ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ শেখ হাসিনার মতো নারীরা কবে জাগবেন?

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৭ মে ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ শেখ হাসিনার মতো নারীরা কবে জাগবেন?

সিডনিতে সামনা-সামনি বসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা শোনার সময় তার ব্যক্তিত্ব খেয়াল করছিলাম। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা দেখতেও পিতার মতো। কি অসাধারণ স্মৃতিশক্তি। এখন তাঁর অবয়বে যে প্রজ্ঞা ও সাহস সেটি কেন নারীদের ভেতর জাগছে না? যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, বিরোধী দলের নেতা নারী, বিএনপির নেতাও নারী সেখানে নারীশক্তির অপমান ব্যথিত করে। সেদিন দেখেছি পুরুষ নেতারা কত অসহায়। কিভাবে তারা প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। শেখ হাসিনা দুনিয়ায় যেসব পদক ও সম্মান পাচ্ছেন তার মূলে নারীশক্তি। সিডনিতে এসে যা পেলেন তাও সে কারণে। তাই নারীর বিশালতার জন্য আজ তাঁকে সামাজিক মিডিয়াও জীবনে অনুসরণ করাও জরুরী। সামাজিক মাধ্যমের শক্তি এখন অস্বীকার করার পর্যায়ে নেই। তার জোর ও তার শক্তিতে অনেক অন্যায়-অপমান নত হতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যম বা মিডিয়ার পাশাপাশি সমান্তরাল এই সামাজিক মিডিয়া প্রায়ই তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। আজ দেখি অনেকেই বিশেষত নারীরা তাদের ছবির জায়গাটি কালো বর্ডারে মুড়ে রেখেছেন। এর কারণ জানলাম প্রায় ধারাবাহিকভাবে নারী নির্যাতন ও নারীদের প্রতি আক্রমণের জন্য এই প্রতিবাদ। এমন করা যেতেই পারে। এর আগেও আমরা কালো বর্ডার বা নিজেদের কান ধরে রাখার ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রতিবাদ এসেছিল রানা প্লাজার নিহত আহতদের নিয়েও। কোন কোনটি সাময়িক দুর্ঘটনা আর কিছু বিষয় হয়ে যায় নৈমিত্তিক। নারীদের প্রতি আমাদের ভালবাসা বা আকর্ষণ যতটা থাক না কেন মূলত আমাদের সমাজে তারা অসহায়। আপনি সুলতানা কামাল কিংবা মুন্নী সাহা বা তুরিন আফরোজকে দিয়ে সমাজের বিবেচনা করতে পারবেন না। আরও যাঁরা মিডিয়া কিংবা সমাজ বা দেশকে আলোকিত করে আছেন তাদের কথা আলাদা। সাধারণ নারীদের জন্য সমাজ ও সমাজ নিয়ন্ত্রক পুরুষের ভূমিকা বরাবরই আগ্রাসী। বিগত একুশ বছর এমন সক সমাজে বাস করছি যেখানে নারীদের অপমান করার সুযোগ সীমিত। বিষয়টা এমন, ঘরে আপনি আপনার স্ত্রী বা পতœীকে আক্রমণ করতে পারেন। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নামে পরিচিত নারী নির্যাতন এখানেও প্রচুর। তবে কোনটি আইন বা বিচারের আওতার বাইরে না। বিচার চাইলেই ঘটনা ঘুরবে। পুরুষ সে যত শক্তিশালী হোক না কেন তার জীবনের বারোটা বাজতে দেরি হবে না। সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যার ভেতর ও কিন্তু একটা বড় বিভেদরেখা আছে। পরিবারের ঘটনা ব্যক্তিগত। সেটা নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য। অন্যদিকে সামাজিক নির্যাতন প্রমাণ করে সমাজ ও দেশ মূলত এখনও আদিম আর বিচারহীন। আমাদের সমাজে মানে বাংলাদেশে এখন নারীদের প্রতি সহিংসতা বড় একটা হাতিয়ার ধর্ষণ। এত ধর্ষণ আগে কখনও দেখা যায়নি। সঙ্গে জুটেছে বিকৃতি। যেমন ধরুন এরপর তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা। এই যে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া এর একটা ব্যাখ্যা ভেবে দেখুন, জবাব পেয়ে যাবেন। আমাদের ছোট বেলায় আমরা জানতাম এবং দেখেছি তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয় যারা অপরাধী। যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠত তাদেরই এমন শাস্তি দিত সমাজ। বিচারও হতো বৈকি। এখন দেখছি উল্টো। যারা ধর্ষিতা তারা যেন বিচার চাইতে না যায় সে ভয় দেখানোর জন্য আগেভাগে তাদের ন্যাড়া করে দেয়া