ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত সংযোগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ৬ মে ২০১৮

বিদ্যুত সংযোগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ঘরে ঘরে বিদ্যুত সংযোগ প্রকল্পকে পুঁজি করে রাজারহাটে চলছে বিদ্যুত সংযোগ বাণিজ্য। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতসংযোগ প্রদানের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। টাকা না দেয়ায় বাড়ির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন গেলেও সংযোগ পায়নি অনেকে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারাদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুতসংযোগের অংশ হিসেবে আগামী জুন মাসের মধ্যে রাজারহাটের শতভাগ গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছানোর কাজ করছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুত সমিতি। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে রাজারহাট উপজেলায় ২৯ হাজার ১৭৫টি পরিবারের মাঝে বিদ্যুতসংযোগ প্রদান করবে পল্লীবিদ্যুত সমিতি। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুতসংযোগ দেয়ার লক্ষ্যে ডিজাইন তৈরির সময় থেকেই উপজেলার হরিশ্বর তালুক ও তালুক আষাঢ়ু গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দালাল চক্র বিদ্যুতসংযোগ গ্রহণে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে। এ সময় দালাল চক্রের দাবিকৃত টাকা ছাড়া বিদ্যুতসংযোগ দেয়া হবে না, এমনকী টাকা না দিলে ডিজাইনে তাদের বাড়ির পাশ দিয়েও বিদ্যুতের লাইন যাবে না বলে জানানো হলে সাধারণ মানুষ বিদ্যুতসংযোগের জন্য গরু-ছাগল, ধান-চাল বিক্রি করে এবং অনেকে জমি বন্ধক রেখে দালালদের দাবিকৃত টাকা প্রদান করেন। উপজেলার হরিশ্বর তালুক গ্রামে ৫৭৩টি পরিবারের মাঝে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পল্লীবিদ্যুত সমিতি। সরেজমিনে নতুন বিদ্যুতসংযোগ গ্রহণকারীরা জানান, উপজেলা হরিশ্বর তালুক গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুলের নেতৃত্বে লতিফ মোল্লা, আজগর মোল্লা ও সাত্তার মুন্সি নামের ৪ দালাল পল্লীবিদ্যুতের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছেন। টাকা দিতে দেরি হওয়ার কারণে হরিশ্বর তালুক (কদমতলা) গ্রামে বিদ্যুতসংযোগে বিলম্ব হয়েছে বলে জানান গ্রামের নুরজামাল, আবু তালেব, আনোয়ার, খলিলসহ অনেকে। একই গ্রামের সাহেব আলী, মতিয়ার রহমানসহ নতুন সংযোগী গ্রহণকারী অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, সংযোগের জন্য প্রত্যেকে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ওই দালাল চক্রকে দিতে হয়েছে। একই গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার মনি, রহিম, মমিন, নুর ইসলাম, খলিল পূর্ব পাড়ার মিজানুর, মজনু, সিরাজুল, জামাল, রহমান, নজরুলসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে দালাল চক্রের লিডার শহীদুলের নেতৃত্বে ওই চক্রটিকে বিদ্যুতসংযোগের জন্য ৪ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়ার অভিযোগ করেন। এ দিকে উপজেলার তালুক আষাঢ়ু (বেদারজাল) গ্রামের নুরু মিয়া অভিযোগ করেন, পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ প্রদানের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দালাল চক্রের যোগসাজশ রয়েছে। দালাল রাঙ্গা মিয়া অন্যদের মতো আমার কাছেও বিদ্যুতসংযোগের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিল কিন্তু আমি টাকা দিতে পারায় না আমার বাড়ির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন গেলেও আমাকে সংযোগ দেয়া হয়নি। একই অভিযোগ ওই গ্রামের সাহের আলী ও আখের আলীসহ অনেকের। অপরদিকে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ গ্রামের সাইফুল নামের এক দালালের নেতৃত্বে বিদ্যুতসংযোগ প্রদানের নামে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইভাবে উপজেলার চাকিরপশার, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ, উমর মজিদসহ প্রতি ইউনিয়নে দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদ্যুতসংযোগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে হরিশ্বর তালুক গ্রামের দালাল চক্রের হোতা শহীদুল জানান, আমি ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য। খুঁটি লাগানোর সময় বিভিন্ন সমস্যা হয়েছিল আমি সমাধান করেছি। খুঁটি বসানো কাজের শ্রমিকদের খরচা বাবদ স্থানীয় লোকজন কিছু টাকা উত্তোলন করেছে। তালুক আষাঢ়ু গ্রামের দালাল রাঙ্গা মিয়া সংযোগ প্রদানের নামে টাকা গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধান জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি হরিশ্বর তালুক গ্রামে খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুত অফিসের জিএম স্বদেশ কুমার ঘোষ জানান, দালালদের কাছে টাকা দেয়ার কোন যুক্তিকতা নেই। আমরা মাইকিং করেছি, প্রচার করেছি, রসিদ ছাড়া টাকা না দেয়ার জন্য। তবে আমাদের লোকজন যদি জড়িত থাকে আমাকে জানালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×