ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তেল কিনতে ঋণসীমা বাড়াতে চায় বিপিসি

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৬ মে ২০১৮

তেল কিনতে ঋণসীমা বাড়াতে চায় বিপিসি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তেল আমদানিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার সীমা বাড়াতে চাইছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে লাভজনক থাকলেও গত নবেম্বর থেকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বর্তমানে তারল্য সঙ্কটে রয়েছে সংস্থাটি। তারল্য সঙ্কটের কারণে বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি তেল কিনতে জেদ্দাভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ঋণ নেয়ার সীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই সীমা বাড়াতে আইটিএফসির কাছে চিঠি দেয়া হবে। বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান। বিপিসির পরিচালক (অর্থ) আলতাফ হোসাইন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘জ্বালানি তেল কিনতে আমরা মূলত আইটিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে থাকি। বর্তমানে আমরা এই সংস্থাটি থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কোটি ডলার ঋণ নিতে পারি, যা মাঝে ছিল ৪০ কোটি ডলার। এখন আমরা এই সীমা একশ’ কোটি ডলারে উত্তীর্ণ করতে আইটিএফসিকে চিঠি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, সংস্থাটি থেকে বিপিসি সর্বোচ্চ আড়াই কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত ঋণ নিয়েছে। এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা ঋণসীমা বাড়াচ্ছি। প্রয়োজন অনুযায়ী দুই পক্ষের সম্মতিতে এটি কমে-বাড়ে। এটা মূলত ছয় মাসের জন্য নেয়া হয়ে থাকে। জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত নবেম্বরের আগের তিন অর্থবছর বিপিসি ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি তেল আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করে লাভ করেছে। ওই সময় বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করেনি বিপিসি। বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চার হাজার ২০৮ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত হাজার ৭৫৩ কোটি এবং ২৬-১৭ অর্থবছরে চার হাজার ৫৫১ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের নবেম্বর থেকে বিপিসি ফের ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনতে শুরু করেছে। বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি প্রতিমাসে গড়ে ১৪ কোটি টাকা লোকসান গুনছে। বর্তমানে আমদানি করা প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ ৫২ টাকা, ডিজেল ৭০ টাকা ও কেরোসিন ৬৯ টাকা ৫০ পয়সা। আমদানি মূল্যের সঙ্গে বিপণন কোম্পানির সার্ভিস চার্জ, পরিবহন খরচ ও পরিবহনজনিত লোকসানের আর্থিক মূল্য যোগ করে খুচরা বাজারে বিক্রি করা হয়। এই হিসাবে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলে ৯ টাকা, ডিজেলে ৫ টাকা ও কেরোসিনে সাড়ে ৪ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বিপিসিকে। বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন লিটার প্রতি ৬৫ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৪২ টাকা লিটার হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেট্রোল ও অকটেনে চাহিদার পুরোটাই দেশেই উৎপাদন হয়। ওই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে আইটিএফসির ঋণ নেয়ার সীমা ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সংস্থাটি এই মুহূর্তে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু বিপিসি এখন ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেবে। পরে ঋণ গ্রহণের সীমা বাড়ানোর পর আবারও ঋণ নেয়া হবে। আর এই সীমা বাড়লে সুদের হারও বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে আইটিএফসির ঋণের বিপরীতে তিন দশমিক ৮ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হয়। প্লাটসের হিসাব অনুযায়ী, গেল সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল প্রতি ব্যারেল ৭২ মার্কিন ডলার। প্রতিদিনই এর দাম বাড়ছে। প্লাটসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার মতো দাম বাড়তে থাকলে আগের মতো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০০ মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
×