হয়। তাদের এমন ভয়-ভীতি বা চাপের মুখে রাখা হয় যাতে তারা আইনের কাছে যেতে সাহস না পায়। বলাবাহুল্য, এর পেছনে যে মদদ বা শক্তি তার নাম রাজনীতি। রাজনীতি না হলেও রাজনৈতিক দলের কারণেই অপরাধীরা এসব অপকর্ম করে পার পেয়ে যায়। এখন যারা সরকারে তাদের প্রতি প্রশাসনের নেকনজর আর দুর্বলতা সর্বজনবিদিত। এর কারণও লেনদেন, হিসাব-নিকাশ। সেই হিসাবের হাত ধরে গড়ে ওঠে অপশক্তি বলয়। যারা আমাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করার পর মাথা মুড়িয়ে দিতেও কসুর করে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি আমাদের ফেইসবুক পাতা কিংবা সামাজিক মিডিয়া কালো করে রাখলেই এর সমাধান পাব? না আমাদের দরকার সামাজিক শক্তি? শক্তি বলছি এই কারণে দীর্ঘ সময় অন্যায় আর অনাচার চললে তা নিয়মে পরিণত হয়ে যায়। বাংলাদেশে নারীদের প্রতি যে অপমান আর তাদের ভোগ্যপণ্যে পরিণত করার যে দুঃসাহস তার সূচনাতো আপনার আমার ঘরে। দিনের শুরু থেকে রাত অবদি যে মহিলা নানারকম বাক্যবাণ আর নিপীড়নের শিকার হন তিনিও আসলে নির্যাতিত। আপনি পুরুষ তাই ভাত খেয়ে প্লেট ধোবেন না। আপনি পুরুষ তাই পানি ঢেলে খাবেন না। আপনার টাই থেকে জুতোর ফিতে বাঁধবে নারী সেটাও নির্যাতন নয়? এই প্রক্রিয়ায় বড় হওয়া ছেলেটি হয়তো বাড়িতেই নারীদের মারধরের শিকার হতে দেখেছে। তার সামনেই হয়ত অশ্লীলতার শিকার হয়েছে তার আত্মীয়রা। সে কামনা এক সময় তার মনেও লোভের বাসা তৈরি করে রেখেছে অগোচরে সংগোপনে। যখন তা বিকৃতির আকার নিয়ে বেরিয়ে আসে কেবল তখনই আমাদের টনক নড়ে। বলেছি, রাজনীতি এদের ভরসা যোগায়। তারা জানে আইন কিছু করতে পারবে না। বিচার ব্যবস্থা সাময়িক দ- দিলেও হয়তো একসময় ঠিকই বেরিয়ে আসা যাবে। কারণ, তার পিতা-মাতা বা ভাইদের কেউ আছে উঁচুপদে। রাজনীতিতে তাদের পরিবার বা সামাজিক প্রভাবে যে কোন অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাবার সম্ভাবনা আছে জেনেই তারা এসব কাজে জড়িত হয়। আর একটা বড় বিষয় লোভ ও লালসা। এই লালসা এখন বাংলাদেশের সমাজে বড় ব্যাধি। খুব অবাক লাগে সবাই যখন তারস্বরে উন্নয়নের বড়াই করেন। এই উন্নয়ন আসলে টিকতে হলে কি দরকার বা কাদের দরকার তা নিয়ে মাথাব্যথা আছে কারও? বিকৃত মানসিকতার তারুণ্য কীভাবে এই পতাকা সমুন্নত রাখবে? নারী নারীদেহ বা যৌনতা কোনকালে ছিল না? কিন্তু এমন ধর্ষণ লিপ্সা ছিল? কারণ সমাজের সুষম বিকাশ আজ নেই। নেই মনোজাগতিক নৈতিকতার দেয়াল। শুধু আইন বা বিচার দিয়ে হয় না। সেটা ভয়ের দেয়াল। তার বাইরে আর একটি দেয়ালের প্রয়োজন বড় বেশি যার নাম নৈতিকতার দেয়াল। বাংলাদেশের বহু মানুষ মনে করেন উন্মুক্ত সামাজিক মিডিয়া একটি বড় কারণ। দ্বিমত করব না। তবে আমাদের তারুণ্য বিদেশের নারীদের খোলামেলা পোশাকটাই দেখে বা জানে, তারা জানে না কারও সম্মতি বা পারস্পরিক সমঝোতার বাইরে গায়ে হাত দূরে থাক তাকালেও খবর আছে। তাদের হাতের যন্ত্রে যে অবাধ যোগাযোগ তারা তার ব্যবহার জানে নিয়ন্ত্রণ জানে না। তাদের জানানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় নেই কারও। তাই নারীদের বলি, আপনারা কালো বর্ডারে মুখ লুকোবেন না। বরং যারা কালো হাত বা কালো চেহারায় দানব তাদের কালো জগতে ঠেলে দিন। আপনারা মা, বোন, পত্নী বা আত্মীয়া আপানদের যারা পণ্য মনে করে যারা ধর্ষণের শিকার মনে করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনার চাইলেই পারেন। ঘরে বাইরে মিডিয়ায় আওয়াজ তুলুন। এদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। বিরোধী দলের নেতা নারী। খালেদা জিয়া, স্পীকার সবাই নারী। আপনার তাদের কাছে বিচার চান। আর আপনার সন্তান ও স্বামীর বিষয়েও কঠোর হয়ে উঠুন। আত্মপরিচয় ও সঙ্কটে মাথা নত করে নিজে আঁধারে মুড়ে কি হবে? তারচেয়ে জরুরী আপনাদের আলোয় ওদের অন্ধ করে দেয়া। নারী জাগলে ভূত, শয়তান, ধর্ষক পালানোর পথ পাবে না।
×