ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় জোড়া পুকুর ভরাট করে দখল

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ৬ মে ২০১৮

বগুড়ায় জোড়া পুকুর ভরাট করে দখল

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার শতবর্ষী দুই জলাধার। কেউ বলে জোড়াপুকুর। কারও মুখে যমজ পুকুর। মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। যমজের এক পুকুর দখল হয়েছে অনেক আগে। বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। যমজের আরেক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাকে করে বালি ও মাটি এনে ফেলা হচ্ছে পুকুরে। হত্যা করা হচ্ছে পুকুরকে। বগুড়ায় রেলের অনেক ভূমি দখলের মতো ঐতিহ্যের পুকুরও দখল করছে প্রভাবশালীরা। তারা এতটাই ক্ষমতাধর যে যমজ পুকুর অস্তিত্ব হারিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের সামনে। পরিবেশ আইনে জলাধার দখল বেআইনী। পরিবেশ অধিদফতরও এই বিষয়ে নীরব। রেল বিভাগ দখল ঠেকাতে যে উদ্যোগ নেয় তা লোক দেখানো। বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের সামনে হাঁটা পথের দূরত্বে এই জোড়া বা যমজ পুকুরের অবস্থান। নিকট অতীতে ছিল নিসর্গের মতো। বিকেলে পাড়ে বসে লোকজন প্রকৃতির মধ্যে কিছুক্ষণ সময় কাটাত। স্বচ্ছ জলাধারের এমন জোড়া পুকুর এ অঞ্চলে আর ছিল না। দখল হওয়ার পর তাও আর রইল না। রেল বিভাগের এক সূত্র জানায়, এই জোড়া পুকুরের অবস্থান নগরীর চক বৃন্দাবনপাড়া মৌজার ৪৪০ ও ৪৪৫ নম্বর দাগে। এই দুই দাগের ২ একর ২৫ শতাংশ আয়তনের জলাধারের মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে এই যমজ পুকুরের বড় অংশটি দখল হয়েছে। মার্কেট নির্মিত হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ ভরাট হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন-২০১০ এ বলা হয়েছে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণ ছাড়া জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। এই ধরনের ভরাট দ-নীয় অপরাধ। বগুড়ায় এই আইন অমান্য করে জোড়া পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। শ্রেণী পরিবর্তন করে নির্মিত হচ্ছে অবকাঠামো। এই জোড়া পুকুর দখল করার পেছনে বড় হাত রয়েছে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর কয়েক নেতার। যাদের পদবি আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। বছর চারেক আগে প্রথম দখল শুরু হয় যমজের একটি পুকুর। তখন প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর পুকুর ভরাট বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়নি। ২০১৪ সালের ২২ মার্চ রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগের তৎকালীন কানুনগো যমজ পুকুর দখলের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনা ওই পর্যন্তই থেমে যায়। এরপর পুকুর দখল ও ভরাট হয়ে মার্কেটের অবকাঠামো নির্মাণ হতে থাকে। একই সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে দোকানঘর পজিশন দেয়া হয়। দখলের এই সফলতার পর যমজ পুকুরের বাকিটিরও দখল শুরু হয় গেল মাসে (এপ্রিল)। মাটি এত দ্রুত ফেলে ভরাট হচ্ছে যে আর কয়েকদিন পর ওই স্থানে কোন পুকুর ছিল কি না তা বোঝাই যাবে না। প্রজন্মকে বলতে হবে ‘একদা সেখানে যমজ পুকুর ছিল’। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপির একজন নেতা, শহর আওয়ামী লীগের একজন নেতা (যিনি জেলা ট্রাক মালিক সমিতিরও নেতা), জেলা শ্রমিক লীগের এক নেতা, শহর যুবলীগের এক সাবেক নেতা যমজ পুকুর ও তার আশপাশের এলাকার রেল ভূমি দখল করে অবকাঠামো স্থাপনা গড়ে তুলছেন। যমজ পুকুরের একটিতে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। রেল বিভাগের এক সূত্র জানায় রেলের কোন পুকুর কাউকে লিজ দেয়া হয়নি। কেউ দখল করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ অধিদফতরের সূত্র জানান, কোন জলাধার কেউ দখলের পর ভরাট হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বাস্তবতা হলো : দখল হয়েই চলেছে। দখলদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
×