ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মহাদুর্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৭ মে ২০১৮

মহাদুর্যোগ

শনিবার জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় ‘বজ্রপাতে আরও ৮ জনের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শঙ্কা আরও বেড়ে যায়। দেখা যাচ্ছে বজ্রপাতে দুঃখজনক মৃত্যুর শিকার যারা হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই কৃষক। একই দিনে জনকণ্ঠের প্রথম পাতার আরেকটি সংবাদ শিরোনামÑ ‘এবার বর্ষায় সবচেয়ে বড় দুর্যোগ বজ্রপাত’। আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন- সরকারীভাবেও বলা হয়েছে, অতি ও ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যা এবার দ্রত আসতে পারে। গত বছর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল ২৪টি জেলা। এবারের বন্যায় ৩৭ থেকে ৪১টি জেলা আক্রান্ত হতে পারে। এমন পূর্বাভাস আবহাওয়া বিভাগের। সরকার বিষয়টির ওপর গুরত্ব দিয়ে বন্যা মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বন্যা মোকাবেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। দুর্যোগের সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। অকালে কালবৈশাখীর কবলে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চল। এ সময়ে বজ্রপাত একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার বজ্রপাত যেন বেড়ে গেছে। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা বেশি করে হচ্ছে। তাই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা। বিশেষজ্ঞরাই ভাল বলতে পারবে। আশা করা যায় তারা এ নিয়ে যথাশীঘ্র কথা বলবেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচ- বেগে প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে সম্প্রতি বেশ কিছু দিন। এ সময় ধূলিঝড়, বজ্রপাত এবং কোথাও মুষলধারে বৃষ্টিপাতের খবরও পাওয়া গেছে। রাজধানীতে সকাল বেলায় নেমে আসছে রাতের অন্ধকার। হচ্ছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখীর তা-ব। এতে বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে। কোন কোন এলাকা বিদ্যুতবিহীন হওয়ায় ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। প্রতিবছর সারা বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে গড়ে ২৪ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে এবং আহত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত উন্নত বিশ্বে (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) বজ্রপাত ছিল একটি ভয়াবহ দুর্যোগ, কিন্তু বিংশ শতাব্দী থেকে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে মূলত নগর জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং কৃষিজ জনসংখ্যার হ্রাসের কারণে। বিশ্বে মোট বজ্রপাতের ৭৮ শতাংশ সংঘটিত হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। দক্ষিণ এশিয়া, তথা বাংলাদেশ যেহেতু ক্রান্তীয় অঞ্চলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, প্রাক- মৌসুম (মার্চ-জুন) থেকে শুরু করে মৌসুমি (জুলাই-অক্টোবর) সময় পর্যন্ত বজ্রপাতসহ বজ্রঝড় একটা নিয়মিত বিষয়। যদিও প্রতিবছর বজ্রঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডোতে প্রাণহানিসহ ফসলাদির ক্ষতি কিছু না কিছু হয়েই থাকে, বজ্রপাতে নিহত বা আহত ব্যক্তিদের কোন পরিসংখ্যান বা ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত হয়নি। বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার পরিকল্পনা অবশ্যই নিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আগে তালগাছ বা খেজুর গাছ বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করত। এখন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং শহরাঞ্চলে গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলায় বজ্রপাতের ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তাই মোবাইল ফোনের টাওয়ার ছাড়াও যেসব টাওয়ার বেশ উঁচু, সেগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর্থিংয়ের মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারে।
×