ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফরাসীরা ক্ষুব্ধ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদ

প্যারিস হামলাকারীর অনুকরণে ট্রাম্পের অঙ্গভঙ্গি

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৭ মে ২০১৮

প্যারিস হামলাকারীর অনুকরণে ট্রাম্পের অঙ্গভঙ্গি

সাধারণ জনগণকে অস্ত্র দিলে ২০১৫ সালের প্যারিস হামলা ঠেকানো যেত এমন ইঙ্গিত দিয়ে ফরাসীদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির। ‘বুম! এখানে এসো, বুম! এখানে এসো, বুম!’ প্যারিসের হামলায় বন্দুকধারীরা এক এক করে ডেকে নিয়ে গুলি চালিয়েছিল বুঝিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের অনুকরণ করে এমনটা বলেন এবং হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিশানায় তাক করার অঙ্গভঙ্গি করেন। ট্রাম্প এমনটি বললেও ২০১৫ সালে ওই সন্ত্রাসী হামলায় আদতে এমনটা ঘটেনি। বন্দুকধারীরা সেবার আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে এবং বোমা ভর্তি বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৩০ জনকে হত্যা করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ট্রাম্পকে হতাহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৩ নবেম্বর ২০১৫ সালে হামলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের ব্যাপারে ফ্রান্স তার দৃঢ় অসম্মতি প্রকাশ করছে। হতাহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য অনুরোধ করছি আমরা। হামলার সময়কালীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ অভিহিত করেছেন। ফ্রান্স ও এর মূল্যবোধ সম্পর্কে ট্রাম্প যা ভাবেন, তা তার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে বলেও ইঙ্গিত করেছেন ওলাঁদ। তৎকালীন ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস টুইটারে ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি অশালীন এবং অযোগ্য। আর কি বলতে পারি? টেক্সাসের ডালাসে ন্যাশনাল রাইফেলস এ্যাসোসিয়েশনে (এনআরএ) দেয়া ওই বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লন্ডনে ছুরি হামলার মাত্রা নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন। শহরটির একটি হাসপাতালকে ‘যুদ্ধক্ষেত্রের’ সঙ্গেও তুলনা করেছেন তিনি। ট্রাম্পের এ অবস্থানের সমালোচনা করে লন্ডনের এক জ্যেষ্ঠ শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক করিম ব্রোহি বলেছেন, ‘ছুরি হামলা মোকাবেলায় বন্দুক ব্যবহারের প্রস্তাব হাস্যকর।’ এনআরএয়ের সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, ‘বন্দুকের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে কড়া আইন ফ্রান্সের প্যারিসে। সেখানে কারও কাছেই অস্ত্র থাকে না, কারও কাছেই না। আমরা সবাই ১৩০ এর বেশি (নিহত) মানুষকে স্মরণ করতে পারি, স্মরণ করতে পারি আরও অসংখ্য ব্যক্তিকে, যারা ভয়াবহ, ভয়াবহভাবে আহত হয়েছিলেন। আপনারা কি খেয়াল করছেন, কেউ এখন তাদের কথা বলে না। বন্দুক থাকা ছোট একটি দলের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছিলেন তারা। সন্ত্রাসীরা সময় নিয়েছিল এবং এক এক করে গুলি চালিয়েছিল। বুম! এখানে এসো। বুম! এখানে এসো, বুম! কিন্তু যদি একজন কর্মচারীর কাছে, বা একজন আয়োজকের কাছে কিংবা ওই কক্ষে থাকা একজনের হাতেও বন্দুক থাকত, যা তাক করা থাকত উল্টো দিকে, সন্ত্রাসীদের হয় পালিয়ে যেতে হতো, না হলে গুলি খেতে হতো। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একদল জিহাদী ফ্রান্সের রাজধানীতে ওই হামলা চালিয়েছিল। স্তাদে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ চলাকালে বাইরে বোমার বিস্ফোরণ, বাতাক্লঁ কনসার্ট হলে সঙ্গীতানুষ্ঠান চলাকালে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ও নির্বিচার গুলি এবং বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও বারের সামনে বোমার বিস্ফোরণ ও এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছিল হামলাকারীরা। হামলাকারীরা শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মিও করেছিল। পরে পুলিশী অভিযানে সেই সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে। সন্ত্রাসীদের প্রায় সবাই ঘটনাস্থলে কিংবা পুলিশী অভিযানে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সালাহ আবদেস্লাম নামে এক সন্দেহভাজনকে আটক করার পর জেলে পাঠানো হয়।
×