই বলা যায়, না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। কত ভাল ফল হবে? যদি কিছু মন্দ হয়! কত ভাল বা মন্দ হতে পারে? এসব ভেবে হয়ত রাত পার হয়ে গেছে। আরও বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন বাবা-মায়েরা। যেন তারা নিজেরাই পরীক্ষা দিয়েছেন! সকলের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে রবিবার। এদিন চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তার পর থেকেই কচিকাঁচাদের মুখে হাসি। আনন্দের ফোয়ারা। শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দেয়া তথ্য বলছে, সারাদেশে ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে পাস করে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। পাস বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। জিপিএ ৫ নিয়ে এখন দারুণ আগ্রহ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ৫৫ হাজার ৭০১ জন ছাত্র। ৫৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী। দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ফল পাওয়া শুরু হয়ে যায়। মোবাইল ফোনে মুহূর্তেই চলে আসে পাস-ফেলের তথ্য। কিন্তু আনন্দটা সহপাঠী আর শিক্ষকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা চাই। তাই দুপুরের আগেই নিজ নিজ স্কুলে সমবেত হয়েছিল শিক্ষার্থীরা। ঢাকার স্কুলগুলোতে বেলা ১টার পরই চলে আসে ফলাফল। টানিয়ে দেয়া হয় নোটিস বোর্ডে। অমনি সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় উৎসব। হাসিরাশি আনন্দ। নাচ গান হৈ হুল্লোড়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দেয়Ñ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে মনে হচ্ছিল, উৎসবের রাজ্য। এখান থেকে চলতি বছর ১ হাজার ৬১২ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৬১০ জন। সর্বমোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৪১ জন। ফল জানার পর ইউনিফর্ম পরা মেয়েরা কতভাবে যে আনন্দ প্রকাশ করছিল! খোলা চত্বরে শত শত মেয়ে। ফড়িংয়ের মতো উড়ছিল যেন। দলবেঁধে নাচছিল। গাইছিল কেউ। এভাবে নিজেদের অর্জনের কথা জানাচ্ছিল তারা। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া রাইয়ান সানজিদা বলল, আমার রেজাল্ট আগে থেকেই ভাল। তবে এসএসসিতে আরও ভাল করতে হবে। বাবা-মা ও টিচাররা আমার কাছে আশা করেছিলেন। আমি নিজে তো খুশিই। তাদেরও খুশি করতে পেরেছি। খুব ভাল লাগছে। প্রায় একই ছবি দেখা গেল মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে। এখানে ছেলে মেয়েরা একসঙ্গে দারুণ নেচে গেয়ে উদযাপন করছিল। শিহাব নামের এক শিক্ষার্থী গরমে ঘামছিল খুব। ক্লান্তও মনে হচ্ছিল কিছুটা। এর পরও স্থির হয়ে কোথাও দাঁড়াচ্ছিল না। এক ফাঁকে সে বলল, গতকাল রাতে ঘুমোতে পারিনি। পরীক্ষা ভাল দিয়েছি। এরপরও টেনশন হচ্ছিল। সেই টেনশন এখন দূর করছি! রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ফল যথারীতি ভাল। উদযাপনটাও দারুণ। একদল ড্রাম পেটাচ্ছিল। একদল ব্যস্ত ছিল গ্রুপ ছবি তোলায়। একটু পর পর একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছিল। হাত ধরাধরি করে চর্কির মতো ঘুরছিল মেয়েরা। সুমন নামের এক শিক্ষার্থী বলল, এই আনন্দ এত বেশি যে, কোনভাবেই প্রকাশ করা যাবে না। আপনি তো বাইরের দৃশ্যটা দেখছেন। আমাদের ভেতরে তারও বেশি আনন্দ এখন। ফল প্রত্যাশীদের অনেকের সঙ্গেই এদিন এসেছিলেন বাবা মায়েরাও। সন্তানের ভাল খবরে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে অনেক অভিভাবকের চোখ থেকে। মাইল স্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হয় ফরিদা বেগমের সঙ্গে। বললেন, আমার ছেলে এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালভাবে পাস করেছে। আমি ওকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করতাম। দুষ্টুমি করে সময় কাটিয়ে দিত। ফেসবুকেব মোবাইল ফোনে সময় নষ্ট করত। আমি তাই খুব বকেছি। কিন্তু আজ দেখলাম ও জিপিএ ৫ পেয়েছে...। কথা শেষ হলো না। মায়ের চোখে জল। আনন্দঅশ্রু। এভাবে হাসি কান্নায় দারুণ একটি দিন পার করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এমন আনন্দঘন দিন তাদের জীবনে বার বার আসুক। সফলভাবে পাস করা ছেলে মেয়েরা মানুষ হওয়ার পরীক্ষায় পাস করুক। শুধু চাকরির জন্য নয়, ব্যক্তি স্বার্থে নয়, দেশের জন্য কাজ করুক। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে- সকলের তাই প্রত্যাশা।
×